
দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রতীক্ষা আর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে ভোট শুরু হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম দেশটিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছে জান্তা সরকার। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাজধানী নেইপিদো, বাণিজ্যিক শহর ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়সহ জান্তানিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে কড়া পাহারায় ভোটগ্রহণ চলছে।
এএফপি জানিয়েছে, জান্তা শাসিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে এই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে তিন ধাপে মোট এক মাস ধরে। তবে সংঘাতবিক্ষুব্ধ মিয়ানমারের বড় একটি অংশ এখন বিদ্রোহীদের দখলে থাকায় সেসব অঞ্চলে কোনো ভোট হচ্ছে না। গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি-র দল এনএলডি-কে নিষিদ্ধ রেখে এই নির্বাচন আয়োজন করায় বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
২০২০ সালের শেষ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। কিন্তু কারচুপির অজুহাতে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এরপর সু চিসহ হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে বন্দি করা হয়। ২০২৩ সালে এনএলডি-কে বিলুপ্ত ঘোষণা করে জান্তা সরকার, যার ফলে এবারের নির্বাচনে জনগণের প্রিয় দলের কোনো অংশগ্রহণ নেই।
বর্তমানে কারাগারে বন্দি অং সান সু চির বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা দিয়েছে জান্তা। সব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার প্রায় ১৫০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন মূলত সামরিক জান্তার ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার একটি কৌশল মাত্র। যেখানে বড় শহরগুলোতে ভোটের আমেজ থাকলেও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত প্রদেশগুলোতে জান্তার কোনো কর্তৃত্ব নেই।
মিয়ানমারের এই নির্বাচন লোহিত সাগর বা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতির মতোই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক নতুন অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের চলমান লড়াইয়ের মধ্যে এই একপাক্ষিক ভোট মিয়ানমারকে কতটা স্থিতিশীল করতে পারবে, তা নিয়েই এখন বড় প্রশ্ন।