প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জুয়ার সঙ্গে জড়িত প্রায় ১ হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রোববার (২৫ মে) জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
পোস্টে তিনি বলেন, সাইবার স্পেসে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ। সরকার সাইবার স্পেসে জনস্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ২০ ধারা অনুসারে জুয়া খেলা এবং জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে। এই আইন অনুসারে সাইবার স্পেসে জুয়া খেলার জন্য কোন পোর্টাল/অ্যাপস/ডিভাইস তৈরি/পরিচালনা করা, জুয়া খেলা, খেলায় সহায়তা বা উৎসাহ প্রদান বা উৎসাহ প্রদানের জন্য বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রচার বা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে জড়িত থাকাকে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
২১ এবং ২২ ধারা অনুযায়ী জুয়া খেলার জন্য কোন ফাইনানশিয়াল ট্রানজেকশন, জুয়া খেলা বিষয়ে কোন প্রতারণা বা জালিয়াতি করাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জুয়া খেলা নিয়ে উৎসাহ প্রদান বা বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার কারণে বাংলাদেশের কোন নাগরিকের জুয়া খেলা নিয়ে কোন বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো নাগরিক বা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব যদি মনে করেন তার অনুমতি ব্যতিরেকে জুয়া খেলার ওয়েবসাইট/পোর্টালে তার ছবি/ভিডিও ব্যবহৃত হচ্ছে তাকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এই আইন প্রণয়নের আগে যারা জুয়া খেলার সঙ্গে বা জুয়া খেলার বিজ্ঞাপনের সঙ্গে স্বেচ্ছায় জড়িত ছিলেন তাদেরকে অবিলম্বে এই কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। যারা আগে জুয়ার কারণে প্রতারণার শিকার এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার দেশের জনগণকে সাইবার স্পেসে জুয়া খেলা এবং জুয়া খেলা সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার এবং এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি/কোম্পানির ব্যাপারে তথ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জানানোর জন্য অনুরোধ করছে বলেও জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, জুয়া একটি সামাজিক ব্যাধি এবং সাইবার স্পেসে জুয়া খেলার কারণে দেশে অসংখ্য ব্যক্তি সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাই দেশের জনগণের কাছে সরকার সাইবার স্পেসে জুয়া খেলা বন্ধ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সাহায্য প্রার্থনা করছে।
সরকার এরই মধ্যে ১ হাজার ১০০ এর বেশি এজেন্ট শনাক্ত করেছেন এবং এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে যে সকল মোবাইল ফাইন্যান্সিং এজেন্ট, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। এই আইন অনুসারে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই বিষয়ে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং সাইবারস্পেসে জুয়া খেলা, ফাইনানশিয়াল স্কাম, জুয়ার লেনদেনের (ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ) সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত সকল অপারেটর, সফটওয়্যার ও টুলিং সাপোর্ট প্রোভাইডার কোম্পানি, মোবাইল ফাইনানশিয়াল সিস্টেম/এমএফএস এজেন্ট, ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি অনলাইন জুয়ায় জড়িত বিভিন্ন পেশাজীবী, সম্মানিত ব্যক্তি, সেলিব্রিটি, বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানি, মিডিয়া বায়ার, প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপন দাতা এবং বিজ্ঞাপন গ্রহীতা সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ পরিস্থিতিতে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত মোবাইল ব্যাংকিং, রেগুলার ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেকোনো এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর কিংবা কোন ক্রিপ্টো ব্রোকার কিংবা হুন্ডির অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে যে কোনো তথ্য সরাসরি notify@ncsa.gov.bd ঠিকানায় জানানোর অনুরোধও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী। সময়।