News update
  • Prof Yunus Calls for People-Centered Democracy in Bangladesh     |     
  • Record 676 Million Women Exposed to Deadly Conflicts     |     
  • UN Renews Push for Global Elimination of Nuclear Arms     |     
  • Don't leave healthcare to profit-driven actors: Prof Yunus     |     
  • Key issues that Prof Yunus may raise in UNGA speech Friday     |     

বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত, তবু বিদেশিদের নেই আগ্রহ!

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক পর্যটন 2025-09-27, 11:09am

865ea6f9a45e26afbfe67ad5313c911b9385059400891109-6e052dadb69d64521e0f38f8f49833241758949756.jpg




সোনালি বালির বিস্তৃত প্রান্তর আর নীল জলরাশির টানে প্রতিবছর বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ভ্রমণ করেন অন্তত ২৫ লাখ পর্যটক। কিন্তু এদের প্রায় সবাই দেশীয়। বিদেশি পর্যটকদের দেখা মেলে হাতেগোনা, যার কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান পর্যন্ত নেই। অথচ বিশ্বের বহু ছোট পর্যটন গন্তব্যও আজ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সমুদ্রসৈকত, সেন্টমার্টিনের প্রবাল সৌন্দর্য, পাহাড়-নদী-সবুজের মিলনমেলা- সবই যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা এক অপরূপ চিত্রকর্ম। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভে গাড়ির গতির সঙ্গে সমান্তরাল ছুটে চলে ঢেউ, বালুচরে লাল কাঁকড়ার নাচন। তবু এই সৌন্দর্যের মাঝে প্রশ্ন থেকে যায়, বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত থাকার পরও পর্যটনের দিক থেকে কেন পিছিয়ে কক্সবাজার?

পর্যটকরা বলছেন, এখানে নানারকমের হয়রানির কারণে হয়তো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরা। অপরিকল্পিত স্থাপনা, ময়লা-আবর্জনা, এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার অভাবকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ।

সুগন্ধা পয়েন্টে ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক হামিদুর রহমান বলেন, 'কিটকটে বসে কীভাবে সমুদ্র উপভোগ করব? প্রথমে হকার আসলে তাকে সরে যেতে বললাম, সে সরে যাওয়ার পর দেখি ভিক্ষুক আসলো; এরপর আসলো ফটোগ্রাফার। আমি আসছি কক্সবাজারে একটু প্রশান্তির জন্য সেখানে এমন অস্বস্তিকর পরিবেশে কে ঘুরতে আসবে?'

একই পয়েন্টে বালিয়াড়িতে অবস্থান করা পর্যটক জসিম উদ্দিন বলেন, 'ঢাকা থেকে ৪টি বাসের টিকিট ১০ হাজার টাকা কেটে কক্সবাজার এসেছি। আবার কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাব ১০ হাজার টাকা খরচ করে। এখন গাড়ি ভাড়া খরচ হলো ২০ হাজার টাকা। কিন্তু ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে কক্সবাজার এসে আমি কি পেলাম, শুধুমাত্র সমুদ্র আর হোটেলের রুমটা। আর সবখানে শুধু হয়রানি আর হয়রানি।'

লাবনী পয়েন্টে আসা পর্যটক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'মালদ্বীপ, থাইল্যান্ডের মতো সৈকত পর্যটনের আদর্শ উদাহরণ কক্সবাজার হতে পারত, কিন্তু এখানে মূল সৈকতটিই এখন বস্তির মতো দেখায়। অপরিকল্পিত স্থাপনা, ময়লা-আবর্জনা, এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার অভাব চোখে পড়ে প্রতিনিয়ত।'

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে এসেছেন রিয়া ও শামীম দম্পতি। ভ্রমণে এসে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছিলেন, বিদেশি পর্যটকরা কেন কম এবং তাদের আকৃষ্ট করতে কি করা দরকার।

শামীম বলেন, 'মানুষের বিনোদনের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হলে ভালো হতো। এখন দিনে সমুদ্রসৈকতের মধ্যে বসে আছি আর রাতে হোটেলে অবস্থান করতে হচ্ছে। এর বাইরে আর কিছুই নেই।'

রিয়া বলেন, 'সমুদ্র গোসল করতে বা হাঁটতে গেলেও অনেকে কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, কেউ কেউ ছবি তোলে বা ভিডিও করে। বিদেশি পর্যটকরা এ রকম পরিবেশে কেন আসবে?'

নিয়মিত দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করা পর্যটকরাও বলছেন, শুধু উন্নতমানের থাকা-খাওয়া আর সমুদ্র থাকাটা জরুরি নয়। পর্যটক আবির আহমেদ বলেন, 'বিদেশি পর্যটকরা হয় তো সংবাদ মাধ্যম বা টিভি চ্যানেল দেখে কক্সবাজার সম্পর্কে ধারণা নেন। বিদেশি পর্যটকরা যখন আসবে তখন প্রকৃত কক্সবাজার দেখা, খাবারের স্বাদ নেয়া এবং আবহাওয়াকে বুঝবে। তখনই কক্সবাজারের বাস্তব চিত্র বিশ্বে ফুটে উঠবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণে।'

আরেক পর্যটক রিয়াজুল আলম বলেন, 'বিদেশিরা দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে কক্সবাজার দেখল। কিন্তু সন্ধ্যার পর তারা কি করবে? রাত্রিকালীন তো কোনো বিনোদন নেই। রাত্রিকালীন জীবন তো একেবারেই অনুপস্থিত। তাহলে কেন কক্সবাজার আসবে বিদেশি পর্যটকরা?'

এমন পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরাও। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নেই সুসংগঠিত কোনো উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণের প্রচারণাও।

কক্সবাজার বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মুখপাত্র আব্দুর রহমান বলেন, 'কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বড় সমস্যা হলো পরিকল্পনা এবং দক্ষ পরিচালকের অভাব। সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দরকার কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য। যেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকে কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয় এবং বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।'

সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, 'প্রতিবেশী দেশ বা বিভিন্ন দেশ পর্যটনকে ব্যবহার করে স্বনির্ভর হচ্ছে। সেখানে কক্সবাজারে বিশাল সম্পদ থাকা স্বত্বেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই বলেই দিন দিন পর্যটনে পিছিয়ে পড়ছে অপার সম্ভাবনার পর্যটন নগরী কক্সবাজার।'

হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, 'সরকারিভাবে ঘোষণা দেয়া দরকার, ব্যবসায়ীরা কক্সবাজারে বিনিয়োগ করেন, নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে যারা বিনিয়োগকারী আছে তারা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করবে। কিন্তু কক্সবাজারে দেখা যায়, যারা বিনিয়োগ করতে আসে তারা সরকারি নানা জটিলতা এবং নিয়ম-কানুনের গ্যাঁড়াকলে পড়ে বিনিয়োগ না করে ফিরে যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক এবং হতাশাজনক। এ জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট যেসব দফতর রয়েছে তারা সম্পূর্ণ দায়ী। এসব সমস্যা যতদিন দূর হবে না, ততদিন কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের কোনো পরিবর্তন আসবে না এবং বিদেশি পর্যটকদের কক্সবাজারমুখী করা যাবে না।'

পর্যটন বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, উপযুক্ত পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক প্রচারণা, পর্যটকবান্ধব পরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে কক্সবাজারের অপার সম্ভাবনা বাস্তব রূপ পাবে না। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত হয়তো মানচিত্রে থাকবে, কিন্তু বিশ্ববাসীর ভ্রমণ তালিকায় স্থান পাবে না। সময়।