News update
  • If the US Nuclear Umbrella Collapses, Will it Trigger a Euro-Bomb?     |     
  • Israeli restrictions on UN bodies in Gaza highlighted at ICJ     |     
  • Lightning strikes kill 11 in six Bangladesh districts     |     
  • Prof Yunus back home after his week-long Doha, Rome visits     |     
  • 5 of a family burn injuried in Gazipur gas cylinder blast      |     

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সব চুক্তি, এগুলো স্থগিত হওয়ার অর্থ কী?

বিবিসি সংঘাত 2025-04-28, 11:19am

tyer34534-c1b31c65f736af31924e8e0a924ac40c1745817573.jpg




ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে আবারও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আটারি সীমান্ত বন্ধ করা, কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে আনা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা, পাশাপাশি ছয় দশকের পুরনো সিন্ধু পানি চুক্তির বাস্তবায়ন স্থগিত করা।

পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। দেশটি তাদের আকাশসীমা এবং ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে, যা ভারতের সাথে এ সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার ইঙ্গিত দেয়।

ভারতের মতো পাকিস্তানও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ও তাদের সহকারীদের দেশ ছাড়তে বলেছে এবং কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা কমাতে বলেছে।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সভাপতিত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করা হলো।

বলা হয়েছে, এই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের অংশের পানির প্রবাহ থামানো বা দিক পরিবর্তনের যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচিত হবে।

পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

এর পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে— পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সিমলা চুক্তি সহ মোট কতটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আছে এবং সেগুলোর প্রকৃতি বা ধরন কী?

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কয়টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে?

পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের ওয়েবসাইট অনুসারে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মোট ৪০টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে।

এই চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, ভিসা প্রদান, পারমাণবিক অস্ত্রের তালিকা বিনিময়, সীমান্ত নিরাপত্তা, পারমাণবিক পরীক্ষার ব্যাপারে আগাম সতর্কতা থেকে শুরু করে সিন্ধু পানি চুক্তি, সিমলা ও তাসখন্দ চুক্তি এবং পানি বণ্টন সম্পর্কিত লাহোর ঘোষণাপত্র।

এই ৪০টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো:

কাস্টমস অর্থাৎ শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি।

পারমাণবিক অস্ত্রের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ চুক্তি।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে আগাম জানানো সংক্রান্ত চুক্তি।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে লাহোর ঘোষণাপত্র।

উভয় দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন প্রতিরোধ এবং সামরিক বিমান অবতরণ ও উড্ডয়ন সংক্রান্ত চুক্তি।

সামরিক অনুশীলন এবং সেনাবাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে আগাম তথ্য বিনিময় চুক্তি।

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি।

সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও প্রচার সংক্রান্ত চুক্তি।

বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন এবং শিল্প খাতে সাধারণ স্বার্থের জন্য যৌথ কমিশন প্রতিষ্ঠার চুক্তি।

চেনাব নদীর ওপর সালাল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংক্রান্ত চুক্তি।

টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত চুক্তি।

বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত চুক্তি।

রেলওয়ে যোগাযোগ সংক্রান্ত চুক্তি।

পারস্পরিক বাণিজ্যের বিভিন্ন সময়কালে সম্পাদিত চুক্তি।

পাকিস্তান ও ভারতের সাথে বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি।

ভিসা প্রাপ্তির চুক্তি।

১৯৭১ সালের যুদ্ধের আগে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মুক্তি এবং প্রত্যাবাসনের চুক্তি, যেকোনো দেশে আটক ব্যক্তিদের তালিকা।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সিমলা চুক্তি।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে চুক্তি।

তাসখন্দ চুক্তি।

সিন্ধু জল চুক্তি।

সীমিত অর্থ প্রদান বা তহবিল স্থানান্তরের বিষয়ে চুক্তি।

সিন্ধু জল ব্যবস্থায় বিভিন্ন সময়ে অ্যাডহক ভিত্তিতে জল বণ্টনের বিষয়ে চুক্তি।

আর্থিক বিষয়ে চুক্তি।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রেলপথ পুনর্বাসন চুক্তি।

সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য নেহরু-লিয়াকত বা দিল্লি চুক্তি।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাংকিং সম্পর্কিত চুক্তি।

বিমান পরিষেবা সম্পর্কিত চুক্তি।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আয়ের উপর দ্বৈত কর পরিহারের বিষয়ে চুক্তি।

