এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বের শেষ ম্যাচটি ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার। রোমাঞ্চে ঠাসা সেই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত গড়ায় সুপার ওভারে। আর সেখানেই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো ভারত। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০২ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার ইনিংসও থামে ২০২ রানে।
সুপার ওভারে ব্যাট করতে নেমে আর্শদীপ সিংহের প্রথম বলেই ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন কুশাল পেরেরা। পরের বলে কামিন্দু মেন্ডিস ও শানাকা দৌড়ে নেন নেন এক রান। তৃতীয় বলটি ডট দেন শানাকা, আর চতুর্থ বলে একটি ওয়াইড দেন আর্শদীপ। পঞ্চম বলে শানাকা ক্যাচ আউট হলে ২ রানেই থামে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার প্রথম বলেই দৌড়ে ৩ রান নিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখল ভারত।
শেষ ওভারে শ্রীলঙ্কার জয়ের জন্য দরকার ছিল ১২ রান। হার্শিত রানার প্রথম বলেই ফাইন লেগে ভরুণ চক্রবর্তীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সেঞ্চুরিয়ান নিসাঙ্কা। পরের বলে দৌড়ে ২ রান নেন জেনিথ লিয়ানাগে ও শানাকা। তৃতীয় বলটি মিস করলেও দৌড়ে এক রান নেন। চতুর্থ বলেই বাউন্ডারি হাঁকান শানাকা। আর তাতেই জয়ের জন্য শেষ বলে প্রয়োজন হয় ৩ রান।
বলতে গেলে শ্রীলঙ্কার মুখের সামনে থেকে জয় ছিনিয়ে নিলো ভারত। ইনিংসের শেষ বলে শ্রীলঙ্কার জয়ের জন্য দরকার ছিল স্রেফ ৩ রান। তবে স্বাচ্ছন্দ্বেই দৌড়ে ৩ রান নিতে পারতেন লিয়ানাগে ও শানাকা। শেষ বলে দৌড়ে দ্বিতীয় রানের সময় ড্রাইভ দেন শানাকা, মূলত তিনি ভেবেছিলেন বলটি থ্রো করে উইকেটকিপারের হাতে দিয়েছেন ফিল্ডার। সে কারণেই তিনি ড্রাইভ দিয়েছিলেন। অন্যপ্রান্তে থাকা লিয়ানাগে দৌড়ে প্রায় অর্ধেক ক্রিজে এসে পড়েছিলেন, কিন্তু শানাকা যতক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছেন, ততক্ষণে রান নেওয়ার আর কোনো সুযোগ ছিল না। আর তাতেই ম্যাচটি হয়ে যায় টাই।
সুপার ফোর পর্বের আগের ২ ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে ২ ম্যাচ জিতে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত ছিল ভারতের। তাই আজকের ম্যাচটি স্রেফ নিয়মরক্ষার। তবে শ্রীলঙ্কা অন্তত শেষটা জয় দিয়েই রাঙাতে চেয়েছিলো, কিন্তু সেটাও আর হলো কোথায়।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। প্রথম ওভারেই হার্দিক পান্ডিয়ার বলে শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানেই ফেরেন কুশাল মেন্ডিস। স্কোরবোর্ডে তখন তাদের রান মাত্র ৭।
সেখান থেকে কুশাল পেরেরাকে সঙ্গে নিয়ে ৭০ বলে ১২৭ রানের জুটি গড়েন পাথুম নিসাঙ্কা। ৩২ বলে ৫৮ রান করে পেরেরা ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি। এরপর আসালাঙ্কা ও কামিন্দু মেন্ডিস ফিরেছেন দ্রুতই। ৯ বলে ৫ রান করা আসালাঙ্কাকে ফিরিয়েছেন কুলদীপ, আর কামিন্দুকে আউট করেছেন আর্শদীপ সিংহ।
শেষদিকে পাথুম নিসাঙ্কার সঙ্গে ২৮ রানের জুটি বাঁধেন দাসুন শানাকা। এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন নিসাঙ্কা। শেষ ওভারে শ্রীলঙ্কার জয়ের জন্য দরকার ছিল ১২ রান। ২০তম ওভারের প্রথম বলেই আউট হন পাথুম নিসাঙ্কা। তবে শেষ ৫ বল থেকে ১১ রান তোলে লঙ্কানরা, আর তাতেই ম্যাচ হয়ে যায় টাই। শ্রীলঙ্কাও নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান করে। ভারতের হয়ে হার্দিক, আর্শদীপ, হার্শিত রানা, কুলদীপ ও ভরুণ নেন ১টি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ভারতের ইনিংসের গতি ঠিক করে দিয়ে গিয়েছিলেন ইনফর্ম অভিষেক শর্মা। তার তাণ্ডবের পর অন্যরা তুলনামূলক কম স্ট্রাইকরেটে খেললেও ভারত পেয়ে যায় বিশাল সংগ্রহ।
দ্বিতীয় ওভারে শুভমান গিলের উইকেট হারালেও ভারত রানের গতি থামায়নি। অভিষেক শর্মার তান্ডবে পাওয়ার প্লেতেই ৭১ রান তুলে ফেলে তারা। এরমধ্যে ২২ বলে অভিষেক তুলে নেন টানা তৃতীয় ফিফটি। সূর্যকুমার যাদব আজও ব্যর্থ হন। আগের ৪ ম্যাচে ৫৯ রান করা এই ব্যাটার আজ ১৩ বলে করেন ১২। অভিষেক আউট হন ৩১ বলে ৬১ রান করে। তার ইনিংসে ৮টি চার ও ২টি ছয়ের মার।
এরপর তিকল ভার্মা ও স্যাঞ্জু স্যামসনের ব্যাটে সামনের দিকে এগোতে থাকে ভারতের ইনিংস। বার্মার সঙ্গে ৬৬ রানের জুটি গড়ার পথে ২৩ বলে ৩৯ রান করেন স্যামসন। শানাকার ওভারে চারিথ আসলাঙ্কাকে ক্যাচ দেন তিনি। সূর্যকুমারের মতো হার্দিক পান্ডিয়াও বড় রান পাননি। ৩ বলে ২ রান করে দুশমন্থ চামিরার শিকার হন তিনি।
ভারতের ইনিংস শেষ করে আসেন তিলক ও সাত নম্বরে নামা অক্ষর প্যাটেল। ৩৪ বলে হাফসেঞ্চুরি থেকে এক রান দূরে থাকেন অপরাজিত তিলক। অক্ষর ১৫ বলে করেন ২১। শ্রীলঙ্কার হয়ে একটি করে উইকেট নেন মহেশ থিকশানা, চামিরা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দাসুন শানাকা ও আসালাঙ্কা।