
শীত মানেই নানা সবজির সমাহার। এসব সবজিতে যেমন আছে বৈচিত্র্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরা। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে শীতকালে এই সবজিগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন, যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। গাজরের ভিটামিন সি, লুটেইন, জেক্সানথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখ ভালো রাখতে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া গাজরে ক্যালরি কম ও ফাইবার বেশি থাকায় এটি ওজন কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে, কোলেস্টেরল কমাতে ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি কপিজাতীয় বা ক্রুসিফেরাস সবজিতে গ্লুকোসিনোলেট ও কার্বন ৩ ইন্ডোল নামে দুটি যৌগ রয়েছে, যা বিভিন্ন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এবং নারীদের ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
এই সবজিগুলোর ভিটামিন সি রোগপ্রতিরোধে ও আয়রন শোষণে সাহায্য করে, এবং ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন বিটা-ক্যারোটিন (যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়), ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, লাইকোপেন ইত্যাদি। এগুলো হৃদরোগ, চোখের রোগ, কিছু ক্যানসার, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।
টমেটোতে ভিটামিন কে ও পটাশিয়ামও রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, রক্ত জমাট বাঁধা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে; ১ কাপ টমেটোর রসে ৫৩৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে।
শিম প্রোটিনের উৎস, যা পেশি গঠনে ও শীতে রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। শিমে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। শিমে থাকা পটাশিয়াম, ফোলেট ও কপার রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মটরশুঁটিতে ক্যালরি কম ও ফ্যাট কম থাকায় এটি ওজন কমাতে এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য উপকারী। এর ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন বি৬, ফোলেট ও পটাশিয়াম হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোলেস্টেরল হ্রাস ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এতে পলিফেনাল থাকে, যা পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
বিটে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার খনিজ, ভিটামিন, নাইট্রেট বেটালাইন, ফাইবার ও ফোলেট। এগুলো রক্তচাপ কমাতে, রক্তস্বল্পতা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
পালংশাকে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি কম। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, আয়রন ও ক্যালসিয়াম, ফোলেট শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশে, জন্মগত ত্রুটি ও রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। যাদের থাইরয়েডের সমস্যা বা গলগণ্ড আছে, যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান এবং আইবিএসের সমস্যা আছে, তারা অতিরিক্ত ক্রুসিফেরাস সবজি খাবেন না। বেশি পরিমাণে গাজরের রস পান করলে শিশুদের দাঁতের ক্ষয় ও ত্বক হলুদ হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত রান্না করা গাজর খাবেন না। যাদের অ্যাসিডিটি, জিইআরডি, আইবিএস, কিডনিতে পাথর সমস্যা, দীর্ঘদিন আর্থ্রাইটিস বা প্রদাহজনিত সমস্যা আছে, তারা টমেটো বেশি খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
থাইরয়েড, কিডনিতে পাথর বা কিডনিজনিত সমস্যা থাকলে পালংশাক এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া কিডনির সমস্যা বা ইউরিক অ্যাসিড বাড়তি থাকলে মটরশুঁটি কম খাবেন কিংবা পুরোপুরি এড়িয়ে যাবেন।