News update
  • Bangladesh's Per Capita Debt Rises Sharply to $483     |     
  • Yunus to Visit UK in June to Boost Bangladesh-UK Ties     |     
  • Over 100 cattle swept away by tidal surge in Munshiganj     |     
  • Economic Growth Is the Wrong Metric for Our Time     |     
  • Preserving Biodiversity Key to Human Survival: UN Warns     |     

ভারত, পাকিস্তান ও ইরান কেন তালেবানকে কাছে টানতে তৎপর?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক কৌশলগত 2025-05-25, 7:05am

d0dff07f071a4d148b612a0e5d4e97cb297d667a238eea2d-934d126c39e2ad10ad35f6492fe872351748135117.jpg




তালেবানের আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসার প্রায় চার বছর হতে চলল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দেশই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেই দেশটিরই ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো।

সম্প্রতি তিনি কাবুলে সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। এরপর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এবং এরপর ইরান ও চীন সফরে যান। বেইজিংয়ে তার আবারও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এরপর গত বুধবার (২১ মে) তিনি পাকিস্তান ও চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন।

উল্লিখিত বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে ক্ষমতাসীন তালেবানের ঐতিহাসিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এমনকি এক সময়ের মিত্র পাকিস্তানের সঙ্গে বর্তমানে সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এমন বাস্তবতা সত্ত্বেও দেশগুলো তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন জাতিসংঘ কিংবা সংস্থাটির কোনো সদস্য রাষ্ট্রই আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি, তখন তালেবানের সঙ্গে দেশগুলোর কূটনৈতিক তৎপরতা প্রমাণ করে যে বৈশ্বিক মঞ্চে আফগানিস্তান আর একঘরে হয়ে নেই।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিয়েও কেন কূটনৈতিকভাবে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে এতটা তৎপর?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা তালেবানের সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের আঞ্চলিক তৎপরতাগুলো বিশ্লেষণ করেছি। আমরা দেখার চেষ্টা করেছি, কেন ভারত, পাকিস্তান ও ইরান সবাই তালেবানের কাবুল দখলের চার বছর পর তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।

সম্প্রতি কার কার সঙ্গে সাক্ষাৎ বা কথা বলেছেন মুত্তাকি? 

আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক যোগাযোগের টাইমলাইন:

১৯ এপ্রিল: পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে কাবুল সফরে যান। সেখানে মুত্তাকি ও অন্যান্য আফগান কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ পাকিস্তানের আফগান শরণার্থী প্রত্যাবাসন ইস্যু, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন।

৬ মে: ইসহাক দার ও মুত্তাকি আবারও কথা বলেন। পরে জানা যায় যে, এটি ছিল পাকিস্তানে ভারতের হামলার ঠিক আগের দিন। এরপর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে চার দিন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের হামলা পাল্টা হামলা চলে। গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করার পর এ সংঘাত শুরু হয়।

১৫ মে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মুত্তাকির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ও পহেলগাম হামলার নিন্দা জানানোয় তালেবানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

১৭ মে: ‘তেহরান ডায়ালগ ফোরাম’-এ অংশগ্রহণ করতে মুত্তাকি ইরানের রাজধানী তেহরানে পৌঁছান। সেখানে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠক করেন।

২১ মে: মুত্তাকি বেইজিং সফর করেন। সেখানে তিনি আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেন। ওই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল, তিন দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। 

কাতারের দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান সুহাইল শাহীন বলেন, ‘তালেবান আজকের আফগানিস্তানের বাস্তবতা। কারণ তারা দেশের সব ভূখণ্ড ও সীমান্তের ওপর নিয়ন্ত্রণ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আঞ্চলিক দেশগুলো এই বাস্তবতা জানে এবং সেই অনুযায়ী তারা ইসলামিক এমিরেটের (আফগানিস্তান) সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ রাখছে; যা আমার দৃষ্টিতে একটি বাস্তববাদী ও যুক্তিসংগত দৃষ্টিভঙ্গি।’ তালেবান আফগানিস্তানকে ইসলামিক এমিরেট নামে সম্বোধন করে।

সুহাইল আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমেই আমরা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে পারি।’ পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, ‘তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া আর দেরি করা উচিত নয়। আমাদের অঞ্চলের নিজস্ব স্বার্থ ও লক্ষ্য আছে, যেগুলো আমাদের প্রতিপালন করা উচিত।’

ভারত যে কারণে তালেবানের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে

এটা একটা অসম্ভব অংশীদারিত্ব। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের প্রথম শাসনামলে ভারত সরকার আফগান গোষ্ঠীটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে অস্বীকার করে এবং তাদের শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি। সেই সময় শুধু পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল।

