ক্যানসার মারণ রোগ। গবেষণা চলছে এই রোগের ওষুধের। ক্যানসার থেকে বাঁচার উপায় নেই বললেই চলে। কারণ চিকিৎসা নেয়ার পর অনেক মানুষ মারা যান। কিন্তু এমন কিছু কী নেই, যাতে এই রোগটি আমরা ঠেকাতে পারি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন আনলেই ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, আটটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাসেই ক্যানসারের পাশাপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব। এ অভ্যাসগুলো একেবারেই জটিল নয়। তাই সহজ বিষয়গুলো মেনে স্বাস্থ্যের নিয়ন্ত্রণ নিন। এবং আপনার পরিবারকেও একই কাজ করতে উৎসাহিত করুন।
১. ওজন নিয়ন্ত্রণ: আপনার ওজন যদি বেশি হয়, প্রাথমিকভাবে আর ওজন না বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিন। এটি আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, মেদস্থূলতা প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীকালে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু নিয়ম মেন চলুন। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং চলাচলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করুন। এছাড়া ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ খাবার খান। ছোট অংশগুলো নির্বাচন করুন এবং ধীরে ধীরে খান। টেলিভিশন দেখা এবং কম্পিউটার ব্যবহারের সময় সীমিত করুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম খুবই উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। যদিও সময় বের করা কঠিন হতে পারে, তবুও প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য নিজের প্রয়োজন মতো কিছু ব্যায়াম নির্বাচন করুন। প্রতিদিন একই সময় রেখে ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। দুপুরের খাবারের সময় জিমে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং রাতের খাবারের পর নিয়মিত হাঁটুন।
৩. ধূমপান আর নয়: ধূমপান শুধু যে ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম কারণ তা নয়, এটি খাদ্যনালী স্বরযন্ত্র মুখ-গহ্বর গলা কিডনি মূত্রথলি অগ্ন্যাশয় পাকস্থলী এমনকি জরায়ুমুখের ক্যানসার-ঝুঁকিও বাড়ায়। ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহে যত ধরনের ক্যানসার হতে পারে তার ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রেই ধূমপান ও তামাকের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে। তাই আর দেরি নয়, ক্যানসার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হিসেবে আজই ধূমপান ছাড়ুন। সাহায্যের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে কথা বলুন। আপনার শিশুর সঙ্গে ধূমপান এবং তামাক চিবানোর বিপদ সম্পর্কে কথা বলুন।
৪. স্বাস্থ্যকর ডায়েট: স্বাস্থ্যকর খাবারের মূল বিষয়গুলো বেশ সহজবোধ্য। প্রতিবেলার খাবার তালিকায় ফল এবং শাকসবজি রাখুন। ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খান। লাল মাংস খাবেন খুবই কম। খারাপ চর্বি কমানো এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। জলপাই বা ক্যানোলা তেল দিয়ে তৈরি খাবারগুলো বেছে নিন, যা স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত। ফাস্ট ফুড এবং দোকানে কেনা স্ন্যাকস (কুকিজের মতো), যা খারাপ চর্বিযুক্ত, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
৫. সূর্য থেকে নিজেকে রক্ষা করুন: উষ্ণ সূর্যের আলো খুবই দরকার। তবে এটির অত্যধিক তাপ ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।। ত্বকের ক্ষতি শৈশব থেকেই শুরু হয়। তাই শিশুদের রক্ষা করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকুন। কারণ এই সময়টাতে রোদের তাপ অনেক ক্ষতিকর। ওই সময়টাতে বের হতে হলে টুপি, লম্বা হাতা শার্ট এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৬. স্ক্রিনিং টেস্ট: বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্ক্রিনিং পরীক্ষা রয়েছে, যা ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। এর মধ্যে কিছু পরীক্ষা ক্যানসারকে প্রথম দিকে খুঁজে পায়, যখন সেগুলো সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা করা যায়, অন্যরা আসলে ক্যানসারকে প্রথম স্থানে বিকাশ হতে সাহায্য করতে পারে। শুধু কলোরেক্টাল ক্যানসারের জন্য, নিয়মিত স্ক্রিনিং প্রতি বছর ৩০ হাজারেরও বেশি জীবন বাঁচাতে পারে। এজন্য কোলন এবং রেকটাল ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, সার্ভিকাল ক্যানসার এবং ফুসফুসের ক্যানসার নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।