News update
  • West Bank security situation remains alarming: UN agencies     |     
  • Moyeen Khan for China's support to produce RMG raw material      |     
  • Ukraine's post-war reconstruction set to cost $524 billion     |     
  • Dhaka’s air world’s 3rd worst Wednesday morning     |     
  • Chhatak Cement Factory closed for lack of raw material     |     

কেন মণিপুরে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিতে পারলো না বিজেপি?

বিবিসি কৌশলগত 2025-02-14, 5:14pm

4235252-08f506329dc67eb2b895e5a84fd771421739531646.jpg




এন বীরেন সিং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার পর ওই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। গত ২০২৩ সালের মে মাস থেকে সেখানে জাতিগত সংঘর্ষ চলছে। এই ঘটনায় ২৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সহিংসতার কারণে মেইতেই ও কুকি দুই সম্প্রদায়েরই হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে।

রোববার অর্থাৎ নয়ই ফেব্রুয়ারি, মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন এন বীরেন সিং। তারপর থেকেই রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কে হতে পারেন সেই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে বিজেপির উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্বিত পাত্র বিধায়ক ও রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করছেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির ঘোষণা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে মণিপুরের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন সে বিষয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছাতে পারার কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মণিপুর বিধানসভার শেষ অধিবেশন ২০২৪ সালের ১২ই অগাস্ট হয়েছিল এবং পরবর্তী অধিবেশন ছয় মাসের মধ্যে আহ্বান করার কথা ছিল, তবে তা হতে পারেনি। ভারতীয় সংবিধানের ১৭৪(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিধানসভার দু'টো অধিবেশনের মধ্যে ছয় মাসের বেশি ব্যবধান থাকতে পারে না।

নেতৃত্ব নিয়ে 'সঙ্কট'

৬০ সদস্যের মণিপুর বিধানসভায় বিজেপির ৩৭ জন বিধায়ক আছেন এবং তাদের জোটসঙ্গীদের ১১ জন বিধায়ক রয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে।

দিল্লিতে দৈনিক ভাস্করের পলিটিক্যাল এডিটর হেমন্ত অত্রির মতে, "২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে হিংসা চলছে। বহু বিধায়ক একাধিকবার দিল্লিতে এসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে ধারাবাহিকভাবে নিজেদের অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কোনও সমাধান না মেলায় রাজ্য বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছে কুর্সির লড়াই।"

"২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম তার নিজের দল শাসিত রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে বাধ্য হলেন এবং সেটাও তার ঔদ্ধত্য ও একগুঁয়েমির কারণে। মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা বিপর্যস্ত বলে সুপ্রিম কোর্ট যখন মন্তব্য করেছিল, তার পরপরই তিনি ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করলে ভালো হতো।"

ইংরেজি পত্রিকা 'দ্য হিন্দু'র ডেপুটি এডিটর বিজেতা সিংও একই মত পোষণ করেন।

তিনি বলেন, "মণিপুরের বিজেপি নেতৃত্ব দ্বিধাবিভক্ত। দলের অভ্যন্তরেই বীরেন সিংয়ের সমর্থক ও বিরোধী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। বিধায়করা দিল্লির কাছে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন, কিন্তু দিল্লির পক্ষ থেকে বীরেন সিংকে সময় দেওয়া হচ্ছিল এই ভেবে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। যদিও তা হয়নি।"

"কুকিরা বীরেন সিং এবং তার লোকেদের চায় না। অন্যদিকে মেইতাইরা কোনও কুকি নেতাকে (ক্ষমতায়) দেখতে চায় না। বিজেপির একাধিক কুকি বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছেন। দলের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল এমন একজন নেতাকে বেছে নেওয়া, যিনি দুইপক্ষকেই সামলাতে পারবেন। কিন্তু কোনও এক নেতাকে বেছে নেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হতে পারেননি।"

সরকার পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা?

মণিপুরের রাজ্যপাল ইতোমধ্যেই ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিধানসভার অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করেছেন।

কয়েক দশক ধরে মণিপুরের রাজনীতি নিয়ে কাজ করা ইম্ফল রিভিউ অব আর্টস অ্যান্ড পলিটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক প্রতীপ ফানজুবাম বিবিসিকে জানিয়েছেন, ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অধিবেশনে বীরেন সিংয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।

এই আশঙ্কার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হেমন্ত অত্রি বলেছেন, "বিজেপি ভয় পেয়েছিল যে বীরেন সিংয়ের কারণে আস্থাভোট পরীক্ষা হলে তাদের অনেক বিধায়কই দলীয় হুইপ অমান্য করতে পারেন। কেন্দ্রে তাদের সরকার থাকাকালীন এমন পরিস্থিতি হলে তা দলের পক্ষে অস্বস্তির কারণ হতে পারত।"

বিজেপির ১৯ জন বিধায়ক গত বছর অক্টোবর মাসে এন বীরেন সিংকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন।