এক সময় ভারত আফগানিস্তানে সোভিয়েত-সমর্থিত মোহাম্মদ নজিবুল্লাহ সরকারের পক্ষ নিয়েছিল। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর কাবুলে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় ভারত। সেই সময় দেশটি তালেবানকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি প্রক্সি বাহিনী হিসেবে দেখেছিল। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আফগানিস্তানে মস্কোবিরোধী মুজাহিদদের সমর্থন দিয়েছিল। অন্যদিকে তালেবানকে সমর্থন করার বদলে ওই সময় সংগঠনটির বিরোধী জোট ‘নর্দান অ্যালায়েন্স’কে সমর্থন জানায় নয়াদিল্লি।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তালেবান সরকার অপসারিত হওয়ার পর ভারত কাবুলে তার দূতাবাস আবার চালু করে ও আফগানিস্তানের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদারে পরিণত হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, দেশটি অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পানি সরবরাহ প্রকল্পে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করে। তবে তালেবান ও তাদের মিত্র, বিশেষ করে হাক্কানি গোষ্ঠী ভারতের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে বারবার প্রাণঘাতী হামলা চালায়।

এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো–সমর্থিত দুর্নীতিবাজ আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে তালেবান দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে আফগানিস্তানে। এবারও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে দেশটি তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে। প্রথমে এ যোগাযোগ পর্দার অন্তরালে হলেও ক্রমশ তা প্রকাশ্যে হতে শুরু করে। ২০২৩ সালে আফগানিস্তানে ভূমিকম্প হলে ভারত দেশটিতে মানবিক সহায়তাও পাঠায়।

নয়াদিল্লির এমন যোগাযোগ শুরু করার কারণ খুব সোজা। বিশ্লেষকেরা বলেন, এবার ভারত বুঝতে পেরেছে যে আগের মতো তালেবানকে এড়িয়ে চলার অর্থ হবে প্রতিবেশী আফগানিস্তানের ওপর তার প্রভাব রাখার সুযোগকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে ছেড়ে দেয়া।

২০২২ সালের জুনে অর্থাৎ তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ভারত কাবুলে নিজেদের দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং সেটি পরিচালনায় সেখানে ‘প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের’ একটি দল পাঠায়। বিপরীতে ২০২৪ সালের নভেম্বরে তালেবান মুম্বাইয়ে আফগান কনস্যুলেটে একজন ভারপ্রাপ্ত কনসাল নিয়োগ দেয়।

তালেবান প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের মতোই তেহরানও তাদের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সে সময় তালেবানের বিরোধী জোট নর্দান অ্যালায়েন্সকে সমর্থন করে তেহরান, বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে মাজার-ই-শরিফে তালেবান যোদ্ধাদের হাতে কয়েকজন ইরানি কূটনীতিক নিহত হওয়ার পর।

এরপর গত জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ও তালেবান নেতা মুত্তাকি দুজনই এক বৈঠকের জন্য দুবাই যান। এটি ছিল এখন পর্যন্ত নয়াদিল্লি ও তালেবানের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরাসরি সাক্ষাৎ। নয়াদিল্লিভিত্তিক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’–এর উপপরিচালক কবির তানেজা বলেন, ‘কাবুলে যে রাজনৈতিক বাস্তবতাই গড়ে উঠুক না কেন, তা এড়িয়ে যাওয়া ভারতের জন্য কখনোই কোনো বিকল্প ছিল না।’

তানেজা আরও বলেন, ‘তালেবান হচ্ছে বাস্তবতা। যদিও এ ব্যাপারে কেউ (ভারত) খুশি নয়। তবে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর ভারত আফগান জনগণের সঙ্গে সদ্ভাব গড়ে তোলার কয়েক দশকের প্রচেষ্টায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও, তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি।’ 

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘তালেবানের আদর্শিক ঘাঁটি বলে পরিচিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসাটিও ভারতে অবস্থিত।’ তিনি যোগ করেন, ‘কোনো দেশ এবং তার বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বিনাশ করা যায় না; বরং বাস্তবসম্মত ও ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তা মোকাবিলা করতে হয়।’

পাকিস্তানের কী চায়?

