News update
  • Indices, turnover decline in Dhaka, Chattogram stock markets     |     
  • Fire Kills 4 in Dhaka's Shahjadpur     |     
  • Ukrainians continue to flee frontline as war enters 4th year     |     
  • Vehicles torched as Worker’s death sparks protest in Gazipur     |     
  • SC upholds Khaleda’s acquittal in Zia Charitable Trust case     |     

শিল্পকলা থেকে পদত্যাগের কারণ জানালেন জামিল আহমেদ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক শিল্প-কারুশিল্প 2025-03-01, 2:25pm

erqweqwe-8ab304995bfbc86afebe7668267a49ea1740817527.jpg

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক অনুষ্ঠানে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত



বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। 

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার মিলনায়তন ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’–এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ভরা মজলিশে এ ঘোষণা দেন তিনি। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতার মধ্যেই তিনি পদত্যাগের কথা জানান। এ সময় মঞ্চে তিনি শিল্পকলা একাডেমির সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন। পরে তিনি পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করে সংবাদ মাধ্যমে লিখিত বক্তব্যে দেন।

লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ফোকাল পারসন হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শিল্পকলার মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন নাট্যনির্দেশক ও গবেষক সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি ১৯৭৮ সালে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে গ্র্যাজুয়েশন; ১৯৮৯ সালে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারইক থেকে নাট্যকলা বিষয়ে এমএ এবং ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেন।

জামিল আহমেদ বলেন, আমলাতন্ত্রের পেছনে ১০ বার ফোন করে টাকা আদায় করা আমার ব্যক্তিগত কাজে নয়, শিল্পকলা একাডেমির জন্য, সেই কাজটা যদি না করতে দেয়, পদে পদে বাধা দেয়, তাহলে এখানে থেকে লাভ নাই।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়া খান ও মা সানজিদা খান উপস্থিত ছিলেন। আনাসকে স্মরণ করে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আনাসের মতো দেড় হাজারের অধিক শহীদের রক্তের জন্য আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম। এ দায়িত্ববোধের জন্য আমি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। ব্যক্তিগত জীবন ছিল না। শতভাগ সময় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জন্য কাজ করেছি। আমি কোনো জায়গায় কোনো রকম অর্থনৈতিক অনিয়ম বা অনৈতিক কাজ করতে দিতে চাইনি।’

লিখিত বক্তব্যে শিল্পকলা একাডেমিতে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে জামিল আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৎকালীন সংস্কৃতি উপদেষ্টার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে আমি বলেছিলাম, শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে এবং আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন–সংবলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সকল প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন। তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সম্মত হই। কিন্তু উপদেষ্টা পরিবর্তনের পর থেকে আমার সকল বিধিসম্মত কাজে নীতিবহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একাডেমির সকল কর্মকাণ্ডকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।

উদহারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‌বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্ত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। অথচ একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করার বিধান রয়েছে।

জামিল আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা বুঝুক, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিল্পীদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তাদের ব্যাপক কর্মকাণ্ডের জন্য বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে প্রচুর নাট্যচর্চা হচ্ছে, সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ আসলেই সৃষ্টি হয়েছে। আমি এখন সঠিক সময় বলে মনে করি, আর বোধ হয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে।

কাজ করতে গিয়ে বাধা পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। তিনি বলেন, আমাকে আদিবাসী কথাটা বলতে বাধা দিয়েছিল, আমরা আদিবাসী কথাটা বলতে পারব না। আমি আজকে বলছি, আদিবাসীদের দাবি পূর্ণ হোক। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হোক। তাদের অধিকার অর্জিত হোক। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কায়েম হোক। আনাসের মতো শহীদের রক্ত যেন সার্থক হয়।

শিল্পকলার সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকের সামনে বলেন, ‘শিল্পকলার সচিব হিসেবে এটি (পদত্যাগপত্র) শুধু হাতে নিয়েছি। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি।’

পরে মিলনায়তনে উপস্থিত নাট্যশিল্পীরা সৈয়দ জামিল আহমেদকে অনুরোধ করেন তিনি যেন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। পরে কয়েকটি শর্ত দেন তিনি। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্পকলা একাডেমির ওপর মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ না করা, ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া, আদিবাসী বলার অধিকার দেওয়া। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফাসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে শনিবার (১ মার্চ) সকালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেওয়া হয়, তবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আরটিভি