
বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারপোর্ট নিরাপত্তা কোম্পানি, পাইলট, কেবিন ও গ্রাউন্ড ক্রুরা একসঙ্গে কাজ করে যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করে। তাদের দেওয়া নিয়মগুলোকে অনেক সময় যাত্রীরা ঝামেলা মনে করলেও, এসব নিয়মের মূল উদ্দেশ্য হলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও আলোচিত নিয়মগুলোর একটি হলো ফ্লাইটে থাকা অবস্থায় ফোনের এরোপ্লেন মোড চালু রাখা।
ফোনের সিগনাল প্লেনের যন্ত্রপাতির সঙ্গে হস্তক্ষেপ করতে পারে এমন ধারণা থেকে দশকের পর দশক ধরে এই সতর্কতা দেওয়া হচ্ছে। যদিও বাস্তবে একটি ফোনের প্রভাব অত্যন্ত সামান্য, তবুও পুরনো প্লেনে এই নিয়ম মানার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
প্রযুক্তি সাইট স্ল্যাশগিয়ার জানিয়েছে, একটি প্লেনে অসংখ্য সেন্সর ও জটিল সিস্টেম থাকে এবং পাইলটদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন যে কোনো বিষয়ই ঝুঁকিপূর্ণ।
মিনেসোটা পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট র্যান্ডল কোরফম্যান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিবিএস নিউজকে বলেন, এয়ারপ্লেন মোড অন না করলে ফোন থেকে সমস্যা হওয়ার সামান্যই আশঙ্কা থাকে, বিশেষ করে যদি ফোন ককপিটের কাছে থাকে। এতে পাইলট ও ক্রুর হেডসেটে হালকা বাজিং শব্দ শোনা যেতে পারে। এই শব্দ সামান্য মনে হলেও ব্যস্ত ককপিটে এটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, কারণ পাইলটরা হেডসেটের ওপর নির্ভর করে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা শোনেন। কোনো সতর্কতা বা নির্দেশ ভুল শোনা মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
এই বাজিং শব্দের পেছনে ফোন যে রেডিও সিগনাল পাঠায়, সেটিই মূল উদ্বেগের বিষয়।
ইউনিভার্সিটি অফ নেভাডার অধ্যাপক ড্যান বাব বলেন, ফোনের হস্তক্ষেপের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকা যন্ত্র হলো রেডিও অল্টিমিটার। এটি ভূমিতে রেডিও সিগনাল পাঠিয়ে ফিরে আসার সময় পরিমাপ করে প্লেনের সঠিক উচ্চতা জানায়। প্লেন যত নিচে নামে, এই যন্ত্রটির গুরুত্ব তত বাড়ে। ল্যান্ডিং হলো ফ্লাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
আর ঠিক তখনই ফোনগুলো সেল টাওয়ারের কাছে আসে, যার ফলে সিগনাল অ্যাক্টিভিটি বেড়ে যায়। এতে পাইলটদের হেডসেটে বাজিং বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি অনেক যাত্রীর ফোন একসঙ্গে সক্রিয় থাকে।
তবে, ২০২৩ সালে ইউরোপিয়ান কমিশন ইউরোপে ইন ফ্লাইট ৫জি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। যুক্তরাজ্যের ফ্লাইট সেইফটি কমিটির ডাই হুইটিংহ্যাম বিবিসিকে বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে ৫জি ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে চলে এবং এর পাওয়ারও কম, তাই ঝুঁকি নেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম হলেও, নিরাপত্তার স্বার্থে এয়ারপ্লেন মোড চালু রাখার নিয়মটি এখনো বহাল রাখা হয়েছে।