News update
  • Tarique Calls for United Effort to Build a Safe Bangladesh     |     
  • Tarique leaves for 300 feet area from airport     |     
  • BNP top leaders welcome Tarique Rahman on homecoming     |     
  • Flight carrying Tarique, family lands in Dhaka     |     
  • Red bus with ‘Bangladesh first’ slogan ready at Dhaka airport for Tarique     |     

রোমানিয়ায় যেভাবে গঠিত হলো বাংলাদেশি কমিউনিটি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2025-02-01, 1:47pm

erqweqwe-8ab304995bfbc86afebe7668267a49ea1738396052.jpg




রোমানিয়ার বোখারেস্ট শহরের এক পাঁচ তারকা হোটেলের নিঃসঙ্গ কক্ষে বসে মো. সাইফুল ইসলাম গভীর চিন্তায় মগ্ন। প্রবাস জীবন অনেক কিছু দিয়েছে তাকে, কিন্তু এর একাকীত্ব তাকে প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায়। নিজের দেশের মানুষের মুখগুলো দেখা, তাদের সাথে গল্প করা কিংবা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার যে আনন্দ, তা যেন প্রবাসে হারিয়ে যায়। কিন্তু এই বাস্তবতা মেনে নিতে পারেননি তিনি। তিনি ঠিক করলেন, কিছু একটা করতে হবে—একমাত্র ঐক্যের মধ্য দিয়েই এই একাকীত্বের জাল ভাঙা সম্ভব।

এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় তার দীর্ঘ এক অভিযাত্রা। সময়টা আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে। নিজের খরচে বোখারেস্টে এসে হোটেলে উঠতেন তিনি। এরপর একে একে প্রবাসী বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করতেন। নতুন জায়গা নতুন মানুষ, কিন্তু সাইফুল ইসলাম ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি সবার খোঁজ নিতেন, তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। কখনো শুধু চা-আড্ডায়, কখনো বা ছোট খাটো মিলনমেলায়, তিনি বাংলাদেশিদের একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান।

তবে কাজটা এত সহজ ছিল না। প্রবাসী জীবনের কঠোর বাস্তবতায় ব্যস্ত সবাই। অনেকেই এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারতেন না। কিন্তু সাইফুল ইসলাম হাল ছাড়েননি। তার বিশ্বাস ছিল—প্রবাসে থেকেও একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই নিহিত আছে জীবনের আসল সৌন্দর্য।

এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সাত বছর আগে তিনি একটি ফেসবুক পেজ চালু করেন। পেজটি এখন রোমানিয়ায় থাকা প্রায় সব বাংলাদেশির একটি ভার্চুয়াল মিলনমঞ্চ। এখানে মানুষ নিজেদের সুখ-দুঃখের গল্প ভাগাভাগি করে, সমস্যার সমাধান খুঁজে নেয়। শুধু তাই নয়, সাইফুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ভ্রমণ আয়োজন করতেন, যেখানে বাংলাদেশিরা একত্রিত হয়ে রোমানিয়ার বিভিন্ন সৌন্দর্যময় স্থানে সময় কাটাতেন।

তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে সম্প্রতি রোমানিয়ার বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি কমিউনিটি গঠিত হয়েছে। ভোটাভুটির মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠিত হয়েছে, যার মেয়াদ ৩ মাস। এরপরে আরও বৃহৎ পরিসরে একটি স্থায়ী কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা দুই বছরের জন্য কার্যকর থাকবে। এই কমিউনিটির লক্ষ্য হবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ রক্ষা করা, তাদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।

তবে এই যাত্রা কখনোই মসৃণ ছিল না। কিছু মানুষ, যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে বিভক্ত থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন, তারা এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু সাইফুল ইসলাম এসব বাধাকে আমলে না নিয়ে এগিয়ে গেছেন। কারণ তার লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট—প্রবাসে সবাইকে একত্রিত করে একটি মজবুত বাংলাদেশি কমিউনিটি গঠন করা।

আজ রোমানিয়ায় এই কমিউনিটি শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একটি পরিবারের প্রতিচ্ছবি। মো. সাইফুল ইসলামের মতো মানুষেরা দেখিয়ে দেন, একক প্রচেষ্টা কীভাবে একটি জাতিকে একত্রিত করতে পারে। তার অদম্য উদ্যম, ত্যাগ এবং ভালোবাসার কারণে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের জীবন শুধু সহজ হয়নি, বরং আরও আনন্দময় এবং অর্থবহ হয়ে উঠেছে।

মো. সাইফুল ইসলামের এই অন্যান্য উদ্যোগ আমাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষা। প্রবাসে থেকেও দেশকে ভালোবাসা যায়, মানুষকে ভালোবাসা যায়। সাইফুল ইসলাম আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন, একতার শক্তি কেবল স্বপ্ন দেখায় না, বরং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে। প্রবাসে থাকা সব বাংলাদেশি যেন তার এই প্রচেষ্টার মূল্যায়ন করে এবং এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। আরটিভি