News update
  • BSEC Chairman’s resignation urged to stabilise stock market     |     
  • Rain, thundershowers likely over 8 divisions: BMD     |     
  • First freight train leaves Mongla carrying molasses     |     
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     
  • One killed over loud music row at wedding party in Natore     |     

ছাত্রদের নতুন দল গঠনের শেষ পর্যায়েও পদ-পদবি নিয়ে সংকট কাটেনি

বিবিসি নিউজ বাংলা খবর 2025-02-23, 1:39pm

rwtewrqwr-7aef0b520b602a0138c761b24a4903051740297213.jpg




গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়া অনেকটাই থমকে আছে দলীয় পদ-পদবীর প্রশ্নে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন নানা আলোচনা ও বিতর্কের পরও সংকট যে কাটেনি, তা আবারো স্পষ্ট হয়েছে শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক যুগ্ম আহ্বায়কের ফেসবুক পোস্টের পর।

শনিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ।

সেখানে তিনি লিখেছেন, "জাতীয় নাগরিক কমিটিতে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই প্রোপার প্রসেস এবং ট্রান্সপারেন্সির অভাব আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা যেন নতুন পার্টিতে না থাকে, সেজন্য নতুন রাজনৈতিক দলের গঠন প্রক্রিয়া এবং নেতৃত্ব নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি।"

এ নিয়ে মি. জুনায়েদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে একটা পক্ষ ফোকাস দিতে চাচ্ছে অভ্যুত্থানের কিছু নেতাকে। আমরা বলছি তারাই আসুক, কিন্তু সিস্টেমটা ক্লিয়ার হোক। একটা ডেমোক্রেটিক সিস্টেম হোক।"

এ মাসের শুরু থেকেই ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে নানা আলোচনা তৈরি হয়। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নতুন এই রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

এ নিয়ে মি. ইসলামের সাথে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "পদত্যাগ ও দল গঠন নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।"

দলের নাম, পদ নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও প্রাথমিকভাবে আগামী বুধবার (২৬শে ফেব্রুয়ারি) ছাত্রদের নতুন এই রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে এমন আভাস দিয়েছেন নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতারা।

প্রাথমিকভাবে ছয়টি শীর্ষ পদ নিয়ে আলোচনা ও এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক শীর্ষ নেতা। যদিও এটিকে সংকট হিসেবে দেখছে না নাগরিক কমিটি।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমাদের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২৬ তারিখ আমরা করবো। এটা এখন পর্যন্ত ঠিক আছে। তবে দলের নেতৃত্বে কারা থাকবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।"

দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০টি আসন এবং পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার টার্গেট নিয়েই রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা শুরু করতে চান তারা।

পদ নিয়ে নানা জটিলতা

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে গত দুই মাসে নানা আলোচনা তৈরি হয়।

যাত্রা শুরুর আগেই দলের শীর্ষ পদের দাবি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।

এ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মধ্যে চারটি সক্রিয় বলয়ও স্পষ্ট হয়। দল গঠনের আগে পদ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ তৈরির পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সদস্য গত রোববার এ নিয়ে ফেসবুকে কিছু পোস্টও দেন।

নাগরিক কমিটির একাধিক শীর্ষ নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়বক পদে নাহিদ ইসলামের বিষয়টি নিয়ে সবাই একমত হলেও বাকি পদগুলো নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়।

এই সংকট সমাধানে শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও নেয়া হয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে।

শীর্ষ পদের সংখ্যা চারটি থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে সংকট কাটেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা আলী আহসান জুনায়েদ শনিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া পোস্টে আরও লিখেছেন, "দুঃখজনকভাবে, বর্তমানে যেভাবে এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গঠন হচ্ছে, তা গণতান্ত্রিক এবং ইনক্লুসিভ হচ্ছে না।"

"এক্ষেত্রে কে কোন পদে আছে সে সংক্রান্ত আলোচনা অবান্তর। বরং যোগ্য যে কেউ যেন তার পছন্দের পদে যেতে পারে এবং এই যোগ্যতার পরিমাপক কী সেটা নিয়েই আমরা আলোচনা করে আসছি। এই সমস্যাটা সমাধান করাই এখন আমাদের প্রধান ও মূল লক্ষ্য।"

যদিও এর আগে নাগরিক কমিটির একাধিক শীর্ষ নেতা বিবিসি বাংলাকে জানান, প্রথমে চারটি শীর্ষ পদ রাখার ব্যাপারে দলের ভেতর আলোচনা ছিল।

কিন্তু পদ নিয়ে সাবেক শিবির নেতা ও কয়েকটি গ্রুপের আপত্তির পর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব দুটি নতুন পদ তৈরি করে শীর্ষ ছয়টি পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় তাদের বৈঠকে।

