
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা ছায়ানট ভবনে প্রবেশ করে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ধানমন্ডি মডেল থানার ডিউটি অফিসার মিঠুন সিংহ জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা ধানমণ্ডিতে অবস্থিত ছায়ানট ভবন ভাঙচুর করেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
এর আগে রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ প্রথম আলোর কার্যালয় ও পরে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে ডেইলি স্টার ভবনের ছাদে আটকা পড়েন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা কাজ করেন এবং আটকদের উদ্ধার করেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতেও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। চট্টগ্রামেও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এই ভবনে শিশুদের জন্য নালন্দা বিদ্যালয় ছাড়াও সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও নিয়মিত সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্রে এমন হামলার ঘটনায় দেশের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন টেলিভিশনের লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেছে, ছায়ানট ভবনের ভেতরে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙাচোরা অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে কাচ ভাঙা এবং অগ্নিকাণ্ডের ফলে দেয়াল ও আসবাবপত্রে পোড়া চিহ্ন স্পষ্ট।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, একদল হামলাকারী রাতের কোনো এক সময় ভবনটিতে অতর্কিত প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। হামলাকারীরা ভবনের ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন আসবাবপত্র, দরজা-জানালা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। বর্তমানে ভবন ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কারা এবং কী উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণের কাজও চলছে।