বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিমান টিকেটের উচ্চ মূল্য পর্যালোচনাসহ যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সভায় এয়ার টিকেটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণসমূহ চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া গ্রুপ বুকিং- বিভিন্ন এজেন্সি চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোন প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র, এবং প্রবাসগামী কর্মীদের কোন প্রকার বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই শুধুমাত্র ই-মেইলের তৈরিপূর্বক সিট ব্লক করে রাখে কিন্তু এই পিএনআরে কোনো যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। এজেন্সি বা যাত্রীগণ ঐ ফ্লাইটের টিকেট খালি আছে কি না তা জানার কোন সুযোগ থাকে না।
নামবিহীন গ্রুপ সিট বুকিং এর কারণে টিকেট মজুতদারি করা হয় যার ফলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়, আসন সংকট দেখা দেয় ফলে টিকেট মূল্য বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে বিদেশগামী শ্রমিক, স্টুডেন্ট, প্রবাসীরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। মূলত বিদেশি মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইটের তারিখের অনেক আগেই আসন বিক্রয় নিশ্চিত করা ও অধিক মুনাফার জন্যই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, ওমান, দোহা, কুয়ালালামপুর সহ বিভিন্ন রুটের টিকেট সিট ব্লক করে থাকে। যেমন- পবিত্র ওমরাহ, বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই ধরনের নামছাড়া ওপেন গ্রুপ সিট বিক্রি করে। এ ছাড়া, বিভিন্ন এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেও এয়ার টিকেটের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে বলে সভায় আলোচনা হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, এখন থেকে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট কপি ব্যতীত যাতে টিকেট বুকিং করা না যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বুকিং করা টিকেট বুকিংয়ের পরবর্তী তিনদিনের (৭২ ঘণ্টা) মধ্যে ইস্যু না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এয়ারলাইন্স ওই টিকিট বাতিল নিশ্চিত করবে। ইতোমধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এয়ারলাইন্স/ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক গ্রুপ বুকিং এর মাধ্যমে ব্লককৃত টিকিট আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে ভ্রমণকারী যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ (পাসপোর্টের কপিসহ) টিকিট ইস্যু নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যথায় তিনদিনের মধ্যে এয়ারলাইন্স তা বাতিল নিশ্চিত করবে। গত ছয় মাসে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিতকরণে সিনিয়র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সভাপতি করে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে গত ছয় মাসে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিতকরণে যাবতীয় বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তিকে শাস্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং টিকিটের উচ্চ মূল্যের বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের ১৩ সদস্য সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আরটিভি