
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে শরিফ ওসমান হাদির জন্ম। ঝালকাঠি জেলার ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চেতনায় গড়ে ওঠা শরিফ ওসমান হাদি, একজন প্রখ্যাত আলেম পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার বাবা মাওলানা আব্দুল হাদি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ মাদ্রাসাশিক্ষক এবং পরিবারের সবাই দ্বীনি শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ওসমান হাদি ছিলেন সবার ছোট। পরিবারের ছোট হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেন ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসায়। যেখানে তিনি তুখোড় মেধাবী ও অসাধারণ বক্তা হিসেবে পরিচিতি পান। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন তুখোড় মেধাবী এবং অসাধারণ বক্তা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার স্পৃহা তাঁর মধ্যে কাজ করত শৈশব থেকেই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে তার প্রিয় মাদ্রাসার স্মৃতিচারণা করেছিলেন।
ওসমান হাদি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমাকে এটা যদি কেউ জিজ্ঞেস করে- আল্লাহ যদি আমাকে আবারও দুনিয়ায় পাঠায়, আমি কয়টা জিনিস চাইব। আমি প্রথমেই বলব,ইন্টার পর্যন্ত যে মাদ্রাসাটায় পড়েছি, সেই মাদ্রাসায় আবার আমি পড়তে চাইব। বাংলাদেশে এটা কেউ চিন্তাও করতে পারবে না যে মাদ্রাসায় রবীন্দ্রনাথের নাটক মঞ্চস্থ হয়। আমি যখন চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখন ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে অনেকবার বিতর্ক, আবৃত্তি, বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এসেছি এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা মিলিয়ে আমি অনেকবার ফার্স্ট হয়েছি।
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এটা শুধু আমি না, ওই প্রতিষ্ঠানের আমার অনেক ছোট ভাই, বন্ধু জাতীয় পর্যায়ের এমন প্রচুর পুরস্কার পেত। আমাদের এমনভাবে কালচারাল নার্সিং হতো রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, জারি, ভাটিয়ালি আমরা গাইতাম। যেহেতু মাদ্রাসা, তাই একমাত্র নৃত্যটা হতো না।
মাদ্রাসার গণ্ডি পেরিয়ে ওসমান হাদি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে (২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ)। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে তিনি প্রাইভেট পড়িয়েছেন, সাইফুর’সসহ বিভিন্ন নামী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার পর শিক্ষকতা ও সমাজসেবায় যুক্ত ছিলেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের আন্দোলনে তার সাহসী নেতৃত্ব ও সক্রিয়তা তাকে তরুণ সমাজের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। হত্যার আগে নিজের জীবনের ঝুঁকির কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে জীবননাশের হুমকি সত্ত্বেও তিনি “ইনসাফের লড়াই থেকে পিছিয়ে যাব না” বলেছিলেন।
ওসমান হাদির জীবন সংগ্রাম, মেধা ও সাহসিকতা তাকে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে একটি উজ্জ্বল স্মৃতি করে রেখে গেছে।