‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক’ ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে আজ মুখর ও প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পবিত্র আরাফার পাহাড় ঘেরা ময়দান। পালিত হয় এ বছরের পবিত্র হজ। তবে হজের আনুষ্ঠানিকতা চলবে আরও কয়েক দিন। এর মধ্যে এবার কতজন মুসলিম হজ পালন করেছেন সেই তথ্য জানিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) স্থানীয় সময় বেলা ১২টার পর (বাংলাদেশ সময় তিনটার পর) ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরায় ১৪৪৬ হিজরি সনের হজের খুতবা দেন সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেম ও বিচারবিদ শায়খ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ। এ সময় খুতবার অনুবাদ বাংলাসহ বিশ্বের ৩৫টি ভাষায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
হজের খুতবায় বছরের পর বছর ধরে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি মুসলিমদের মুক্তি ও বিজয় কামনা করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা হয়েছে।
পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহকে ঈমান-আমল সংরক্ষণ ও সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির দিকে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়।
জানা গেছে, হজের খুতবার পর এক আজান এবং দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন হাজিরা। মাগরিব পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন। পরে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মাগরিবের নামাজ না পড়ে তারা চলে যাচ্ছেন মুজদালিফায়। সেখানে এক আজান ও দুই ইকামতে মাগরিব ও ইশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন।
মুজদালিফায় রাত কাটিয়ে সেখান থেকে কংকর সংগ্রহ করে হাজিরা আবার মিনার ময়দানে যাবেন। সেখানে শয়তানকে কংকর মারা এবং পশু কোবরানির বিধান পালন করবেন। এ ছাড়া বায়তুল্লাহয় গিয়ে ফরজ তওয়াফও আদায় করবেন তারা। পরে মিনায় এসে আরও দুই দিন অবস্থান এবং টানা দুই দিন শয়তানকে কংকর মারার মাধ্যমে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।
এর আগে, সকাল থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীর আরাফার আদিগন্ত মরু প্রান্তর এক অলৌকিক পুণ্যময় শুভ্রতায় ভরে ওঠে। সফেদ-শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়ের এহরাম পরে অবস্থান নেন লাখ লাখ লাখ হাজি। সবার কণ্ঠে শোভা পায় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ মধুধ্বনি।
এদিকে ইনসাইড দ্য হারামাইন জানিয়েছে, বিশ্বের ১৭১টি দেশ থেকে এবার হজের জন্য নিবন্ধন করেন ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ জন। এর মধ্যে সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ নিবন্ধিত হাজি ছিলেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৪ জন এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হাজির সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ছয় হাজার ৫৭৬ জন।
মোট হাজির মধ্যে ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮৪১ জন পুরুষ ও নারী হাজির সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৯ জন। এই হাজিদের মধ্যে বিমানে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৭ জন ও নৌপথে ৫ হাজার ৯৪ জন সৌদি আরবে গিয়েছেন। এ ছাড়া মাইক্রো, কার ও এ জাতীয় পরিবহনে হজ করতে গিয়েছেন ৬৬ হাজার ৪৬৫ জন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর হজে যেতে নিবন্ধন করেন ৮৭ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজে যেতে নিবন্ধন করেন।
হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ১০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়ে শেষ হবে ১০ জুলাই।আরটিভি