
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে তিন দিনের জাতীয় লালন স্মরণোৎসব শেষ হবে আজ। একতারা, দোতারা আর ঢোল-বাঁশির সুরে প্রকম্পিত হয়ে ওঠা ভবের হাট ছাড়ছেন সাধু-ভক্তরা। ভবের হাটের সাধুসঙ্গে মহামানবের দর্শন, নিজেকে চেনা, অজানাকে জানার জন্য কয়েকদিন ধরে অবস্থান নেওয়া সাধু ভক্তরা বলছেন, অর্জিত লালন শিক্ষা নিজের ও পৃথিবীর শান্তির পথ হবে।
১৩৫ বছর আগে ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক মহাদেশের সবচেয়ে বড় আধ্যাত্মিক বাউল সাধক লালন ফকির দেহত্যাগের পর থেকে তার স্মরণে এই সাধুসঙ্গ উৎসব চলে আসছে। প্রথমে লালন অনুসারীরা পরে লালন একাডেমি এ উৎসব চালিয়ে আসছে।
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ বানীকে সামনে নিয়ে এবার জাতীয়ভাবে লালন স্মরণোৎসব পালন শুরু হয়। এবারও জাতপাত ভুলে দেশি-বিদেশি লালন ভক্তরা কুষ্টিয়ার আখড়াবাড়িতে জড়ো হয়।
লালন অনুসারীরা নিজেদেরকে খাঁটি করে গড়ে তুলতে সহজ মানুষের সন্ধান করেছেন। লালনের রীতি অনুযায়ী অষ্ট প্রহরব্যাপী সাধুসঙ্গ শেষ করে গতকালই আখড়াবাড়ি ছেড়ে গেছেন কিছু অনুসারী। আজ সকাল থেকেই মহাগুরু ফকির লালনকে বিশেষ ভঙ্গিতে শ্রদ্ধা নিবেদন আর গুরুকার্যের মাধ্যমে একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আখড়াবাড়ি ছাড়ছেন সাধু ভক্তরা।
লালনভক্ত কাজী সোহান শরীফ বলেন, লালনের তিরোধান দিবসকে জাতীয় করনের ফলে এবার লালন উৎসবও জাতীয়ভাবে পালন হলো। এতে ভবিষ্যতে লালন দর্শন আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে আরও ছড়িয়ে দিতে কাজে আসবে।
লালন অনুসারী বাবু ফকির বলেন, এখান থেকে যে জিনিসটা পাওয়া যায় সেটা হলো মানুষের সঙ্গ, সহজ মানুষের সঙ্গ, সৎ-সঙ্গ আর এই সাধুদের সঙ্গই একজন নতুন মানুষকে সহজ করে ফেলে। তারা একান্ত মনকে সহজ করে দেয়। আমি আমি করা
মানুষগুলোর মধ্যে আমিত্বের অহংকার কিঞ্চিত পরিমাণ হলেও দূর হয়। লালন ফকির তার বানীতে বলেছেন ‘চিরদিন ইচ্ছে মনে আইল ডাঙায়ে খাস খাবা, মন সহজেই কি সই হবা’। তার অর্থ হচ্ছে মন বারবারই অবাধ্য হবে, বিপথে যাবে। সেই
মনকে বশে আনতে আবারও পরের অনুষ্ঠানে বা সাধুসঙ্গে যোগ দেবেন তারা।
মিন্টু ফকির বলেন, যাবার সময় একটা আকুতি থাকে। লালন ফকির নিজেই বলেছেন ‘কবে হবে সজল বরষা, চেয়ে আছি সেই ভরসা। আমার এই ভগ্নদশা যাবে কতদিন পরে। এবার যদি না পাই চরণ, আবার কি পরি ফ্যারে। নদীর জল কূপজল হয় বিল বাওরে পরে রয়, সাধ্য কি সে গঙ্গাতে যায় গঙ্গা না এলে পরে।’ এমন আকুতির কথা মনে হলে লালনের অনুসারীদের হৃদয় ভেঙ্গে যায়। তারপরেও শৃঙ্খলার ডাকে নিজালয়ে ফিরতে হয়। আবার আসতে পারবো কিনা চিন্তা হয়।
লালন অনুসারী ও গবেষক হৃদয় শাহ ফকির বলেন, একান্ত মন থেকে বেরিয়ে এসে সত্যকে জানতে লালনের ধারায় ভক্ত বাড়ছে। হিংসা রাগ দূর করতে তাদের অন্তরে গভীরভাবে লালনের সত্যবানী লালিত হচ্ছে। আস্তে আস্তে সমাজের শক্তিশালী
মানুষগুলোও লালন দর্শন নিয়ে ভাবছে। এদিকে আজ রাতে মূল মঞ্চে আলোচনা ও লালন সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে লালন
উৎসবের সমাপ্তি হবে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শেষসময়ে আখড়াবাড়ি মাঠে বাউল মেলায় মেতে উঠেছেন সবাই।আরটিভি