গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া প্রস্তাবের জবাব দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গোষ্ঠীটি বলেছে, আমরা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চাই। যুদ্ধবিরতির জন্য গাজা থেকে সব ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। তবে হামাসের এ ধরনের প্রতিক্রিয়াকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।
শনিবার (৩১ মে) হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, চুক্তিতে উল্লেখিত নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে তারা ১০ জন জীবিত ইসরাইলি জিম্মি এবং ১৮ জন মৃত জিম্মির মৃতদেহ হস্তান্তরে প্রস্তুত।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই প্রস্তাবের লক্ষ্য স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে সব ইসরাইল সেনা প্রত্যাহার এবং আমাদের জনগণের জন্য মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা।’
বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সরাসরি কোনো সংশোধনীর কথা বলা হয়নি। তবে বিষয়সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, হামাস প্রস্তাবে কিছু সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। তা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক।
হোয়াইট হাউসও জানিয়েছে, প্রস্তাবিত খসড়া সম্পর্কে হামাস তাদের আপত্তিও তুলে ধরেছে। বিস্তারিত প্রতিক্রিয়ায় হামাস তাদের সুপরিচিত শর্তগুলো পুনরাবৃত্তি করেছে: একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে সম্পূর্ণ ইসরাইলি প্রত্যাহার এবং মানবিক সহায়তার অব্যাহত প্রবাহের নিশ্চয়তা।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, প্রস্তাবিত চুক্তিতে ‘যুদ্ধ বন্ধের কোনো নিশ্চয়তা’ নেই। শনিবার আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামাস মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দেয়া সবশেষ প্রস্তাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
তবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের প্রতিক্রিয়াকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন উইটকফ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘হামাসের উচিত আলোচনার ভিত্তি হিসেবে আমাদের উত্থাপিত কাঠামো প্রস্তাব গ্রহণ করা, যাতে আমরা চলতি সপ্তাহেই চুক্তিটি কাজ শুরু করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, এটাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমরা আগামী দিনগুলোতে ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন করতে পারি যেখানে জীবিত জিম্মিদের অর্ধেক এবং মৃতদের অর্ধেক তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসবে। এবং এটাকে ভিত্তি ধরে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবসম্মত আলোচনা এগিয়ে নেয়া যেতে পারে।’
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের প্রতিক্রিয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়া অগ্রহণযোগ্য এবং পরিস্থিতিকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং হামাসের পরাজয়ের জন্য ইসরাইল পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে।’
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজায় ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গত তিন মাস ধরে ইসরাইলি অবরোধের কারণে গাজাজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইসরাইল সীমিত পরিসরে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।