যদিও গত ৭৭ বছরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কমবেশি ৪০টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তবে এর মধ্যে কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে কয়েকটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

সিমলা চুক্তি

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হল সিমলা চুক্তি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে এই চুক্তিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই চুক্তিটি ১৯৭২ সালের দোসরা জুলাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।

এটি ছিল ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলায় স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তি, তাই এটিকে সিমলা চুক্তি বলা হয়।

এর মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, দুই দেশের মধ্যে বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি এবং তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা।

শান্তিপূর্ণভাবে কাশ্মীর সমস্যাসহ অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তির চুক্তি, আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

এই চুক্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তরেখাকে "লাইন অব কন্ট্রোল" অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যা উভয় পক্ষ একতরফাভাবে পরিবর্তন না করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল।

একই চুক্তির অধীনেই, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তান এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এই চুক্তি পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিবেচিত হয়েছে।

পারমাণবিক স্থাপনার ওপর হামলা নিষিদ্ধ করার চুক্তি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হলো পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা নিষিদ্ধ করার চুক্তি।

চুক্তিটি ১৯৮৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় এবং ১৯৯১ সালের ২৭শে জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।

এর মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, উভয় দেশ একে অপরের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাবে না বা ধ্বংস করবে না বলে সম্মত হয়েছে।

প্রতি বছরের পহেলা জানুয়ারি দুই দেশ নিজ নিজ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর তালিকা একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করে।

এই তালিকায় থাকে- পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর বা পারমাণবিক চুল্লি, জ্বালানি তৈরি বা ফুয়েল ফ্যাব্রিকেশন ইউনিট, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ বা রিপ্রসেসিং প্ল্যান্ট, গবেষণাগার এবং অন্যান্য সুবিধা যেখানে পারমাণবিক পদার্থ থাকে।

এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো পারমাণবিক স্থাপনা সম্পর্কে বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতা প্রদানের মাধ্যমে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং গোটা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা

সেনা মহড়া ও সামরিক গতিবিধি সম্পর্কে আগাম বার্তা চুক্তি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তির লক্ষ্য হলো স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, যাতে সামরিক তৎপরতা ভুল ব্যাখ্যার শিকার না হয়।

চুক্তিটি ১৯৯১ সালের ৬ই এপ্রিল স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মূল বিষয় হলো দুই দেশ সীমান্তের কাছাকাছি বা সংবেদনশীল এলাকায় সামরিক মহড়া, সেনা চলাচল বা সামরিক সরঞ্জামের চলাচলের বিষয়ে আগে একে অপরকে আগাম জানাবে।

এছাড়াও, তারা সুনির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে তা অন্য দেশকে আগেই জানাবে।

চুক্তিতে দ্বিপাক্ষিক সামরিক তথ্য প্রদানের বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে মহড়ার ধরন, মহড়ায় অংশগ্রহণকারী সৈন্যের প্রকৃতি, অবস্থান, সময়কাল এবং কত সৈনিক অংশ নিচ্ছে—এইসব তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

চুক্তির লক্ষ্য হল দ্বিপাক্ষিক ভুল বোঝাবুঝি রোধ করা, উত্তেজনা কমানো এবং দুই দেশের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা।

আকাশসীমা লঙ্ঘন রোধ ও সামরিক বিমান সংক্রান্ত চুক্তি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আকাশসীমা লঙ্ঘন প্রতিরোধ এবং সামরিক বিমানের আকাশসীমার ওপর দিয়ে উড্ডয়ন ও অবতরণের অনুমতি সংক্রান্ত চুক্তির উদ্দেশ্য হলো আকস্মিক বা অননুমোদিত আকাশসীমা অতিক্রম রোধ করা এবং নিরাপদ বিমান চলাচল নিশ্চিত করা।

এই চুক্তিটিও ১৯৯১ সালের ৬ই এপ্রিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এর প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, উভয় দেশ পূর্ব অনুমতি ছাড়া একে অপরের আকাশসীমা লঙ্ঘন না করার বিষয়ে সম্মত হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের আকাশসীমায় সেনা বিমান প্রবেশের আগে পূর্বাভাস দেবে, জরুরি পরিস্থিতিতে আকাশসীমার ওপর দিয়ে উড্ডয়নের ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে।

জরুরি অবতরণের প্রক্রিয়া এবং উভয় দেশের মধ্যে অবহিতকরণ ও সহযোগিতা— চুক্তিতে উল্লেখিত এইসব শর্তের বিষয়ে একমত হয়েছে।

