News update
  • IG of Police warns against vandalism, orders arrest     |     
  • NBR to chase TIN holders who fail to submit tax returns     |     
  • ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)-এর পরিচালনা পরিষদের ১৭তম সভা অনুষ্ঠিত     |     
  • Tens of millions at risk of hunger as funding crisis spirals     |     
  • Yunus Urges Trump to Delay New Tariffs by Three Months     |     

প্রত্যাবাসনের খবরে রোহিঙ্গাশিবিরে খুশির আভা

খবর 2025-04-05, 8:19am

reetrete-319db86761bd2480599d56fd06ebfe651743819577.jpg




বারবার মুখ থুবড়ে পড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন আশার আলো। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া তালিকাভুক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে আছে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমানকে এ কথা জানিয়েছেন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চলমান বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বৈঠক করেন তারা। যা প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সম্মতিকে বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য, ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নিরাপত্তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের কোথায় ফিরিয়ে নিবে এটি মিয়ানমারকে পরিষ্কার করে বলতে হবে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

প্রায় সাড়ে সাত বছর আগে, ২০১৭ সালে মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। ধারণা ছিল, পরিস্থিতি শান্ত হলে এক পর্যায়ে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে। কিন্তু সেই মানবিকতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে নানা সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১৩ লাখের বেশি, যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে এ রোহিঙ্গারা আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্য আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে দুদেশের মধ্যে চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এতে বাংলাদেশের ওপর এই বোঝা কেবল বেড়েছে।

তবে গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ছিলেন। তারা এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন। বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে নতুন প্রত্যাশার কথা জানান এবং রোহিঙ্গাদের পক্ষে নিজের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন।

একই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আশার কথা শোনান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে, আগামী রোজার ঈদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে স্বজনদের সঙ্গে উদযাপন করতে পারবেন। এই বক্তব্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গারাও জানান, তারা নিজ দেশে ফিরতে আগ্রহী এবং জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেন যেন তাদের ফেরার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়।

অবশেষে জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির সফরের মাস না পেরুতেই বাংলাদেশ থেকে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। আর চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে আছে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। এমন খবরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। বলছেন, এটা বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যাবাসনে আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে। ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে এবং ৭০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে ইতিবাচক দিক সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কূটনৈতিক সফলতা। সুতরাং প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার সরকার আরও বিস্তারিত জানায় যে, রোহিঙ্গাদের কোথায় তাদের রাখা হবে, আরাকানের মংডু কিংবা বুচিদংয়ে করবে নাকি অন্য জায়গা করবে এটিও মিয়ানমারকে পরিষ্কার করে বলতে হবে।’

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন জানিয়েছে, প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের ঘুমধুমের ট্রানজিট সেন্টার। তালিকা হাতে আসলেই পরিবারগুলোকে শনাক্তের পর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন করা হবে।

কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘প্রথমত আমাদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য, খুবই ইতিবাচক এবং আশাব্যঞ্জক সংবাদ। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আমরা প্রস্তুত আছি। প্রত্যাবাসন সেন্টার অনেক আগেই করা হয়েছে। তালিকা হাতে আসলেই পরিবারগুলোকে শনাক্তের পর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে। তবে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতাদের দাবি, নিরাপত্তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের কোথায় ফিরিয়ে নিবে এটি মিয়ানমারকে পরিষ্কার করে বলতে হবে।’

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব কে নেবে। মিন অং হ্লাইং আর্জেন্টিনার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ব্যক্তি এবং আরাকান তার হাত ছাড়া হয়ে গেছে। আমরা ফেরত গেলে তো আরাকানে যাব। কিন্তু জান্তা প্রধান আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে? এই কথা এখনো পরিষ্কার করে বলেনি।’

মোহাম্মদ জোবায়ের আরও বলেন, ‘আমরা চাই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান। এক্ষেত্রে জান্তা প্রধান পরিষ্কার করে যদি রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা নিরাপদ জোন করে দেয়া হবে বিশ্ববাসীকে জানাতো তাহলে অন্তর থেকে খুশি হতাম।’

বাংলাদেশ ২০১৮-২০২০ সালে ছয় ধাপে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের তালিকা দেয়। সেই তালিকায় থাকা ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মিয়ানমার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত যাওয়ার যোগ্য বলে শনাক্ত করেছে।  সময় সংবাদ