এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচেই দারুণ জয় পেলো বাংলাদেশ। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে ১৬৯ রানের লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারে উইকেট হারালেও সাইফ হাসানের ব্যাটে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ফিফটির পর সাইফ ফিরলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের পথে রাখেন তাওহীদ হৃদয়। চামিরার বলে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে পড়ে হৃদয় বিদায় নেয়ার কিছুক্ষণ পর দ্রুতই বিদায় নেন জাকের ও মেহেদী। এরপর এক রান নিয়ে দলকে জয়ের আনন্দে ভাসান নাসুম আহমেদ। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটের জয়ে সুপার ফোরে শুভ সূচনা করলো বাংলাদেশ।
খাল কেটে কুমির ডেকে আনা বোধহয় একেই বলে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যদি শ্রীলঙ্কা না জিততে পারতো, তাহলে সুপার ফোরে খেলা হতো না বাংলাদেশের। আর সেই শ্রীলঙ্কাকেই সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিলো টাইগাররা।
গ্রুপ পর্বের শুরুটা ভালো হলেও পরের ম্যাচেই এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই বাজেভাবে হেরেছিল বাংলাদেশ। যদিও গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ রানের জয় পায় লাল-সবুজ বাহিনী। সেই জয়ের পর স্বস্তি ছিল না টাইগার শিবিরে, কারণ নেট রানরেটে পিছিয়ে থাকার কারণে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল লিটন-তাসকিনদের। তবে সে ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার জয়ে কোনো হিসেব-নিকেশ ছাড়াই সুপার ফোরে ওঠে বাংলাদেশ।
দুবাই স্টেডিয়ামে টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস। আগে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পায় শ্রীলঙ্কা। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৪ রান যোগ করেন দুই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত এক ফিফটি তুলে নেন দাসুন শানাকা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান তোলে লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৬৯ রান তাড়ায় সাইফ হাসান এবং লিটন দাসের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। এই দুজনের জুটি থেকে আসে ৫৯ রান। তবে পাওয়ার প্লে শেষের পরই ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার হয়ে ফেরেন অধিনায়ক লিটন।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে জুটি বাঁধেন সাইফ হাসান। তাদের জুটি থেকে আসে ৪৫ বলে ৫৪ রান। মূলত এই জুটিই জয়ের ভিত তৈরি করে দেয় বাংলাদেশকে। হাসারাঙ্গার বলে ভেল্লালাগের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাইফ ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৫ বলে ৬১ রান সাইফ।
সাইফ ফিরলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের পথেই রাখেন তাওহীদ হৃদয়। শেষদিকে চামিরার বলে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে পড়ে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ফেরার আগে ২ ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে ৩৭ বলে করেন ৫৮ রান।
শেষদিকে মেহদী হাসান জাকের আলী ফেরেন দ্রুতই। জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার তখন ২ বলে ১ রান। নাসুম ব্যাটিংয়ে নেমে একটি সিঙ্গেল নিয়ে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। ১ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার হয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও দাসুন শানাকা নেন ২টি করে উইকেট। এছাড়া থুসারা ও চামিরা নেন ১টি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তুলতে থাকেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে নিসাঙ্কাকে সাইফ হাসানের ক্যাচ বানান তাসকিন আহমেদ। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ২২ রান।
এর কিছুক্ষণ পরই কুশল মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরত পাঠান শেখ মেহেদী হাসান। সাইফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ৩৪ রান। কামিল মিশারাকে উইকেটে থিতু হতে দেননি মেহেদী। ১১ বলে ৫ রান করা এই ব্যাটারকে সরাসরি বোল্ড আউট করেন ডানহাতি এই স্পিনার।
দারুণ শুরু করা শ্রীলঙ্কা ৬৫ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। সেখান থেকে কুশল পেরেরাকে নিয়ে ছোট একটি জুটি গড়ে তোলেন দাসুন শানাকা। মোস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে কুশল ফিরলে ভাঙে তাদের ২৭ বলে ৩২ রানের জুটি।
এরপর আসালাঙ্কাকে নিয়ে এগোতে থাকেন শানাকা। মোস্তাফিজের করা ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন এই ব্যাটার। পেছন দিকে কিছুটা দৌড়ে গিয়ে ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি শামীম। তার ক্যাচ মিসের মাসুল অবশ্য ভালোভাবেই দিতে হয়েছে টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন শানাকা।
১২ বলে ২১ রান করা আসালাঙ্কা কাটা পড়েন রানআউটে। এরপর ১৯তম ওভারে কামিন্দু মেন্ডিস ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজুর নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া মেহেদী হাসান ২টি ও তাসকিন আহমেদ নেন ১টি উইকেট।