প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার ত্রিশ ঘণ্টার যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন, তা লঙ্ঘনের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে ইউক্রেন ও রাশিয়া। ওই যুদ্ধবিরতি মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রোববার দিনের শুরু থেকেই রাশিয়ান বাহিনী অন্তত তিন হাজার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করেছে এবং কিয়েভের বিরুদ্ধে শত শত ড্রোন হামলা ও গোলা ছোঁড়ার অভিযোগ করেছে।
বিবিসি যুদ্ধরত উভয় পক্ষের এসব দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেনি।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে চলতি সপ্তাহেই রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে।
তবে এর বিস্তারিত কোন তথ্য তিনি দেননি।
রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণ সামরিক আগ্রাসন শুরু করেছিলো। দেশটির অন্তত কুড়ি শতাংশ ভূমি এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রাইমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলও রয়েছে।
ধারণা করা হয়, ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লাখ লাখ মানুষ যাদের একটি বড় অংশই সৈন্য, হয় মারা মারা গেছে বা আহত হয়েছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের একটি পূর্ণাঙ্গ ও নি:শর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে মস্কো বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে।
শনিবার পুতিন মস্কো সময় ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। কিয়েভও এটি মেনে চলার কথা বলেছিলো।
"এ সময়ের জন্য আমি সব সামরিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছি," পুতিন তার ঘোষণায় বলেছিলেন।
"আমরা মনে করি ইউক্রেনও আমাদের পদক্ষেপ অনুসরণ করবে। একই সময়ে আমাদের সৈন্যরা অবশ্যই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও উস্কানি প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকবে"।
তবে জেলেনস্কি রবিবার রাতে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া ১৮৮২ বার গোলাবর্ষণ করেছে এবং ৮১২টি ঘটনায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, দখল করা পোকরোভস্ক শহরের কাছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বেশি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শহরটি দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি হাব যেখান থেকে রসদ সরবরাহ করা হয়।
"ইউক্রেনের পদক্ষেপ ছিলো এমন যে আমরা নীরবতার জবাব নীরবতা দিয়ে দিয়েছি। আমাদের হামলা ছিলো রাশিয়ার হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য," জেলেনস্কি বলেছেন।
এর আগে তিনি সেদিন কোনো রেড অ্যালার্ট না থাকার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি একই সাথে পুতিনের ঘোষণাকে একটি 'পিআর' চর্চা এবং অর্থহীন বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন "এই ইস্টারে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, যুদ্ধের একমাত্র উৎস ও কারণ হলো রাশিয়া"।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের সৈন্যরা যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে মেনে চলেছে।
যদিও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হিমারাস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, সময় বাড়ানোর কোন নির্দেশ পুতিন দেননি।
এর আগে রাশিয়া ইউক্রেন আলোচনার মধ্যস্থতা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরে দাঁড়ানোর কথা বলার পর এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন।
রোববার ওয়াশিংটন আবারো একটি সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির কথা বলেছে।
তবে ইস্টারের প্রার্থনায় কিয়েভে ও রাশিয়ার দখলীকৃত দোনেৎস্ক-এ যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে পুতিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
"আমি মনে করি না তার (পুতিন) মধ্যে মানবতা বলতে কিছু আছে," রয়টার্সকে বলেছেন ওলেনা পপরিচ নামের একজন আইনজীবী।
অন্যদিকে, জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতিতে কতটা অনড় থাকবেন, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন দোনেৎস্কের অধিবাসী ওই আইনজীবী।
"আমি তার প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। সেখানে যুদ্ধবিরতি কিছু ছিলো না। শুধুমাত্র ধোঁয়াশাপূর্ণ বিবৃতি। কোন আত্মবিশ্বাস ছিলো না যে আমরা গোলাবর্ষণ করবো না," বলছিলেন তিনি।
রোববার ব্রিটিশ সরকার পুতিনের যুদ্ধবিরতিকে 'এক দিনের নাটক' হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, এ সময়েও সেখানে নিরীহ মানুষের আহত, নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পুতিন সত্যিকারভাবেই শান্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, এমন কোন প্রমাণ তারা পাননি।
যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি রাশিয়ার সাথে আলোচনা করছে। কিন্তু তাতে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি আসেনি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এটি হলে কয়েক দিনের মধ্যেই হতে হবে।