যানজটের শহর ঢাকা আজ ঈদের দিন ধরা দিয়েছে এক অচেনারূপে। চারদিকে নেই কোনো যানজট, যানবাহনের সারি নেই। কোনো সিগন্যালে কাউকে দাঁড়াতে হচ্ছে না। এ যেন এক অন্য ঢাকা। মাঝে মাঝে দু-একটি বাসের দেখা মিলছে। যাত্রীও তেমন নেই। তবে বাসের তুলনায় সিএনজি ও রিকশার সংখ্যা বেশি।
আজ শনিবার (৭ জুন) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছে লাখো মানুষ। এতে ঢাকা প্রায় ফাঁকা। ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলি কোথাও যানজট নেই। মানুষ চলাচল করছে স্বাচ্ছন্দ্যে। কোনো ভোগান্তি নেই। যাত্রীর চেয়ে যানবাহন বেশি হওয়ায় ভাড়াও বেশি চাচ্ছেন না চালকেরা। সব মিলিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ হয়ে ঢাকা মেডিকেল গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রোগীর সংখ্যা অনেক। যারা নিয়মিত গরু-ছাগল জবাই করে না, তারাই আহত হয়েছেন বেশি। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন। কারওয়ান বাজার ও শাহবাগে কোনো যানজট ছিল না। ঢাকা মেডিকেল থেকে প্রেসক্লাব হয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বর ঘুরে আরামবাগ পর্যন্ত ঘুরেও কোনো যানজট দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, আরামবাগ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আলিমুল ইসলাম বসে আছেন ফাঁড়ির মধ্যে। ফাঁড়ির ভেতরেই সেমাই রান্না করে তারা খেয়েছেন। দুপুরের খাবার হিসেবে গরুর মাংস রান্না করছিলেন। সময় তখন দুপুর ১২টা। সে সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। ফাঁড়ির ভেতরে বসে আলিমুল বলছিলেন, ‘রাস্তা একেবাই ফাঁকা। বসে আছি চুপচাপ। এ ফাঁড়ির আওতায় আমরা যারা দায়িত্ব পালন করছি, তারা এখানেই খাব বলে রান্না চলছে ভেতরে।’
আরামবাগ থেকে রওনা দিয়ে পুরাতন পল্টন হয়ে কাকারাইলের মধ্যে দিয়ে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত গিয়েও কোথাও যানজট দেখা যায়নি। এমনকি সড়কে বেশি মানুষও দেখা যায়নি। সেখান থেকে ফার্মগেট হয়ে বিজয় স্মরণী পর্যন্তও সড়ক ছিল একেবারেই ফাঁকা।
বিজয় স্মরণীর মোড়ে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ কনস্টেবল নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, আজ সকাল থেকেই সড়কে লোকজন যেমন কম, যানবাহনও কম। সব মিলিয়ে ফাঁকা ঢাকা দেখলাম আজ। কেবল দাঁড়িয়ে আছি। কোনো কোলাহল নেই। শব্দ নেই তেমন। ভালোই লাগছে।
কারওয়ান বাজার বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে এক সিএনজিচালক বলছিলেন, ‘আজ একেবারেই লোকজন কম। দুপুর পর্যন্ত তাই দেখলাম। সন্ধ্যা দিক থেকে হয়তো কিছু লোকজন বের হবে। তখন ভাড়াও মারতে পারব। সকাল থেকে বেশি আয় করতে পারিনি। সিএনজি আর রিকশা আছে যা, সে অনুযায়ী যাত্রী কম।’
অন্যান্য দিন মূল সড়কের বাইরের অলিগলির ভেতরেও থাকে যানজট। কিন্তু আজ সেই চিরচেনা দৃশ্য নেই। অলিগলির মধ্যেও তেমন মানুষজন দেখা যায়নি। রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা মাপরুফ হোসেন বলেন, একটু আগে উত্তরা থেকে এলাম। কোনো যানজট নেই। ভেতরের রাস্তাও যানজট নেই। একেবারেই ফাঁকা। স্বস্তি লাগছে। অনেকদিন পর এতো ফাঁকা শহর দেখলাম। রোজার ঈদেও এর থেকে বেশি মানুষ দেখেছি। এবার একেবারে ফাঁকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আগারগাঁও, মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট এলাকায়ও একই ধরনের দৃশ্য। শহরের চারিদিক আজ ফাঁকা।