বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিস সামিনা নাজ দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নিয়ে দূতাবাস প্রাঙ্গনে জাতীয় সংগীত সহকারে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অর্ধনমিত করেন।
বেলা ১১টায় দূতাবাসের সম্মেলন কক্ষে দিবসটির মূল কার্যক্রম শুরু হয়। শিশির কুমার সরকার এর সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন থেকে তিলওয়াত এবং ভাষা শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন মো. ইসমাইল হোসেন।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বানী পাঠ করে শোনানো যথাক্রমে দুতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. ইসমাইল হোসেন ও দূতালয় প্রধান শিশির কুমার সরকার।
মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা থেকে প্রেরিত ‘জুলাই অনির্বাণ’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত করার পর দিবসটিতে আয়োজিত বিশেষ আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত মিস সামিনা নাজ সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী রফিক, সালাম, জব্বার সহ সকল ভাষা শহিদদের, যাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি আমাদের মাতৃ ভাষায় কথা বলার অধিকার।
রাষ্ট্রদূত দিবসটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং দিবসটি পালনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি শধু বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম নয় একই সাথে আত্মসচেতনতা সমৃদ্ধ জাতীয় জাগরণের অনুপ্রেরণার উৎস।
তিনি বলেন, জাতিসত্বা বিকাশে যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন সূচিত হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙ্গালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক। আমাদের শহীদ দিবস শুধুমাত্র আমাদের দিবসই নয় এটি একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আমাদের ভাষা রক্ষার অধিকার সারা বিশ্বের যার যার মাতৃভাষা সংরক্ষণের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে, সুতরাং এটি শুধু এখন আমাদের একার বিষয়ই নয়। সারা বিশ্বের জন্য ভাষা সংস্কৃতি ঐতিহ্য রক্ষার একটি উল্লেখযোগ্য জাতিসংঘ দিবস।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান এবং ছাত্র জনতার চরম আত্মত্যাগ সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এবং সাংস্কৃতিক শোষন সহ সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের সুযোগ এনে দিয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নের্তৃত্বে বর্তমান সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা, সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ এবং সকল ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তিনি উল্লেখ করেন তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতকরনে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও, ব্রেইল বইসহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। ভাষা-ভাষির দিক থেকে বাংলা পৃথিবীর প্রথম সারির কয়েকটি ভাষার মধ্যে অবস্থিত। প্রবাসে আমরা সকলে বাংলা ভাষার একজন দূত। তাই আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষার চর্চা করা এবং বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর বুকে তুলে ধরা। আরটিভি