
Roundtable meeting held at Lalpur, Natore to prevent adulteration of date molasses.
রোববার নাটোর জেলার লালপুরে ফুড প্যালেসে সকাল ১১টায় সিসিডিবি সিপিআরপি ঈশ্বরদী প্রকল্পের আওতাধীন নারীদের 'লালপুর উপজেলা নেটওয়ার্ক' শীতকালীন গুড়ে ভেজাল প্রতিরোধে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে। উক্ত বৈঠকে সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নেটওয়ার্ক এর সভানেত্রী মোছা পারুল আক্তার, প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মো: মোখলেসুর রহমান, প্রভাষক, বাউসা কলেজ, বাঘা, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মো: শহীদুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক, রঘুনাথপুর হাই স্কুল, বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে শামীমা লাইজু নীলা, প্রেসিডেন্ট, কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, নাটোর জেলা, আইনজীবি শফিকুর রহমান, প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় কৃষি আন্দোলন এবং ব্রাত্য আমিন, কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য, প্রাকৃত হাট।
সভায় বক্তারা বলেন, পূর্বে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার গাছ থেকে রস আরোহণ করার কারণে ভালো ও ভেজালমুক্ত খেজুর গুড় তৈরি করা সহজলভ্য ছিলো। কিন্ত গুড়ের ব্যাপক চাহিদা ও লাভ করার আশায় এখন প্রতিদিনই গাছ থেকে রস আরোহণ চলে। তাতে রস হয়না, চিনি মিশ্রণে গুড় তৈরি হয়। এবং বিপুল পরিমাণে হাইড্রোজ, ফিটকিরি, চিটাগুড় (যা গোখাদ্য হিসেবে এলসি করে আমদানি করা হয়) এবং ডাইং এ ব্যবহৃত কেমিক্যাল রঙ ব্যবহার করা হয়৷
উক্ত সভায় গুড় উৎপাদনকারী মেরিনা বেগম এবং গুড় ব্যবসায়ী মতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সুন্দর রঙ এবং মচমচে গুড়ের প্রতি ভোক্তা চাহিদা বেশি। অপরদিকে ভেজালমুক্ত গুড় দেখতে কালো এবং তা মোলায়েম হয়। তাছাড়া ভেজাল গুড় যেখানে বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়, সেখানে ভেজালমুক্ত নিরাপদ গুড় বিক্রি হয় ৪০০ টাকা দিয়ে যা ভোক্তা কিনতে আগ্রহী হয় না। তাই বাধ্য হয়েই অনেকসময় উৎপাদককারীকে ভেজাল গুড় তৈরি করতে হয়।
বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে নাটোর জেলার প্রতিনিধি শামীমা লাইজু নীলা জানান, ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী খাদ্য রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর জন্য অর্থদন্ড প্রদানের রীতি আছে। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা সেই অর্থদন্ড দিয়েই ভেজাল গুড় তৈরিতে সক্রিয় হয়। কিন্ত ভেজাল তৈরি যারা করেন তারা নিজেরাও কোন না কোন পণ্যের ক্রেতা। তাই ভেজাল খাদ্য তৈরির অপরাধ 'নীরব হত্যা' এর মতো অপরাধের সাথেই তুলনাযোগ্য।
আইনজীবি শফিকুর রহমান বলেন যে, কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। আইন দিয়ে ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধ সম্ভব নয়। দেশে উৎপাদনকারীরা নানান আর্থিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। তাই নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের ভেজাল পণ্য তৈরিতে যুক্ত হতে হচ্ছে। ভেজাল পণ্য উৎপাদন প্রতিরোধে তৃণমূল থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কাজ করতে হবে। উৎপাদনকারীর জায়গা থেকে সমস্যা দূর না করলে ভেজাল পণ্য প্রতিরোধ করা যাবে না।
ব্রাত্য আমিন জানান, অত্যধিক বিষ মিশ্রণে এখন জীবাণুদেরও প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেছে, তাই বীষ আর কাজ করছে না। তাই খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নেই।
প্রধান অতিথি মোখলেসুর রহমান জানান, খাদ্য শৃঙ্খলাতে প্রতিটি ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। জনসংযোগ ও জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এমনকি জৈব সারের পাশাপাশি জৈব পদ্ধতি খুঁজতে হবে কীটনাশকের পরিবর্তে। এজন্য প্রচুর গবেষণারও দরকার আছে।
গোলটেবিল আলোচনা শেষে আগামী দিনের লালপুর নাগরিক ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার মাধ্যমে ভেজাল গুড় নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে উপস্থিত সকলে আশা ব্যক্ত করেন। - প্রেস বিজ্ঞপ্তি