ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি মোড়ে প্রায় ১৮ কোটি টাকায় দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সংকেত বাতি স্থাপন করা হচ্ছে। যদিও এর আগেও বহু প্রকল্প ও কোটি কোটি টাকার বাজেটে ঢাকার রাস্তায় লাল, হলুদ, সবুজ বাতির ট্রাফিক লাইট সক্রিয় রাখার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। আধুনিক শহরের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে যানজট আর বিশৃঙ্খলার চিত্র বদলায়নি। এখনও হাতের ইশারায় চলছে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র যানযটে নাকাল এই শহরে ধুলায় ঢাকা পড়ে আছে নিস্ক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল। দীর্ঘদিন ধরে বাতিগুলো অকেজো থাকায় হাতের ইশারায় যানবাহন সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।
গবেষণা বলছে, প্রতিদিন প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা যানজটে হারিয়ে শহরের গড় গতিবেগ নেমে এসেছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। দীর্ঘদিন ধরেই এই নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে মুক্তির আশায় আধুনিক ও কার্যকর ট্রাফিক সিস্টেমের দাবি জানিয়ে আসছেন নগরবাসী।
গত দুই দশকে বিভিন্ন প্রকল্পে শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও অধিকাংশই ব্যর্থ হয়েছে। দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ, অসম্পূর্ণ ট্রায়াল এবং নানা অমিয়মে আলোর মুখ দেখেনি কোনো প্রকল্প। সবশেষ ২০২৫ সালে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল প্রকল্পের ৩৮ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িতদের ধরতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) অভিযানও চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন,
আমাদের আসলে পলিসি লাগবে। শুধু অবকাঠামোভিত্তিক উন্নয়ন দিয়ে হবে না। এর সঙ্গে লাগবে নীতি। সেই জায়গায় আমি বলবো, আমাদের যে পরিমাণ সড়ক আছে, এর সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত নতুন এই প্রকল্পে আধা স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ২২ মোড়ে ১৮ কোটি টাকা খরচে বসানো হচ্ছে নতুন সংকেত বাতি। জাইকার সহায়তায় ‘নিরাপদ পথচারী পারাপার পাইলট প্রকল্প’ চালু করেছে ডিএমপি-ডিএনসিসি।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, হাইকোর্ট ক্রসিং থেকে উত্তরা পর্যন্ত ২২টি মোড়ে ট্রাফিক সিগনাল লাইট লাগানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন। এতে আমরা আশাবাদী যে ট্রাফিক সিগনাল লাইট লাগানো হলে আমাদের পুলিশের কাজ সহজ হবে। ইতিপূর্বে যেগুলো লাগানো হয়েছিল, হয়তবা সমন্বয়ের অভাব ছিল।
সমন্বয়ের অভাবে বিগত উদ্যোগগুলো সফল না হলেও নতুন বাস্তবতায় ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরার আশায় নগরবাসী।