
টেলিকম খাতে স্থানীয় কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিফোন শিল্প সংস্থা’র (টেশিস) ৭ ডিসেম্বর সাথে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোগত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইডটকো বাংলাদেশ।
এই অংশীদারিত্বের আওতায়, উভয় প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে টেশিস’র স্থাপনায় ব্যাটারি মেরামত ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে একটি কেন্দ্র স্থাপন করবে যার মাধ্যমে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি, ই-বর্জ্য হ্রাস এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা ও পরিবেশবান্ধব ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলায় বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই উদ্যোগ।
ইডটকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (সিএমডি) সুনীল আইজ্যাক এবং টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এ বিষয়ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তির আওতায় ইডটকো বাংলাদেশ টেশিস’র সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কারিগরি জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রের কার্যক্রম সহজে পরিচালনা এবং এর গুণগত মান ঠিক রাখতে টেশিস তাদের স্থাপনা, বিবিধ সেবা ও জনবল দিয়ে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “টেশিস ও ইডটকো’র মধ্যকার এই সমঝোতা স্মারক দেশের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি উল্লেখ করেন, এই রিপেয়ার ও রিফারবিশমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নেটওয়ার্কের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির সুযোগ তৈরি হবে। তিনি আরও বলেন, উদ্যোগটি সফল হলে ভবিষ্যতে দেশেই ব্যাটারি সেল উৎপাদনের পথ সুগম হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং নতুন প্রযুক্তিখাত গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান বলেন, “এ সমঝোতা স্মারক সরকারের টেলিকম সাপোর্ট ইকোসিস্টেম আধুনিকায়নের অঙ্গীকারকে আরও সুদৃঢ় করবে। তিনি জানান, টেশিসের শিল্প সক্ষমতা ও ইডটকোর আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত দক্ষতা একত্রে একটি টেকসই এবং পারস্পরিক লাভজনক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে, যা শুধু টেলিযোগাযোগ খাত নয়, ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর অন্যান্য শিল্পেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
ইডটকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুনীল আইজ্যাক বলেন, “দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণের অংশীদার হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, টেকসই উদ্যোগ, উদ্ভাবন এবং স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি একটি শক্তিশালী ইকোসিস্টেম গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় জনশক্তির ক্ষমতায়ন ও সম্পদের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা দায়িত্বশীল অবকাঠামো তৈরিতে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছি।”
টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “এই সমঝোতা স্মারক দেশীয় সক্ষমতা, দক্ষতা ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। টিএসএস-এর উৎপাদন সক্ষমতা এবং ইডটকোর প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে একীভূত করার মাধ্যমে আমরা দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন এবং একটি আরও টেকসই ও স্বনির্ভর টেলিকম শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি।”
গৃহীত উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে ব্যাটারি সংযোজন, স্মার্ট পোল ও আইওটি সল্যুশনের মতো নতুন ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করবে প্রতিষ্ঠান দুটি যা টেকসই প্রযুক্তি ও বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার প্রতি উভয় প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকারকে আরও দৃঢ় করবে।