মিয়ানমারে শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরের দিকে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিডো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে।
এদিকে এ ভূমিকম্পে ব্যাংককে সরকারি অফিসের নির্মাণাধীন একটি ৩০তলা বিশিষ্ট আকাশচুম্বী ভবনধসে পড়ে। এতে ৪৩ জন শ্রমিক আটকা পড়েছেন বলে পুলিশ ও চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর থাই কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা জারি করেছে। প্রধানমন্ত্রী পাতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নেপিডো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের আঘাতে সেখানে বিভিন্ন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক ভবনের ছাদ থেকে আস্তরণ খসে পড়েছে। ভূমিকম্প এতই শক্তিশালী ছিল যে শত শত মাইল দূরে চীন ও থাইল্যান্ড থেকেই কম্পন অনুভূত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিভিন্ন ভবন থেকে লোকজন বের হয়ে এসে রাস্তায় জড়ো হচ্ছে। একটি ভবনের ছাদের সুইমিং পুল থেকে পানি বাইরে নিচের দিকে ছিটকে পড়তে দেখা গেছে।
ব্যাংকক থেকে বিবিসির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কারণে ভবনগুলো দুলতে শুরু করে। কয়েকটি ভবনের জানালাও ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
থাইল্যান্ডের তুলনায় মিয়ানমারে ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে দেশটিতে সাত মাত্রার ছয়টি ভূমিকম্প আঘাত হানে যার সবগুলোই ছিল সাগাইং ফল্টের কাছে। ভূপৃষ্ঠের নিচের ওই ফাটল দেশটির মাঝ বরাবর চলে গেছে। থাইল্যান্ড মূলত ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল নয়। কিন্তু সেখানে অনুভূত হওয়া প্রায় সব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হয় প্রতিবেশী মিয়ানমার।
ব্যাংককের ভবনগুলোর শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন নয়, এ কারণে সেখানে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে।
ব্যাংককে বসবাসকারী বিবিসির সাংবাদিক বুই থু বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ ডে প্রোগ্রামকে বলেছেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাড়িতে রান্না করছিলেন। তিনি বলেন, আমি খুব বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম, খুব আতঙ্কিত ছিলাম। আমি জানতাম না এটা কী ছিল। আমার মনে হয় গত এক দশকে ব্যাংককে এই রকম শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়নি। আমার অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালে কিছু ফাটল দেখতে পাচ্ছি। সুইমিং পুল থেকে পানি ছলকে পড়ছিল এবং মানুষজন শুধু চিৎকার করছে।
আফটারশকের পরে তিনি অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে দৌড়ে রাস্তায় বের হয়ে আসেন। তিনি আরও বলেন, আমরা মাথা ঘুরিয়ে শুধু বোঝার চেষ্টা করছিলাম চারপাশে কী ঘটছে। ব্যাংককের বিল্ডিংগুলো ভূমিকম্প সহনশীল করে তৈনি করা হয়নি। আমি মনে করি সে কারণেই বড় ক্ষতি হতে চলেছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছের শহর মান্দালাইয়ের বিমানবন্দরে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কম্পনে আতঙ্কিত লোকজন মাটিতে শুয়ে পড়ছে। এ সময় অনেককে দৌড়াতে বারণ করার কথা চিৎকার করে বলতে শোনা যাচ্ছিলো।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভূমিকম্পে ভবন ধসে ৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ জানায়, ৩০ তলা যে ভবনটি ধসে পড়েছে সেটি নির্মাণাধীন অবস্থায় ছিল। সেখানে ৪৩ জন নির্মাণ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। ব্যাংককের চতুচাক পার্কের কাছে ভবনটির ভেতরে ৫০ জন লোক ছিল।
থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ইমার্জেন্সি মেডিসিন এক ফেসবুক পোস্টে বলেছে, সাত জন মানুষ রক্ষা পেলেও বাকি ৪৩ জন আটকা পড়েছে।
পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি-ও ৪৩ জন নিখোঁজের খবর জানিয়েছে।
ব্যাং সু জেলার ডেপুটি পুলিশ প্রধান ওরাপাত সুকথাই বলেন, যখন আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পৌঁছালাম, আমি শুনতে পেলাম লোকজন সাহায্যের জন্য ডাকছে। ‘আমাকে সাহায্য কর’ বলে চিৎকার করছে।ভবনটি সরকারি অফিস হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছিলো।আরটিভি