News update
  • Smear campaigns being carried out to eliminate BNP: Rizvi     |     
  • Prof Yunus Urges Economy Focused on Social Good, not Wealth     |     
  • Dembele crowned king: PSG star wins Ballon d’Or     |     
  • A Genocide Position Paper on the Plight of Palestine      |     
  • Economy must move beyond narrow wealth accumulation: Yunus     |     

কর্নাটকে নাটক শেষ, তবে রয়েই গেল কংগ্রেসের সঙ্কট

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক গনতন্ত্র 2023-05-19, 9:27am

c95bce60-f571-11ed-b3e0-3f7f0c801d3e-60adf203a4e25e73c8f347195d0f0db91684466843.jpg




দুজনেই রাজ্যে কংগ্রেসের জনপ্রিয় নেতা এবং দুজনেই মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখল করতে দুজনেই এতটা নাছোড়বান্দা ছিলেন যে কর্নাটকে বিপুল জয়ের পরও সরকারের হাল কে ধরবেন, তা স্থির করতে পুরো পাঁচদিন ধরে হিমশিম খেল ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

দফায় দফায় বৈঠক, গোপন আলোচনা আর নানা ফর্মুলা নিয়ে নাড়াচাড়ার পর অবশেষে কংগ্রেস আজ (বৃহস্পতিবার) জানাল, কর্নাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন প্রবীণ নেতা সিদ্দারামাইয়া।

আর রাজ্যে একজনই উপমুখ্যমন্ত্রী থাকবেন – তিনি ডি কে শিবকুমার, ডিকেএস নামেই যার বেশি পরিচিতি।

উপমুখ্যমন্ত্রী থাকার পাশাপাশি তিনি রাজ্যে কংগ্রেসের প্রধান পদেও বহাল থাকবেন।
ডিকেএস নিজেই প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, এই ফর্মুলা যে তাঁর খুব একটা মন:পূত হয়েছে তা নয় – তবে ‘দলের বৃহত্তর স্বার্থে’ তিনি এই প্রস্তাব মেনে নিচ্ছেন এবং এই সিদ্ধান্তকে ‘আদালতের রায়ে’র মতো গ্রহণ করছেন।

রাজনৈতিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, আসলে কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপেই ডিকেএস আপাতত এই ‘আত্মত্যাগ’ করতে নিমরাজি হয়েছেন।
সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদের প্রথম দু’বছর সিদ্দারামাইয়া ও পরের তিন বছর ডিকেএস ক্ষমতায় থাকবেন – এরকম যে ফর্মুলা নিয়ে আগে আলোচনা চলছিল সে ব্যাপারে আজ কংগ্রেসের তরফে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

কর্নাটকে ভোটের ফল প্রকাশের পর পরবর্তী একশো ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই রাজনৈতিক নাটকে দু’টো জিনিস অবশ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে।

প্রথমত, দেশের কয়েকটি রাজ্যে মানুষের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এলেও দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব কংগ্রেসকে ভীষণভাবেই ভোগাচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ের পর কর্নাটকেও সেই ট্র্যাডিশন অব্যাহত থেকেছে।

দ্বিতীয়ত, অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন করে নতুন একজন সভাপতি (মল্লিকার্জুন খাড়গে) নিয়োগ করা হলেও কংগ্রেসের আসল রাশ কিন্তু নেহরু-গান্ধী পরিবারের হাতেই আছে – দলের যে কোনও সঙ্কটে শেষ কথা বলেন তাঁরাই।

যেভাবে জট খুলল
গত বেশ কয়েক বছর ধরে কর্নাটকে কংগ্রেসের সংগঠনকে যিনি প্রায় একার হাতে ধরে রেখেছিলেন, তিনি ডি কে শিবকুমার।

বেশ কয়েকশো কোটি টাকার মালিক এই ধনকুবের ব্যবসায়ী-কাম-রাজনীতিবিদ গান্ধী পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ এবং কর্নাটকের প্রভাবশালী ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
অন্য দিকে সিদ্দারামাইয়া ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত যে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় ছিল, তাতে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

নিজে তিনি দলিত ‘কুরুবা’ সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। সংখ্যালঘু মুসলিম, ওবিসি এবং দলিতদের নিয়ে কর্নাটকে এর আগে যে ‘অহিন্দা’ সোশ্যাল কম্বিনেশন গ্রুপ গড়ে উঠেছিল তারা তাঁর বড় সমর্থক।

ফলে একদিকে ডিকেএসের হাতে ছিল দলীয় সংগঠন, অর্থবল আর ভোক্কালিগাদের সমর্থন – আর অন্যদিকে সিদ্দারামাইয়া পাচ্ছিলেন দলিত, মুসলিম ও পশ্চাৎপদ শ্রেণীর সমর্থন।

