News update
  • Indian MP Warns Bangladesh Faces Rising Lawlessness     |     
  • Law and Order Must Be Ensured Ahead of Polls: Prof Yunus     |     
  • Tough times ahead, everyone must remain united: Tarique Rahman     |     
  • Sirajganj’s luxuriant mustard fields bloom as an oasis of gold     |     
  • Man killed after boat hits sand-laden bulkhead on Padma River     |     

আগামী চার বছরে বাড়তে পারে বৈশ্বিক গড় উষ্ণতা

জলবায়ু 2025-05-28, 3:36pm

baishbik_ussnntaa_thaam-1-c8e4e291ab1418ce052ce79ae1d337491748425002.jpg




পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২০২৫ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়ার আশঙ্কা ৭০ শতাংশ। জাতিসংঘের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)-এর বার্ষিক জলবায়ু প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (২৮ মে) বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সাল ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। তবে আগামী দিনগুলোতেও পৃথিবী অস্বাভাবিক উষ্ণতা বজায় রাখবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডব্লিউএমও-এর উপ-মহাসচিব কো ব্যারেট বলেন, ‘আমরা টানা ১০টি রেকর্ড উষ্ণ বছর পার করলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই প্রতিবেদনে আগামী কয়েক বছরের জন্যও কোনো স্বস্তির ইঙ্গিত নেই। যার অর্থ, এটি আমাদের অর্থনীতি, দৈনন্দিন জীবন, প্রতিবেশ ও গোটা পৃথিবীর ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অধরা

২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য ছিল—বিশ্বের গড় উষ্ণতা প্রাক-শিল্প যুগের (১৮৫০-১৯০০ সাল) চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ রাখা। সম্ভব হলে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির রাখা। জলবায়ুবিদদের অনেকেই মনে করছেন, ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অর্জন এখন আর বাস্তব নয়, কারণ এখনও কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ বাড়ছেই।

যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তৈরি ডব্লিউএমও-এর পূর্বাভাস বলছে, ২০২৫ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকবে। এই বছরগুলোর মধ্যে অন্তত একটি বছর ২০২৪ সালের রেকর্ড উষ্ণতার চেয়েও বেশি উষ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ।

আইরিশ ক্লাইমেট অ্যানালাইসিস ইউনিটের পরিচালক পিটার থর্ন বলেন, ‘আমার ধারণা, আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে এই আশঙ্কা ১০০ শতাংশে পৌঁছে যাবে।’

বিপজ্জনক উষ্ণতায় পৃথিবী

ডব্লিউএমও-এর জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার হিউইট বলেন, বর্তমানে গড় উষ্ণতা ১ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০২৯ সালের মাঝামাঝি বা তার আগেই এটি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। ডব্লিউএমও আরও জানিয়েছে, যদিও সম্ভাবনা মাত্র ১ শতাংশ, তবে আগামী পাঁচ বছরে অন্তত একটি বছর ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উষ্ণ হতে পারে।

জলবায়ুবিদ অ্যাডাম স্কেইফ বলেন, ‘এটি প্রথমবারের মতো আমাদের পূর্বাভাস মডেলে ধরা পড়ল। এটা সত্যিই ভয়ংকর এবং এই আশঙ্কা আরও বাড়বে।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এক দশক আগেও ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম ছিল। কিন্তু তা ঘটেছে ২০২৪ সালে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রতিটি অতিরিক্ত ডিগ্রি তাপমাত্রা তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, খরা, বরফগলন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আরও তীব্র করে তুলছে। এই বছরও বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পাকিস্তানে তীব্র তাপপ্রবাহের পর প্রাণঘাতী ঝড় আঘাত হেনেছে।

জলবায়ুবিদ ফ্রিডেরিকে ওটো বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিপজ্জনক উষ্ণতায় পৌঁছে গেছি। অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, আলজেরিয়া, ভারত, চীন ও ঘানায় প্রাণঘাতী বন্যা ঘটেছে আর কানাডায় ছড়িয়েছে দাবানল। ২০২৫ সালে এসেও কয়লা, তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভর করা পুরোপুরি পাগলামি।’

আর্কটিকে উষ্ণতা ও বৃষ্টির নতুন চিত্র

ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে আর্কটিক অঞ্চলের উষ্ণতা বৈশ্বিক গড় উষ্ণতার চেয়েও দ্রুত হারে বাড়বে। ২০২৫ থেকে ২০২৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে বারেন্টস সাগর, বেরিং সাগরসহ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উপসাগরে বরফের পরিমাণ আরও কমবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় আগামী পাঁচ বছর গড়ের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ ছাড়া সাহেল অঞ্চল, উত্তর ইউরোপ, আলাস্কা ও উত্তর সাইবেরিয়ায় গড়ের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে, আর আমাজন এলাকায় গড়ের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ এখন আর দূরের কোনো শঙ্কা নয়, বর্তমানের বাস্তবতা। যদি কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে সময়ের সঙ্গে প্রতিটি বছর আরও উষ্ণ, আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।