এই বিষয়ে হেমন্ত অত্রির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন সিনিয়র সাংবাদিক বিজেতা সিং।

তার কথায়, "সুনাম রক্ষা করতেই বীরেন সিংয়ের পদত্যাগ। যদি বিধানসভার অধিবেশন শুরু হয়ে যেত, তাহলে বিরোধীরা প্রথম যে কাজটা করত, সেটা হলো অনাস্থা প্রস্তাব আনা এবং এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পতন হতো।"

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশকেও এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "উনি পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছিলেন। তারা জানতেন, তাদের সরকারের পতন হবে।"

পাশাপাশি আরও একটা কারণের কথা উল্লেখ করেছেন মি. অত্রি। তার মতে, "প্রধানমন্ত্রী মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল। তিনি আশঙ্কা করছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে মণিপুর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। মণিপুরে গির্জা ও খ্রিষ্টানদের উপর হামলার ঘটনায় ইউরোপ-আমেরিকা চুপ করে বসে থাকবে না। তাই তড়িঘড়ি করে বীরেন সিংয়ের ইস্তফা নেওয়া হয়েছে।"

মি. অত্রির কথায়, "যদি সময়মতো বীরেন সিংকে সরিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে মণিপুর সাংবিধানিক সঙ্কটের দোরগোড়ায় পৌঁছত না।"

সরকারের 'বিশ্বাসযোগ্যতা' নিয়ে প্রশ্ন?

মণিপুরে ২০২২ সালে সরকার গঠন করে ভারতীয় জনতা পার্টি। ২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩২টি, কংগ্রেস পাঁচটি এবং অন্যান্য দল ২৩টি আসনে জিতেছিল। ফলাফলের প্রায় পাঁচ মাস পর জনতা দল ইউনাইটেডের ছয়জন জয়ী বিধায়কের মধ্যে পাঁচজন বিজেপিতে যোগ দেন।

সিনিয়র সাংবাদিক হেমন্ত অত্রি বলেন, "মণিপুরে বিজেপির ৩৭ জন বিধায়ক রয়েছেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কার্যকালের প্রায় তিন বছর বাকি থাকা সত্ত্বেও ওই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হয়েছে।"

"নরেন্দ্র মোদীর ১১ বছরের শাসনকালে এই প্রথম দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এইভাবে প্রকাশ পেয়েছে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর কড়া প্রশাসক হিসেবে মোদীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের স্লোগানের হাওয়া বেরিয়ে গিয়েছে।"

মণিপুরে আগামী পরিস্থিতি কী হতে পারে সেই বিষয়ে মতামত জানিয়েছেন বিজেতা সিং। তিনি বলেছেন, "মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার পরেও খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। কারণ মণিপুরে এর আগেও কেন্দ্র থেকেই সরকার চালানো হচ্ছিল।"

তিনি এই প্রসঙ্গে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটা বক্তৃতার বিষয়েও উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তৃতাকে ঘিরে বিজেপিকে আক্রমণ করতে পারে বিরোধীরা।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ৩৫৬ অনুচ্ছেদের (রাষ্ট্রপতি শাসন) অপব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, "কারা সেই ব্যক্তি যারা ৩৫৬ ধারার অপব্যবহার করেছে? একজন প্রধানমন্ত্রী ৩৫৬ ধারার ৫০ বার অপব্যবহার করেছেন এবং তার নাম শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। বিরোধী ও আঞ্চলিক দলগুলোর সরকারকে উৎখাত করেছে তারা।"

এখন বিরোধীরা বিজেপির বিরুদ্ধে ৩৫৬ ধারার অপব্যবহারের অভিযোগও তুলবে।

রাষ্ট্রপতির শাসন

ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৫ ধারা এবং ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ৩৫৫ কেন্দ্রীয় সরকারকে বহিরাগত আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ অশান্তি থেকে রাজ্যগুলোকে রক্ষা করার ক্ষমতা দেয়।

একইসঙ্গে, কোনও রাজ্যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে বা সেটা দুর্বল হয়ে পড়লে, সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদের অধীনে রাজ্য সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি। রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন পাঠান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পরামর্শের পরে রাষ্ট্রপতি তা কার্যকর করেন।

রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিপরিষদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং রাজ্য সরকারের সমস্ত বিষয় রাষ্ট্রপতির কাছে চলে যায়।

এই অবস্থায় দু'মাসের মধ্যে সংসদের উভয় কক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ তিন বছর করা যেতে পারে। বিশেষ পরিস্থিতিতে, এর সময়সীমা তার বেশি হতে পারে।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ১৯৫১ সালে দেশে প্রথমবার ৩৫৬ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করেছিলেন। ওই অনুচ্ছেদের ব্যবহার করা হয়েছিল পাঞ্জাবে, প্রায় এক বছর ধরে অব্যাহত ছিল ওই পরিস্থিতি।