পৃথিবীর অন্যান্য বন্দরের বিপরীতে তুলনামূলক ভাড়া কম হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ খালি কনটেইনার রাখার ডিপোতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও ২১টি বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো বা আইসিডিতে বর্তমানে ৬৫ হাজারের বেশি খালি কনটেইনার পড়ে আছে। তবে পণ্য আমদানির চেয়ে রফতানি কমে যাওয়ায় খালি কনটেইনারের জট বাড়ছে বলে দাবি মেইন লাইন অপারেটরের।
চট্টগ্রামের ২১টি প্রাইভেট আইসিডিতে বর্তমানে পণ্য ভর্তি কনটেইনারের পরিবর্তে খালি কনটেইনারে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। জানুয়ারি মাসে ৫১ হাজার ৭৮১টির বিপরীতে ফেব্রুয়ারি মাসে খালি কনটেইনারের অবস্থান বেড়ে ৬০ হাজার ৮৫৪তে এসে দাঁড়িয়েছে। অফডকগুলোতে ২০ ফুট সাইজের একটি কনটেইনারের একদিন রাখার ভাড়া ১০০ এবং ৪০ ফুট সাইজের কনটেইনার রাখার ভাড়া ২০০ টাকা। অথচ পৃথিবীর উন্নত বন্দরগুলোতে এই হার কয়েকগুণ বেশি।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, রমজানে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ায়, পণ্য খালাসের পর কনটেইনারগুলো ডিপোতে যেয়ে জমা হচ্ছে। এতে বাড়ছে খালি কনটেইনারের সংখ্যা।
খালি কনটেইনারের স্তূপ জমায় অফডকের মতো একই পরিস্থিতি চট্টগ্রাম বন্দরের। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে আড়াই থেকে তিন হাজার খালি কনটেইনার থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৪ হাজার ৫৪০টি কনটেইনার। এর মধ্যে জেনারেল কার্গো বার্থে (জেসিবি) ১ হাজার ৮৭১টি এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালটিতে (এনসিটি) ২ হাজার ৬৬৯টি কনটেইনার রয়েছে।
তবে খালি কনটেইনার জট নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তা। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী এসব খালি কনটেইনার জাহাজযোগে পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বর্তমানে রফতানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। সে কারণেই পণ্য খালাসের পর খালি কনটেইনার জমছে। তবে খালি কনটেইনার চাহিদা অনুযায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে পাঠানো হয়।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কিংবা বেসরকারি অফডকগুলোকে খালি কনটেইনার রাখার ডিপো হিসেবে ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করছে মেইন লাইন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে রফতানির তুলনায় আমদানি কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় খালি কনটেইনারের এই জট সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি তাদের। অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট সাইজের জন্য ৬ এবং ৪০ ফুট সাইজের কনটেইনার ভাড়া ১২ মার্কিন ডলার রাখা হয়।
এমএসসি শিপিং লিমিটেডের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, বিশ্বের প্রতিটি আন্তর্জাতিক বন্দরেই খালি কনটেইনার রাখার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফি নেয়া হয় না। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের এ ধরনের সুবিধা নেই।
উল্লেখ্য, বছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করছে। এরমধ্যে আমদানি করা পণ্য নিয়ে যেসব কনটেইনার আসে সেগুলো আবার রফতানি পণ্য বোঝাই করে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালন করে মেইন লাইন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো।