
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান চরিত্র ছিলেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালে যখন হত্যা করা হয়, তখন খালেদা জিয়ার বয়স ছিল ৩৬। তখন তিনি একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমানকে নিয়েই ছিল তার সংসার।
তার পুরো নাম ছিল খালেদা খানম। আর পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে তার ডাক নাম ছিল পুতুল।
জিয়াউর রহমান ১৯৬০ সালে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন, তখন তাদের বিয়ে হয়। তিনি বিয়ের পরই তার স্বামীর নামের সাথে মিলিয়ে খালেদা জিয়া নাম নিয়েছিলেন বলে তার বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন। তবে রাজনীতিতে নামার পরই তিনি পরিচিত হন খালেদা জিয়া নামে।
তার বড় বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, সে সময় খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে কোন চিন্তাই ছিল না। এর আগে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও খালেদা জিয়া কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হননি।
এর আগে, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন খালেদা জিয়া, কারাভোগ করেছেন। চিকিৎসার সুযোগও দেওয়া হয়নি। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেগম জিয়া। এরপর করোনার কারণে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিলেও গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় বন্দি রাখা হয়।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে চিকিৎসা না পাওয়ায় ধীরে ধীরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় খালেদা জিয়ার।
এরমধ্যে ২০২৪ সালের জুলাইতে কোটা সংস্কার আন্দোলন দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন, যা শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে গড়ায়। টানা ৩৫ দিনের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে পর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। তার স্বাস্থ্যের অনেকটা উন্নতি হয়েছিল। তবে নানা রোগে জটিলতা ও শরীর–মনে ধকল সহ্য করে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। বয়সও ছিল প্রতিকূল। প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তেন। হাসপাতালে ভর্তি করানো হতো।
সবশেষে গত ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এক মাসের কিছু বেশি সময় তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।