বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে। ‘দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত করণীয় কিছু বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ’ শীর্ষক এই চিঠিটি বুধবার (১৬ এপ্রিল) পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দলের পক্ষ থেকে।
মির্জা ফখরুল চিঠিতে উন্নয়ন এবং সংস্কারের কথা বলে গণতন্ত্রকে পিছিয়ে রাখাকে ভ্রান্ত ধারণা বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমেই সবার জন্য উন্নয়ন সম্ভব এবং এর জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন ও নীতির সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ এবং ‘আগে সংস্কার পরে গণতন্ত্র’ উভয় তত্ত্ব ভ্রান্ত। বিএনপি মনে করে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমেই সবার জন্য উন্নয়ন সম্ভব এবং এর জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন ও নীতির সংস্কার জরুরি।
দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির ইতিহাসে প্রায় সবগুলো যুগান্তকারী সংস্কার বিএনপির হাত ধরেই এসেছে দাবি করা চিঠিতে বলা হয়, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা ও অন্যান্য দলের মতামত নিয়ে ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির কথা একই সঙ্গে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়া তাদের ঘোষণারই অংশ মন্তব্য করে ‘যুক্তিগ্রাহ্য আলোচনা’কে স্বাগত জানায় দলটি। তবে দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে সময়ক্ষেপণ করে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কৌশল তারা সমর্থন করে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় চিঠিতে।
চিঠিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি অবসানে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির মহাসচিব আরও লিখেছেন, অধ্যাপক ইউনূস ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা হলো দ্রুত ফ্যাসিবাদী দল, তাদের দলীয় সরকার ও সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিচার এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা, নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানো এবং দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অব্যাহত আন্দোলনের কথা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘ ১৬ বছরের লড়াইয়ে ১৭শ'র বেশি বিরোধী নেতাকর্মী গুম, সহস্রাধিক খুন এবং ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মী আহত, পঙ্গু ও গায়েবি মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এছাড়াও, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে দুই সহস্রাধিক তরুণ, ছাত্র, শ্রমিক ও নারী-শিশু জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আরও কয়েক হাজার আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। বিএনপি এই ফ্যাসিবাদের পতন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইকে অসীম আত্মত্যাগ ও সাহসী লড়াইয়ের এক গৌরবজনক ইতিহাস বলে অভিহিত করেছে।
চিঠিতে আরও দাবি করা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র ও মানবিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিটি লড়াইয়ের নেতৃত্ব দানকারী বা সক্রিয় অংশীদার হিসেবে বিএনপি সর্বদা জনগণের কল্যাণে কাজ করে এসেছে। সেই লক্ষ্যে বিএনপি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে একটি টেকসই ক্ষেত্র তৈরির জন্য সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার ভার গ্রহণে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে এবং পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
আরটিভি