সরকার ২০২৭ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের কারিকুলাম পর্যালোচনাসহ প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে অন্য কোনো দেশের হুবহু অনুকরণ নয়, দেশে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কারিকুলাম প্রবর্তনের পাশাপাশি মূল্যায়নে পরীক্ষা পদ্ধতিকে প্রাধান্য দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। আর শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে না পারলে সব উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা শিক্ষাবিদের।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে যায়। তার পরিবর্তে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রয়েছে।
আগামী বছরও পুরোনো কারিকুলামেই চলবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পড়াশোনা। তবে এক যুগের আগের এই কারিকুলাম যুগের চাহিদার অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
এরইমধ্যে যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রবর্তনে প্রাথমিক পর্যালোচনা শুরু করেছে এনসিটিবি। ২০২৭ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন কারিকুলাম। পর্যায়ক্রমে প্রতিবছর একটি করে ক্লাসে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।
শীলা বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘বাচ্চারা বারবারই গিনিপিগ হচ্ছে। শিক্ষাক্রমের পদ্ধতি পরিবর্তনে আমার সন্তানরা ভুক্তভোগী।’
সিফাত নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘বিদেশের অনুকরণে নতুন কারিকুলাম করা যাবে না। এতে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটটাকে অগ্রাধিকার যেন দেয়া হয়।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘এবছর যারা নবম শ্রেণিতে, তারা ২০২৭ সালে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ফলে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম ২০২৬ সাল পর্যন্ত অটোমেটিক যাচ্ছে। ২০২৭ সালকে টার্গেট করে নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য অভ্যন্তরীণ যেসব কাজ রয়েছে সেগুলো শুরু হয়েছে।’
অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই মূল্যায়নসহ কারিকুলামের নানা দিক চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘একটা ছাত্র এ প্লাস পাওয়া মানেই সবসময় ভালো কারিকুলামের রিফ্লেকশন না। যে প্রত্যাশা নিয়ে কারিকুলাম তৈরি করা হয় সেই প্রত্যাশাগুলো যেন শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পারে, এরজন্য মান সম্মত শিক্ষকের বিকল্প নেই।’
কারিকুলামে কোনো মতাদর্শ চাপিয়ে না দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ এই শিক্ষাবিদের।