
১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন বেগম খালেদা জিয়া। ফলে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বের ইতিহাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
প্রসঙ্গত, বেগম জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে বিভক্তির পর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসেন। তার আদি বাড়ি মূলত দেশের দক্ষিণ-পূর্ব জেলা ফেনীতে। তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় আসেন। বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ছিলেন ১৭ জুন পর্যন্ত। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আবদুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ও তার দুই ছেলেকে বন্দি করে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন।
জিয়াউর রহমান বীর উত্তম যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন, তখন বেগম জিয়া ফার্স্ট লেডি হিসেবে তার সঙ্গী হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং নেদারল্যান্ডের রানি জুলিয়ানার সঙ্গে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
১৯৮১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাহাদাত বরণের পর, তিনি ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি সাধারণ সদস্য হিসাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে টানা প্রায় ৪১ বছর দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর মার্চে তিনি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান। বিচারপতি আবদুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
১৯৯৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলের চতুর্থ কাউন্সিলে দ্বিতীয়বার, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার এবং ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের দশম কাউন্সিলে চতুর্থবারের মতো বিএনপির চেয়ারপারসন হন।
বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দল ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে কোনোরকম সমঝোতা না করেই আপসহীন আন্দোলন করে গেছেন। ফলে এরশাদের পতন ত্বরান্বিত হয়।
১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই বছর সেপ্টেম্বরে জোটের মাধ্যমে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফায় আন্দোলন চলতে থাকে। ওই বছরের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতেও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দমে যাননি।
১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি।
নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার একটি অনন্য রেকর্ড হচ্ছে, পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই তিনি জয়ী হয়েছেন। খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে টানা প্রায় ৪১ বছর দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর মার্চে তিনি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান। বিচারপতি আবদুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলের চতুর্থ কাউন্সিলে দ্বিতীয়বার, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার এবং ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের দশম কাউন্সিলে চতুর্থবারের মতো বিএনপির চেয়ারপারসন হন।
সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর তিনি আইনি লড়াই করে সবকটি মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালে তাকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। বাকি দুটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। যদিও বর্তমানে তিনি নির্বাহী আদেশে জামিনে আছেন।
২০০৭ ও ২০০৮ সালের জরুরি শাসনকালে তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানির মামলা ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। বাকি মামলাগুলো হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে। হাইকোর্টের আদেশে ১৩টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।