কংগ্রেসের যে ১৩৫জন এমএলএ জিতে এসেছেন, তার মধ্যেও বেশির ভাগই তাদের নেতা হিসেবে ‘সিদ্দু’কেই চাইছিলেন। কিন্তু ডিকেএস আবার তাঁকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে প্রস্তুত ছিলেন না।

এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিতে কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাজটা যথারীতি খুবই জটিল ও কঠিন হয়ে উঠেছিল।
কাগজে কলমে কংগ্রেস এমএলএ-রা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন দলীয় প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গের ওপরেই, কিন্তু ক্রমশ এটাও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল এই সঙ্কটের কোনও সমাধান বের করার ক্ষমতা আসলে মি খাড়গে-র হাতে নেই।

সিদ্দু ও ডিকেএস দুজনেই দিল্লিতে এসে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন, তাঁরা কে গান্ধী পরিবারের কতটা আশীর্বাদধন্য তা প্রমাণ করার জন্য দুজনেই আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

শেষ পর্যন্ত দেখা গেল শারীরিক অসুস্থতার জন্য যিনি সক্রিয় রাজনীতিতেও আজকাল পুরো সময় দিতে পারেন না, সেই সোনিয়া গান্ধীকেই আসরে নামতে হল এবং তাঁর ব্যক্তিগত অনুরোধেই ডিকে শিবকুমার অবশেষে ‘বিদ্রোহ’ প্রত্যাহার করলেন।

তবে ডিকেএসের আপন ভাই ও কর্নাটকের কংগ্রেস এমপি ডি কে সুরেশ পরিষ্কার বলেছেন, “আমার বড় ভাই মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই হক ছিল। ফলে আমরা এই সিদ্ধান্তে একেবারেই খুশি নই!”

ফলে কর্নাটকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর বিরোধ যে কোনও সময় আবার মাথা চাড়া দিতে পারে, সেই সম্ভাবনা আছে পুরো মাত্রাতেই।

কংগ্রেসের দুশ্চিন্তা যেটা
আগামী শনিবার (২০শে মে) দুপুরে ব্যাঙ্গালোরে রাজ্যের নতুন কংগ্রেস সরকার শপথ নেবে বলে স্থির হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের একটি বড় রাজ্যে ক্ষমতায় এলেও সেখানে কংগ্রেসের সমস্যা যে মিটে যাচ্ছে তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না।

এর আগে ২০১৮র ডিসেম্বরে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর গান্ধী পরিবারের সমর্থনে ওই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন দুই প্রবীণ নেতা – যথাক্রমে কমলনাথ ও অশোকে গেহলট।
সেই সিদ্ধান্তে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন তুলনায় নবীন প্রজন্মের দুই কংগ্রেসি নেতা, মধ্যপ্রদেশে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও রাজস্থানে শচীন পাইলট – যারা নিজেরাও মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।

জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া একটা পর্যায়ে কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করেন এবং বিজেপিতে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারে মন্ত্রীও হন।

অন্য দিকে শচীন পাইলটও বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিজেপিতে যোগ না-দিলেও তিনি আজও গেহলট সরকারকে ক্রমাগত ব্যতিব্যস্ত করে চলেছেন।

আবার কংগ্রেসের জেতা আর একটি রাজ্য ছত্তিশগড়েও স্থির হয়েছিল পাঁচ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বের মেয়াদ দুই দাবিদারের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করা হবে – কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি।

এখন যে যে কারণে এই রাজ্যগুলোতে কংগ্রেস সমস্যায় পড়েছে, ঠিক একই ধরনের সঙ্কটের বীজ কর্নাটকের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে।
দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মন:পূত না-হলে সিদ্দারামাইয়া বা ডিকেএস কতদিন কংগ্রেস আঁকড়ে থাকবেন, তা বলা মুশকিল।

দুজনেই প্রভাবশালী নেতা, দুজনেরই কংগ্রেসে ভাঙন ধরানোর বা নিজের দল গড়ারও ক্ষমতা আছে।

এই মতবিরোধ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য বিজেপি চেষ্টাও শুরু করে দিয়েছে পুরো দমে।

বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান অমিত মালভিয়া টুইট করেছেন, ভাবী মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী দুজনেই দক্ষিণ কর্নাটকের – ফলে নেতৃত্বে বাকি রাজ্য থেকে কিংবা কর্নাটকের লিঙ্গায়েত ও তফসিলি সম্প্রদায় থেকে কোনও প্রতিনিধিত্বই থাকছে না!

মি. মালভিয়ার ইঙ্গিতপূর্ণ রাজনৈতিক পূর্বাভাস হল, “অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়নি, ফলে কর্নাটকের জন্য সামনে খুব কঠিন দিন আসছে।” তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।