News update
  • Tarique Rahman returns home amid rapturous reception     |     
  • Home After 17 Years: Tarique Returns to Gulshan Residence     |     
  • Tarique Calls for United Effort to Build a Safe Bangladesh     |     
  • Tarique leaves for 300 feet area from airport     |     
  • BNP top leaders welcome Tarique Rahman on homecoming     |     

পাট, হোগলা পাতা, কচুরিপানার পণ্য যাচ্ছে ২৬ দেশে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2025-02-01, 1:21pm

img_20250201_131618-7ecc1d3e878b82a761f5d7f2034922f61738394482.jpg




পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা চিন্তা করেন রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাকিম আলী সরদার। সেই চিন্তা থেকে রাজবাড়ী সদরের ভবদিয়া এলাকায় গড়ে তোলেন ‘গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে খড়, পাট, হোগলা পাতা ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ৩১ পদের পণ্য। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে কানাডা, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, সৌদি আরবসহ বিশ্বের ২৬টি দেশে।

এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে পল্লী-গাঁয়ের হাজারও মানুষের। প্রশাসন ব্যাংক লোনের সুপারিশ করা সহ শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার আশ্বাস দিয়েছে। ওই জুটমিলস্ এসব পণ্য রপ্তানি করে বছরে প্রায় কোটি টাকা মুনাফা করছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হক বলেন, পরিবেশবান্ধব এসব পণ্য তৈরির উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কারখানা এলাকায় বিদ্যুৎ, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন দিক খেয়াল রাখা হচ্ছে। এখানকার কর্মরত নারী শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে মেডিকেল ক্যাম্প করার আশ্বাসও দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। পরিবেশবান্ধব এসব পণ্য ব্যবহারে সবাইকে আগ্রহী করে তুলতেও কাজ করছে জেলা প্রশাসন।

গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন জেলার সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়া এলাকার মো. হাকিম আলী সরদার। নিজের তিন একর জমি, জমানো টাকা এবং ইসলামি ব্যাংকের সহযোগিতায় তিনি গড়ে তোলেন গ্লোবাল গোল্ডেন জুট অ্যান্ড ক্রাফট লিমিটেড। বর্তমানে এটি গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট নামে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে নিয়মিত কাজ করছেন ৮০০ শ্রমিক। চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন আরও ১২০০ শ্রমিক। তাদের বেশিরভাগই পদ্মায় ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব।

সরেজমিনে দেখা যায়, গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টে পুরুষ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন নারীরাও। পাট, কচুরিপানা, হোগলা পাতা ও খড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে নার্সারি পট, ফ্লোর ম্যাট, পেপাস্ ম্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ঝুড়ি, টিফিন বক্স, পেট হাউস, টিস্যু বক্স, ফাইল বক্স, ট্রে, ফুল ঝুড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বেশিরভাগ শ্রমিক নারী। এছাড়া কাজ করছেন প্রতিবন্ধীরা।

সুমন শেখ নামে এক শ্রমিক বলেন, আমি এক সময় ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। যে বেতন পেতাম এখানেও তাই পাচ্ছি। ঢাকায় কাজ করে বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতাম। এখানে নিজের বাড়িতে থেকে কাজ করতে পারছি। এখন অনেক ভালোভাবে দিন কাটছে।

শিমুল খান নামে আরেকজন বলেন, আমার মতো অনেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে এখানে অফিসিয়াল কাজসহ বিভিন্ন কাজ করছে। এতে জেলার বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও কমেছে।

রেহেনা পারভিন নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, আগে স্বামী একা কাজ করতেন। এখন আমিও কাজ করি। দুই জনের আয়ে সংসার ভালোভাবে চলছে। সন্তানদের পড়াশোনা করাতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টায় পর্যন্ত কাজ করি।

ফাতেমা আক্তার নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, পদ্মার ভাঙনে ঘরবাড়ি জমিজমা সব হারিয়েছি। এই কারখানায় চাকরি করে এক বছরে ৮৫ হাজার টাকা জমিয়েছি। একটু জমি কিনে ঘর তোলার স্বপ্ন দেখছি। আমার মতো অনেক নারী আছেন যারা এখানে কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।

গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টে কাজ করছেন ১২ জন প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ। কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ায় তাদের পরিবারও চলছে ভালোভাবে। তাদেরই একজন সোনাবান আক্তার। তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ আমাদের কাজ দিতো না। এখানে কাজ করে চার সন্তানকে পড়াশোনা করাচ্ছি। অন্য প্রতিবন্ধী শ্রমিকরাও পরিবারকে সহায়তা করতে পেরে খুশি।

গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের এইচ আর এডমিন সাইদ হোসেন বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। কারণ বিদেশে পরিবেশবান্ধব এসব পণ্যের চাহিদা বেশি। আমাদের পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় দিন দিন চাহিদা বাড়ছে।

প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিন শুভ বলেন, এতদিন পাট, হোগলা পাতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি হলেও এ বছর যুক্ত হয়েছে ধানের খড় ও কচুরিপানা। আমরা গ্রাম ধানের খড় ও কচুরিপানা কিনে এনে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছি। যেগুলো বিশ্বের ২৬টি দেশে রফতানি হচ্ছে।

গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাঁচামাল ধানের খড়, পাট, হোগলা পাতা ও কচুরিপানা। রাজবাড়ীতে প্রচুর পাট চাষ হয়। আমরা এই জেলা থেকে পাট কিনি। হোগলা পাতা কেনা হয় কুমিল্লা থেকে।

তিনি বলেন, নিজের এলাকার প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, অসহায়রা এখানে কাজ করতে পারছে। তাদের কর্মস্থান তৈরি হয়েছে। নদী ভাঙন এলাকা হওয়ায় কাজ পেয়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে।

রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের পণ্যের কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। সেখানে অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আমরা মাঝে মধ্যে ওই কারখানা পরিদর্শন করি। তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেই। আরটিভি