উভয় দেশ দুর্ঘটনাজনিত বা অননুমোদিত আকাশসীমার ওপর দিয়ে উড্ডয়ন রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য।

এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ভুল বোঝাবুঝি ও অনিচ্ছাকৃত উত্তেজনা হ্রাস করা।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে অগ্রিম জানানোর চুক্তি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে আগাম সংক্রান্ত চুক্তির উদ্দেশ্য হলো দুই দেশের মধ্যে স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং মিসাইল পরীক্ষার ভুল ব্যাখ্যার ঝুঁকি কমানো।

চুক্তিটি ২০০৫ সালের তেসরা অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির অধীনে, উভয় দেশ কোনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলে তা আগে থেকেই জানাবে।

এসব তথ্যের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন, উৎক্ষেপণের স্থান এবং প্রত্যাশিত প্রভাবিত এলাকা সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কত আগে জানানো হবে, সেই সময়সীমা চুক্তিতে নির্দিষ্ট আছে— অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কয়েক দিন আগে থেকে এক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত জানানো যাবে।

পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর চুক্তি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো পারমাণবিক দুর্ঘটনা রোধ এবং অনিচ্ছাকৃত পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমানো।

চুক্তিটি ২০০৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির অধীনে, দুই দেশের কোথাও যদি কোনো পারমাণবিক দুর্ঘটনা বা অনিচ্ছাকৃত বিস্ফোরণ ঘটে, তাহলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে একে অপরকে তা জানাবে।

এই চুক্তির অধীনে, উভয় দেশ তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের জন্য বিশেষ যোগাযোগ চ্যানেল স্থাপন করবে।

দুই দেশ প্রতিশ্রুতি দেবে যে তারা পারমাণবিক দুর্ঘটনা রোধে এবং অননুমোদিত ব্যবহারের ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নেবে।

যদি এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব কমাতে দুই দেশ একে অপরকে তথ্য দেবে এবং সহযোগিতা করবে।

লাহোর ঘোষণাপত্র

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো লাহোর ঘোষণাপত্র বা লাহোর চুক্তি।

১৯৯৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

এই চুক্তিটি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিয়া মুহাম্মদ নওয়াজ শরীফ স্বাক্ষর করেছিলেন।

লাহোরে ঐতিহাসিক আলোচনার পর এই চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিল। লাহোর ঘোষণাপত্রটি অত্যন্ত ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে কারণ এটি ছিল দুই দেশের পারমাণবিক পরীক্ষার পর সম্পাদিত প্রথম বড় চুক্তি, যা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

চুক্তির লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা। সেইসাথে দুই দেশ শান্তিপূর্ণ সংলাপ এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরসহ সব বিবাদ মীমাংসায় সম্মত হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমানো এবং পারমাণবিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছিল।

চুক্তিতে বলা হয়েছে যে উভয় দেশ একে অপরের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।

ঘোষণাপত্রে সন্ত্রাসবাদের সকল রূপ এবং প্রকাশের নিন্দা করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত হয়েছে।

ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ সংক্রান্ত চুক্তি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ সংক্রান্ত চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ভ্রমণ সহজতর করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।

এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তিটি ১৯৭৪ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর উভয় দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

এই চুক্তির মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ভিসা ছাড়াই তীর্থযাত্রীদের ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া বা নির্দিষ্ট ধর্মীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য বিশেষ ভিসা প্রদানের ব্যবস্থা করা।

এমন ভ্রমণকারীদের জন্য উভয় দেশের নির্ধারিত ধর্মীয় স্থানে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিনিময় উৎসাহিত করা।

চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে যে উভয় দেশের তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গ্রুপ ট্যুর বা ব্যক্তিগত ভ্রমণের মতো বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে তা নিরাপদ হয়।

উভয় দেশ দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি, যা দিল্লি চুক্তি নামেও পরিচিত

১৯৫০ সালের ৮ই এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

এই চুক্তি ছিল দুই দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ সংক্রান্ত।

এই চুক্তির মূল বিষয় ছিল সংখ্যালঘুদের সংখ্যালঘুদের জান-মাল ও মান মর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতি।

এতে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার এবং কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ প্রদানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বৈষম্যহীন আচরণ এবং নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

এতে দেশভাগের সময় উভয় দেশে দাঙ্গার সময় অপহৃত নারী ও লুণ্ঠিত সম্পত্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভাব্য সব সহযোগিতা এবং প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