সেখানে সাবেক শিবির নেতা মি. জুনায়েদকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদ দিয়ে সমঝোতার সিদ্ধান্তও হয় বলে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত দু'জন নেতা বিবিসি বাংলাকে জানান।

তবে আলী আহসান জুনায়েদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, পদ নিয়ে সংকটের চেয়ে বর্তমানে বড় সংকট ও জটিলতা তৈরি হয়েছে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে।

মি. জুনায়েদ বলেন, "দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটা ফ্রেম করা হয়েছে এমনভাবে যে এটা একটা পদের লড়াই। কিন্ত আসলে এটা ছিল একটা সিস্টেমেটিক্যালি ডেভেলপমেন্টের লড়াই।"

এরই মধ্যে গত কয়েক দিনে কয়েক দফা সমঝোতা বৈঠকেও কি সংকটের সমাধান হয়নি?

এমন প্রশ্নে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এখানে একক কোনো লিডারশিপ থাকবে না। সেটা অটোক্রেটিক হয়ে যাবে। এখানে লিডারশিপ বেশি হয়ে গেছে। সবচেয়ে যোগ্য যে তার হাতেই দায়িত্ব দেয়া হবে।"

শীর্ষ পদে কারা আসছেন?

জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক বলয় থেকে সংগঠনটিতে যোগ দিয়েছেন অনেকেই।

তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্বের এক ধরনের প্রতিযোগিতাও দেখা যাচ্ছে।

দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন প্রাথমিকভাবে চারটি পদের বিষয়ে তারা অনেকটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সেটি নিয়ে এখনও দলের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চলছে বলেও একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত একেবারেই চূড়ান্ত।

তবে সদস্য সচিব পদে দলের বড় একটি অংশ সায় দিয়েছে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের বিষয়ে।

তবে নাগরিক কমিটির একজন শীর্ষ নেতা জানান, বর্তমান মুখ্য সংগঠন সারজিস আলমেরও এই পদটি নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। যে কারণে সংকট পুরোপুরি কাটেনি।

তবে শেষ পর্যন্ত সারজিস আলমকে মুখ্য সংগঠক কিংবা মুখপাত্র হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ ছেড়ে নাগরিক কমিটিতে যোগ দেবেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তবে হাসনাত আব্দুল্লার পদ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

নতুন দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব পদে আলী আহসান জুনায়েদ, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সামান্তা শারমিন কিংবা আরিফুল ইসলাম আদীবের নামও আসছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ ছেড়ে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি কোন পদে আসতে পারেন সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে।

যদিও বর্তমান আহ্বায়ক মি. পাটওয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "কোন পদে কারা আসবেন, শীর্ষ পদের সংখ্যা কত হবে এখনও সেটি নির্ধারণ করি নাই আমরা। শিগগিরই হয়তো এই সিদ্ধান্ত হবে সবার মতামতের ভিত্তিতে।"

চূড়ান্ত হয়নি নাম ও ঘোষণাপত্র

চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার কথা থাকলেও এখনও রাজনৈতিক দলের নাম চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হয়নি ঘোষণাপত্রও।

গত মাসে এ নিয়ে দেশের নাগরিকদের মতামত চেয়ে অনলাইন ও অফলাইনে মতামত চাওয়া হয়।

নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ মতামত এসেছে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম নিয়ে।

নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বিবিসি বাংলাকে বলেন, "নামের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত ঘোষণাপত্রের জন্য কাজ করছে একটা টিম। ঘোষণাপত্র শিগগিরই তৈরি হবে।"

তিনি জানান, দলের নাম হিসেবে যে সব মতামত আসছে, তার মধ্যে বেশি আলোচনায় রয়েছে- 'বিপ্লবী পার্টি', 'জনতা পার্টি', 'ছাত্র জনতা আন্দোলন', 'জাস্টিস পার্টি', 'ইনসাফ পার্টি' এরকম বেশ কিছু নাম।

এসব নাম বেশিরভাগই এসেছে অনলাইন ও অফলাইনে মতামতের ভিত্তিতে।

তবে নামের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। যেদিন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে সেদিনই ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

নাগরিক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, দল ঘোষণার জন্য প্রাথমিকভাবে দু'টি জায়গাকে বাছাই করা হয়েছে। একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আরেকটি মানিক মিয়া এভিনিউ।

তবে দু'টি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগের দিন।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমাদের আয়োজন কেমন হবে সেটির ওপর নির্ভর করছে কোথা থেকে ঘোষণা হবে। এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার ও মানিক মিয়া এভিনিউই আমাদের চিন্তায় আছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।"

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করলেও জাতীয় নাগরিক কমিটি বিলুপ্ত করা হবে না।

যারা রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা পাবেন না, তাদের কেউ কেউ থাকবেন জাতীয় নাগরিক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে।

এদিকে আজ রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রদের নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলেও জানানো হয়েছে।