খুলনায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যেখানে সমাজ এখনও এইচআইভি নিয়ে সংকোচে ভুগছে, সেখানে বাস্তবতা বলছে, এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে নীরবে, নিঃশব্দে। শুধুমাত্র গত সাত কর্মদিবসেই নতুন করে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১১ জনের দেহে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ মাসে বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে মোট ৩১ জন রোগীর শরীরে এইডসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।
এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিবেশ ওঝা জানান, প্রতিদিন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী আসছেন পরীক্ষার জন্য। গেল চার বছরে এ হাসপাতালে প্রায় চার হাজার নারী ও পুরুষের রক্ত পরীক্ষা করে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ২৪৯ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের।
তিনি আরও বলেন, ‘আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। যাদের বেশিভাগ সমকামী ও যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপস ও সোশ্যাল গ্রুপের মাধ্যমে তরুণরা এসব চক্রে জড়িত হচ্ছে। আর এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি খুলনা জেলায়। বর্তমানে আমাদের সেন্টারে বিভাগের প্রায় ৪৮০ জন রোগী নিয়মিত ওষুধ ও চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে মানসিক চাপ, সামাজিক অবহেলা এবং তথ্যের অভাব তাদের চিকিৎসার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘মাসে প্রায় ৩শ’ থেকে ৫শ’ রোগী ভাইরাল লোড পরীক্ষা করা হয় এখানে। দিনদিন এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। খুলনা বিভাগ ভারতের পাশের শহর হওয়ার কারণে এইডস আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। এইচআইভি পজিটিভ রোগী শুধুমাত্র একটি রোগই বহন করে না। বরং আরও বিভিন্ন রোগ তার শরীরে বাসা বাধে। এছাড়া সাধারণ ল্যাবে অনেক সময় অন্যান্য পরীক্ষা করতে গেলে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই এইডস রোগীদের জন্য আলাদা একটি ল্যাব ও ওয়ার্ড থাকলে ভালো হয়।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সচেতনতার অভাব, সামাজিক ভীতি এবং নিয়মিত পরীক্ষা না করানোর প্রবণতা এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। খুমেক হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের ফোকাল পারসন ডা. মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘এইচআইভি নিয়ে এখনও সমাজে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সময় মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ না করলে সংক্রমণ নীরবে ছড়িয়ে পড়বে। অনেক সময় সামাজিক ও পারিবারিক লজ্জা এবং ভয়ের কারণে রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসা করান না। আবার তাদের খুঁজে পাওয়াও যায় না। ফলে এ সংক্রমণ আরও বেশি ছড়িয়ের পড়ার শঙ্কা থাকে।’
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মোছা. মাহফুজা খাতুন বলেন, ‘এইডস আক্রান্তদের নিয়ে সমাজে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে, যা তাদের মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দরকার ব্যাপক সচেতনতা এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। এছাড়া কী কী কারণে এই রোগে আক্রান্ত হয় সেটি সম্পর্কেও সব শ্রেণিপেশার মানুষকে অবগত ও সচেতন করতে হবে। এইডস এখন আর মরণঘাতী ব্যাধি নয়, নিয়মিত চিকিৎসায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা সম্ভব। সময় মতো পরীক্ষা, চিকিৎসা গ্রহণ এবং সচেতন আচরণই এই সংক্রমণ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।’ সময় সংবাদ