চুক্তি বাস্তবায়নের নজরদারির জন্যউভয় দেশে সংখ্যালঘু কমিশনও গঠন করা হয় ।

সিন্ধু পানি চুক্তি

সিন্ধু নদী এবং এর উপনদীগুলির পানি বণ্টনের জন্য বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় নয় বছর ধরে আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

সেই সময়ে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান করাচিতে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং আশা করা হয়েছিল যে এই চুক্তি উভয় দেশের কৃষকদের জন্য সমৃদ্ধি আনবে এবং শান্তি, সদিচ্ছা এবং বন্ধুত্বের প্রতীক হবে।

বহু যুদ্ধ, মতপার্থক্য এবং বিরোধ সত্ত্বেও এই নদী বণ্টন চুক্তি ৬৫ বছর ধরে বহাল রয়েছে।

এই চুক্তির অধীনে, ভারতকে বিয়াস বা বিপাশা, রাভি বা ইরাবতী এবং শতদ্রু নদীর পানির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে, যেখানে পাকিস্তানকে তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলমের পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে।

তবে, এই তিন নদীর প্রায় ৮০ শতাংশ পানির ওপর পাকিস্তানের অধিকার স্বীকৃত।

পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীর প্রবাহিত পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অধিকার ভারতের রয়েছে তবে তারা পানি জমা রাখতে বা প্রবাহ কমাতে পারবে না।

এর বিপরীতে, পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলোতে, যেমন রাভি, বিয়াস এবং শতদ্রুতে, যেকোনো ধরনের প্রকল্প নির্মাণের অধিকার ভারতের রয়েছে, যার বিরুদ্ধে পাকিস্তান আপত্তি জানাতে পারে না।

চুক্তির অধীনে একটি স্থায়ী সিন্ধু কমিশনও গঠিত, যা যেকোনো বিতর্কিত প্রকল্প সমাধানের কাজ করে।

যদি কমিশন সমস্যার সমাধান দিতে না পারে, তাহলে চুক্তি অনুসারে, সরকারি পর্যায় থেকে তা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।

এছাড়াও, চুক্তিতে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়ার বা বিরোধের সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার পদ্ধতিও সুপারিশ করা হয়েছে।

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চূড়ান্ত সিন্ধু পানি চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে, ১৯৫৯, ১৯৫৭, ১৯৫৫ সালে বিভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যেগুলো পরবর্তীতে সিন্ধু চুক্তির ভিত্তি তৈরি করে।

সিমলা চুক্তি এবং অন্যান্য চুক্তি স্থগিত করার অর্থ কী হবে?

ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায়, পাকিস্তান বলেছে যে পানির প্রবাহ বন্ধ করা বা দিক পরিবর্তনের যেকোনো চেষ্টা 'যুদ্ধ ঘোষণার সামিল' বলে মনে করা হবে এবং ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার অধিকার পাকিস্তানের আছে।

এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদ বলেছেন, যদি এই সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি যেকোনো স্তরে বাস্তবায়ন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও টানাপোড়েন আরও বাড়বে।

তার মতে, যেসব দেশ পারমাণবিক অস্ত্র রাখে, তাদের মধ্যে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাতিল করা পুরো অঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করবে।

এবং এর ফলে সৃষ্ট উত্তেজনা দুই দেশকে প্রচলিত যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।

ড. ইশতিয়াকের মতে, এই চুক্তিগুলো স্থগিত করা হলে উভয় দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের অর্থনীতির ওপরও প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, যদি পাকিস্তান ভারতের মতো একতরফাভাবে কাজ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করে, তাহলে সেক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখীনও হতে পারে।

ড. ইশতিয়াক আহমেদ আরও বলেন, 'যেসব চুক্তির মধ্যস্থতায় আন্তর্জাতিক সংস্থা বা শক্তিধর রাষ্ট্র জড়িত, সেখানে একতরফা হস্তক্ষেপ বা পরিবর্তন সহজে সম্ভব নয়।'

অন্যদিকে, বিশ্লেষক হুমা বাকাই বিবিসিকে বলেন, 'সিমলা চুক্তিকে এমন একটি হুমকি বলা যেতে পারে যা যেটির খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।"

তবে ভারতের সঙ্গে হটলাইন, পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তি, এবং লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে।

তিনি বলেন, "এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্থগিত করার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনই চাইবে না যে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হোক যে তারা সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হোক।"