
নির্বাচনী ম্যানিফেষ্টোতে নদী-পানির অধিকার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি)।
সোমবার ঢাকায় একটি রেস্তোরায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইএফসি'র নেতৃবৃন্দ এই আহবান জানান। এতে আইএফসি, নিউইয়র্কের চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান এবং আইএফসি বাংলাদেশের সভাপতি মোস্তাফা কামাল মজুমদার বক্তব্য দেন।
নেতৃবৃন্দ তাদের মূল দাবিগুলো তুলে ধরে বলেন, সব রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে নদী ও পানির অধিকারকে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সৈয়দ টিপু সুলতান বলেন, “দলগুলোকে অবশ্যই যৌথ নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে এবং বাংলাদেশের মানুষের পানির অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।”
তিনি বলেন, ভারত কর্তৃক উজানে বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারের ফলে পানি ব্যবস্থাপনায় জরুরি রাজনৈতিক উদ্যোগ এখন অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি জানান, বাংলাদেশে পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির মূল কারণ ৫৭টি যৌথ নদীর মধ্যে ৫৪টিতে উজানের হস্তক্ষেপ।
২০২৬ সালে ৩০ বছরের গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় চুক্তিটি সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত পানির অধিকার নিশ্চিত করা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সালিশি প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায় আইএফসি।
২০১১ সাল থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা পানি চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের গজোলডোবা ব্যারাজ থেকে শুষ্ক মৌসুমে পানির সম্পূর্ণ প্রত্যাহার বন্ধ করার দাবিও জানায় তারা। এর ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।
নেতারা ৫৪টি যৌথ নদীর জন্য একটি সমন্বিত, ন্যায়সংগত ও টেকসই পানি-বণ্টন চুক্তিরও দাবি করেন। তারা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বহু নদ-নদী ইতোমধ্যেই মৃতপ্রায়, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বড় ধরনের হুমকি।
মোস্তাফা কামাল মজুমদার রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও নাগরিকদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান, যাতে সীমান্ত–অববাহিকার পানির অধিকার রক্ষায় দেশের অবস্থান শক্তিশালী হয় এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
সংগঠনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভারতের উপর দিয়ে বয়ে আসা অন্য ৫২টি নদীর ব্যাপারে কোন চুক্তি নেই। কিন্তু প্রত্যেকটা নদীর উপর বাঁধ বা জলাধার নির্মান করে বাংলাদেশে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত ভাবে চলতে থাকায় বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে।
বিগত ১৬ বছর ধরে নতজানু পররাষ্ট্র নীতি এবং প্রতিবেশীকে খুশি রাখার পানি নীতি চালু থাকায় এ অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। দেশের ভৌগলিক অস্তিত্ব রক্ষা ও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার স্বার্থে তাই আমাদের সকল রাজনৈতিক দল ও গোষ্টিকে আওয়াজ তুলতে হবে। সকল নদীর পরিবেশগত প্রবাহ বজায় রেখে যৌথ নদীর পানি প্রাপ্তির জন্য একটা সার্বিক চুক্তি করুন। চুক্তির শর্ত অনুসারে পানি প্রাপ্তির গ্যারান্টি এবং এ ব্যাপারে মতানৈক্য নিরসনের আরবিট্রেশন ক্লজ থাকতে হবে।
পারষ্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে পানি সমস্যার সমাধান না হলে প্রয়োজনে তা জাতিসংঘে উথাপন করতে হবে। কারণ পানি সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম হবে।
সংগঠনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইএফসি বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আজাদ।