![]()
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য (রেসিডেন্স) ভিসা চাওয়া বিদেশিদের যদি ডায়াবেটিস বা স্থূলতাসহ কিছু নির্দিষ্ট ধরনের শারীরিক অসুস্থতা থাকে, তাহলে তাদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে।
নির্দেশনাটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দূতাবাস ও কনস্যুলার কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর।
কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, ভিসা আবেদনকারীর বয়স বা নাগরিক সুবিধার ওপর নির্ভর করার সম্ভাবনাসহ বেশ কয়েকটি নতুন কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। নির্দেশনায় বলা হয়, এই ধরনের ব্যক্তিরা তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা বয়সের কারণে ‘পাবলিক চার্জ’ বা মার্কিন সম্পদের সম্ভাব্য অপচয়ের কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য অভিবাসীদের স্বাস্থ্য মূল্যায়ন বছরের পর বছর ধরেই ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগের জন্য স্ক্রিনিং এবং টিকা গ্রহণের তথ্য সংগ্রহ করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন নির্দেশনাগুলো বিবেচনাযোগ্য শারীরিক জটিলতার তালিকা আরও বড় করেছে এবং ভিসা কর্মকর্তাদের আবেদনকারীর স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, এই নির্দেশনাটি ট্রাম্প প্রশাসনের বিভাজনমূলক ও আক্রমণাত্মক প্রচারণার অংশ, যা অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে এবং অন্যদের দেশের নাগরিকদের বসবাসের সুযোগ কমাতে ব্যবহার করা হবে।
অলাভজনক আইনি সহায়তা সংস্থা ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের সিনিয়র অ্যাটর্নি চার্লস হুইলার বলেন, নতুন নির্দেশনায় ভিসা প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর স্বাস্থ্যের ওপর জোর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই নির্দেশনা প্রায় সব ভিসা আবেদনকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে এটি কেবল স্থায়ীভাবে যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে চান, তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, আপনাকে অবশ্যই একজন আবেদনকারীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করতে হবে। কিছু শারীরিক অবস্থা—যার মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, পরিপাকজনিত অসুস্থতা, স্নায়বিক রোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা। কিন্তু এগুলোই সীমাবদ্ধ নয়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ ডলারের সেবা প্রয়োজন হতে পারে।
বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। হৃদরোগে আক্রান্তের ঘটনাও অনেক; এগুলো বিশ্বজুড়ে প্রধান ঘাতক।
নির্দেশনায় ভিসা কর্মকর্তাদের আরও কিছু ব্যাপার বিবেচনা করতে উৎসাহিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্থূলতা, যা হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। এসবের জন্য ব্যয়বহুল, দীর্ঘমেয়াদী সেবার প্রয়োজন হতে পারে। তাই একজন অভিবাসী ‘রাষ্ট্রের খরচের’ কারণ হতে পারেন কিনা এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া উচিত কিনা, সেটি মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্ররা নতুন এই নির্দেশনার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধের তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি।
কর্মকর্তাদের প্রতি মার্কিন সরকারের সাহায্য ছাড়া ভিসা আবেদনকারীর চিকিৎসার খরচ বহনের সামর্থ্য আছে কিনা তা নির্ধারণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
চার্লস হুইলার বলেন, নতুন এই নির্দেশনার ভাষা পররাষ্ট্র দপ্তরের নিজস্ব হ্যান্ডবুক, পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে হচ্ছে। সেখানে বলা আছে—ভিসা কর্মকর্তারা ‘কী হলে’ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কোনো আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না। এই নির্দেশনা অনুযায়ী, ভিসা কর্মকর্তাদের ‘ভবিষ্যতে কোন ধরনের চিকিৎসা জরুরি অবস্থা বা ব্যয় হতে পারে, সে সম্পর্কে তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা’ করতে বলা হয়। এটা উদ্বেগজনক, কারণ তারা চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত নয়। তাদের এই ক্ষেত্রে কোনো অভিজ্ঞতা নেই এবং তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত জ্ঞান বা পক্ষপাতের ভিত্তিতে অনুমান করা উচিত নয়।
এই নির্দেশিকায় কর্মকর্তাদের ভিসা আবেদনকারীর পরিবারের সদস্যদের, যাদের মধ্যে শিশু বা বয়স্ক মা-বাবাও রয়েছেন, তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, পরিবারের মধ্যে কারও অক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসাগত সমস্যা, অন্যান্য বিশেষ চাহিদা বা তাদের এমন যত্নের প্রয়োজন আছে কিনা, যার জন্য ভিসা আবেদনকারী তার চাকরি করতে পারবেন না, সেগুলো বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
ভিসা আবেদনকারীদের বর্তমানে মার্কিন দূতাবাস কর্তৃক অনুমোদিত একজন চিকিৎসকের দ্বারা একটি মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হয়। তাদের যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগের জন্য স্ক্রিনিং করা হয় এবং একটি ফর্ম পূরণ করতে বলা হয়, যেখানে তাদেরকে মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ, মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা বা সহিংসতার তথ্য প্রদান করতে বলা হয়। হাম, পোলিও ও হেপাটাইটিস বি এর মতো কয়েকটি সংক্রামক রোগের টিকাও নেওয়া থাকতে হবে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী সোফিয়া জেনোভেস বলেন, এই নির্দেশিনায় কর্মকর্তাদেরকে ভিসাপ্রার্থীর চিকিৎসার খরচ, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কর্মসংস্থান পাওয়ার ক্ষমতা এবং তাদের চিকিৎসার ইতিহাস বিবেচনা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারও ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ইতিহাস বিবেচনা করতে গেলে দেখা যায়, তা বেশ বিস্তৃত। এসব কারণে দূতাবাসের সাক্ষাৎকারে যাওয়ার সময় বহু সমস্যার সৃষ্টি হবে।