দেশের বিশেষায়িত হৃদ্রোগ হাসপাতালগুলোতে ক্যাথল্যাব সংকট এখন প্রকট। তাই, এনজিওগ্রাম কিংবা হার্টে রিং স্থাপনের মতো সেবার জন্যও রোগীদের করতে হচ্ছে দীর্ঘ অপেক্ষা। এদিকে, চলতি মাসে করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিংয়ের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও তা মানতে নারাজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ৭টি ক্যাথল্যাবের মধ্যে ৪টিই অচল। মাত্র ৩টি নিয়ে এনজিওগ্রাম, স্টেন্টিংসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেয়াই চ্যালেঞ্জের। ক্যাথল্যাব সেবার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে কখনো ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত।
বহির্বিভাগে বেশিরভাগ রোগীই হাসপাতালের বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনছেন। এমনকি ভর্তি রোগীদেরও বাইরে থেকে করাতে হচ্ছে এনজিওগ্রাম, যেখানে খরচ সরকারি হাসপাতালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
এ সংকটের কারণে অনেক সময় একটি এনজিওপ্লাস্টি চলমান অবস্থায় সাময়িক বন্ধ রেখে সেবা দিতে হচ্ছে অন্য রোগীকে, যা রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ইউনিভার্সাল কার্ডিয়াক হাসপাতালের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন,
একজনের চিকিৎসা দেয়ার সময় তাকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে চিকিৎসা দিতে হয়। এতে তার ক্ষতি হতে পারে। বাইপাস সার্জারি প্রয়োজন হলে করতে হবে। সেটা ৩০ বছর বয়সেও বাইপাস সার্জারি করি।
চলতি মাসেই হৃদ্রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ৩ কোম্পানির তৈরি ১০ ধরনের করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিংয়ের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আর সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্টেন্টের দাম কমছে ৩ হাজার থেকে ৮৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু দাম কমলেও রোগীরা এর সুবিধা কতটা পাবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
ডাক্তার-হাসপাতাল কমিশন সিন্ডিকেট নিয়ে যেমন অভিযোগ রয়েছে, তেমনি আবার স্টেন্ট সরবরাহকারীরা ডাক্তার ও হাসপাতালকে কমিশন দিয়ে বাধ্য করে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড ব্যবহারেও।
স্টেন্টের দাম নির্ধারণে অসমতা ও মানের অভিযোগের বিষয়ে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় মান যাচাই করে আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে রিং কোম্পানিগুলো মানতে নারাজ সরকারের বেঁধে দেয়া নতুন দাম। রিং কোম্পানির এক প্রতিনিধি সময় সংবাদকে বলেন, ‘ওরা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে যে এই রেট করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে মিটিং চলছে।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে, এই খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত বছর থেকে দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। স্টেন্টের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে আমদানিকারকদের কাছেও।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘নির্ধারিত মূল্যের বেশি কেউ নিতে পারবে না। নির্দিষ্ট তারিখের পর মূল্য বেশি নেয়ার প্রমাণ পেলে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়বো।’
অক্টোবরে নতুন দাম কার্যকরের পর সঠিক তদারকির প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সময়