News update
  • Elderly Rohingya killed, two hurt in stampede at iftar crowd     |     
  • Conflict, hunger, poverty impede children's early growth: Türk     |     
  • Dhaka’s air quality ‘unhealthy’ Friday morning     |     
  • Guterres to urge more humanitarian assistance for Rohingyas     |     
  • Iran, US tensions up as Trump sends letter to Khamenei      |     

ক্যাম্প জীবনের অবসান চান রোহিঙ্গারা

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2025-03-14, 7:36am

8ab75d3b7333ce7cef5623735629c78125fb8b0647142bc3-6b9fb28cf7a393855c08135bf5153adf1741916181.jpg




রোহিঙ্গা সংকটের ৮ বছর চলছে; কিন্তু এখনও একজনকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। এ অবস্থায় জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার সফর রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বলছেন, নিজ ভিটায় নিরাপদে ফেরার দাবি জানাবেন তারা। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারও আশা করছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সফরের মাধ্যমে রাখাইনেই স্বস্তি ফিরবে; সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদেরও স্বদেশে ফেরার পথ সুগম হবে।

কক্সবাজারের উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ হারেজ (২৬)। প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ৪ সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে। ক্যাম্পে মানবেতর দিন কাটালেও মিয়ানমারে তিনি ছিলেন রাজার হালে। জমি-জমা তো বটেই; ছিল গোয়াল ভরা গরু-মহিষ-ছাগলও। হারেজ এখন ফিরতে চান সেই জীবনে, চান নিজ ভিটায় ফিরতে।

মোহাম্মদ হারেজ বলেন, ‘বাচ্চারা খেলবে এরকম একটা মাঠ নেই, ভালো একটা রাস্তা পর্যন্ত নেই কোথাও। ক্যাম্পের জীবন আমাদের একটুও ভালো লাগে না। নিজ দেশে আমাদের বড় জায়গা ছিল, ঘর বাড়ি ছিল। ছোট একটা ঝুপড়ি ঘরে আমাদের থাকতে হচ্ছে এখানে। সামনে গ্রীষ্মকাল শুরু হতে যাচ্ছে। গরমের কারণে আমরা ঘরের ভেতর থাকতে পারি না। আবার বর্ষাকালে ঘরের ভেতর পানি ঢুকে যায়। আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই। শরণার্থী হয়ে এই দেশে আমরা আর থাকতে চাই না। এই দেশে অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করে আয় করার সুযোগও আমাদের নেই। সরকারি সহায়তা নিয়ে আমদের জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। এরকম জীবন আমরা আর চাই না, আমরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’

শুধু হারেজ নন; একই ক্যাম্পের বাসিন্দা খতিজা এবং ইমান আলীও (৮৮) চান ক্যাম্পের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি।

ইমান আলী বলেন, ‘ক্যাম্পে আসার পর থেকে বেশিরভাগই সময় অসুস্থ থাকি। নিজ দেশে থাকার সময় ধান চাষ করতাম, পানের বরজসহ বিভিন্ন চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। সেখানে সুখী ছিলাম, আরোগ্য ছিলাম। আর এখানে আসার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’

খতিজা (৬২) বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক সুখী ছিলাম। এখানে খুবই কষ্টে আছি। রোদে পুড়ছি, বৃষ্টিতে ভিজছি। কোথাও কোনো ছায়া নেই যে, গিয়ে একটু আরাম করব। কোনোরকম দিন পার করতে হচ্ছে এখানে। আমাদের দেশে নিজেদের গাছপালা ছিল, চাষাবাদ ছিল। আরাম করার জায়গা ছিল। সেসব কথা মনে পড়লে খুব কান্না পায়।’

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে বলা হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়শিবির। যেখানে বসবাস করছে ১৩ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা। তবে আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার সফর ঘিরে, নতুন করে আশার সঞ্চার তৈরি হয়েছে।

হোসেন আলী (৪৫) বলেন, ‘ক্যাম্পের জীবন আমার একটুও ভালো লাগে না। আমরা চাই আমাদের দেশে ফেরত যাওয়ার মতো সুযোগ সুবিধা করে দেয়া হোক। এই দাবি করব, জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে।’

আরেক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ সব্বির (৬০) বলেন, ‘আমাদের দেশ আরাকানে যেনো আমাদের সুন্দরভাবে ফেরত পাঠানো হয় এটাই আমাদের দাবি। নিজ দেশে যেনো ফেরত যেতে পারি এটাই দাবি আমাদের।’

রোহিঙ্গা যুবক হামিদ আলী (১৭) বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বাংলাদেশের উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে আমাদের চাওয়া আমরা পরদেশে ক্যাম্পে থাকতে চাই না আর। আমাদের যাতে আমাদের দেশ আরাকানে সুন্দরভাবে ফেরত পাঠানো হয়। বাংলাদেশে আমরা আর থাকতে চাই না।’

মোহাম্মদ জোবায়ের (৫০) নামে অপর রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই। এর আগেও কয়েকবার আমাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সেরকম যাতে আর কখনও না হয়। মিয়ানমারে বসবাসরত অন্যান্য নাগরিকদের মতো সকল নিরাপত্তা এবং অধিকার নিয়ে যেনো আমরা দেশে ফেরত যেতে পারি। নিজেদের জায়গা জমি যেনো আমরা ফেরত পাই। জাতিসংঘ প্রধান এবং ড. ইউনূসের কাছে এগুলো আমাদের আবেদন থাকবে।’

এদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের আশা, গুরুত্বপূর্ণ এই সফর রাখাইনে স্বস্তি ফেরাবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমে ফেরাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘উখিয়ার বর্ধিত ২০ নম্বর ক্যাম্পে জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলেছে। বাংলাদেশের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের জন্যও তো অবশ্যই। এটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে বিশ্ব সম্প্রদায় পাশে আছে এবং বাংলাদেশ যে তাদের পাশে রয়েছে এটি প্রমাণিত হচ্ছে। এটি ঐতিহাসিক একটি বড় ঘটনা।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর হবে ঐতিহাসিক। এই সফরে আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আছে এবং তারা স্বদেশে ফিরবে এমন বার্তা দেবে।’

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। যার মধ্যে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৫ হাজার ৫২০ জন। পরিবার রয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ২৭৪টি। আশ্রিতদের মধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু, ৪৪ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ৪ শতাংশ বয়স্ক রয়েছে। যার মধ্যে ৪৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ শতাংশ নারী। আর প্রতিবছর ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করে।

তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৭-৭৮ সালে ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে, যার মধ্যে এক লাখ ৯০ হাজার মিয়ানমারে ফিরে যায়। এরপর ১৯৯১ সালে দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন অনুপ্রবেশ করে, যার মধ্যে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন মিয়ানমারে ফিরে যায়। ২০১২ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। তারপর ২০১৭ সালে আট লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। আর ২০২৪ সালে ৬৪ হাজার ৭১৮ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। সময়।