১৯৯৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তালেবানের অন্যতম প্রধান সমর্থক ছিল পাকিস্তান। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তালেবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে পাকিস্তানে সহিংস হামলা বেড়েছে।

এসব হামলার জন্য ইসলামাবাদ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দায়ী করছে। পাকিস্তানের দাবি, টিটিপি আফগান ভূখণ্ড থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং তালেবান সরকার তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। অবশ্য এ দাবি নাকচ করে আসছে তালেবান কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’র পটভূমিতে ২০০৭ সালে আবির্ভূত হয় পাকিস্তান তালেবান, যা দীর্ঘদিন ধরে সহিংস বিদ্রোহের মাধ্যমে ইসলামাবাদের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে। যদিও তারা আফগান তালেবান থেকে ভিন্ন, তথাপি আদর্শিকভাবে দুই গোষ্ঠীকেই কাছাকাছি মনে করা হয়।

লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ’-এর পরিচালক রাবিয়া আখতার বলেন, ‘ইসহাক দারের কাবুল সফর ও পরে মুত্তাকির সঙ্গে যোগাযোগকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বড় রকমের পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়; বরং একটি কৌশলগত, অস্থায়ী উষ্ণতা হিসেবে দেখা উচিত।’

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংকট চলাকালে, আফগানিস্তানের ভূখণ্ড পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ব্যবহারের আশঙ্কায় ইসলামাবাদ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে বলে মনে করেন রাবিয়া আখতার। তিনি বলেন, ‘এটা (এ আশঙ্কা) ইসলামাবাদকে তার পশ্চিম সীমান্ত সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে আরও তাড়াহুড়া করতে বাধ্য করেছে।’

এরই মধ্যে চলতি বছরের শুরুতে পাকিস্তানের আফগান শরণার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত- যাদের অনেকেই প্রায় পুরোটা জীবন পাকিস্তানে কাটিয়েছেন- এবং প্রায়শই সীমান্ত বন্ধ রেখে বাণিজ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করাও দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের অন্যতম কারণ। রাবিয়া আখতার বলেন, বিশেষ করে শরণার্থীদের বিষয়টি ভবিষ্যতে দুই দেশের (পাকিস্তান–আফগানিস্তান) সম্পর্ক গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।

‘পাকিস্তান যেখানে নথিহীন আফগানদের ফেরত পাঠাতে চাপ দিচ্ছে, কাবুল তা শাস্তিমূলক আচরণ হিসেবে দেখছে’, বলেন রাবিয়া আখতার। তিনি আরও বলেন, ‘যদি এ সংলাপ (পাকিস্তান ও তালেবান সরকারের) এ ইঙ্গিত দেয় যে উভয় পক্ষই বুঝতে পেরেছে সংঘাত টিকিয়ে রাখা টেকসই সমাধান নয়, বিশেষ করে যখন আঞ্চলিক মেরুকরণ ও অর্থনৈতিক চাপ পরিবর্তিত হচ্ছে, তবে তা একটি ইতিবাচক লক্ষণ।’

তালেবান কর্মকর্তা সুহাইল শাহীন বলেন, ‘কাবুল ইসলামাবাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়। তবে সেটি পারস্পরিক হওয়া উচিত। দোষারোপের খেলা কারও জন্যই উপকারী নয়।’

তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে কী চায় ইরান

তালেবান প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের মতোই তেহরানও তাদের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সে সময় তালেবানের বিরোধী জোট নর্দান অ্যালায়েন্সকে সমর্থন করে তেহরান, বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে মাজার-ই-শরিফে তালেবান যোদ্ধাদের হাতে কয়েকজন ইরানি কূটনীতিক নিহত হওয়ার পর। 

এ ঘটনার জেরে ইরান তার পূর্ব সীমান্তে হাজার হাজার সৈন্য জড়ো করেছিল এবং তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। ৯/১১ পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ইরান নীরবে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে বলে ধারণা করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলা ও নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে তাদের সীমিত সহায়তাও প্রদান করে।

এরপর এখন থেকে প্রায় চার বছর আগে তালেবান আবার দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইরান কাবুলের এ শাসকদের সঙ্গে নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা ও বাণিজ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা জানান।

দোহার তালেবান কার্যালয়ের প্রধান বলেন, অতীতে ইরান ও ভারত দুই দেশই মনে করত, তাদের গোষ্ঠী (তালেবান) ‘পাকিস্তানের প্রভাবাধীন’। এখন তারা জানে, এটি বাস্তব নয়। এই বাস্তবতার ভিত্তিতে তারা একটি নতুন, বাস্তবমুখী ও ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে; যা সবার জন্যই ইতিবাচক।’

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, আমির খান মুত্তাকি ও ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের মধ্যে বৈঠকটি তালেবানকে ‘সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার সম্ভাবনার’ ইঙ্গিত দেয় না। তবে তিনি বলেন, ‘বাস্তবমুখী বিবেচনা’ ইরানকে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগে প্ররোচিত করেছে। কারণ আফগানিস্তানে তাদের ‘মূল স্বার্থ’ জড়িত আছে।

‘নিরাপত্তার দিক থেকে তেহরান আফগানিস্তানে আইএসআইএসের (আইএসআইএল) স্থানীয় শাখাকে দমন করতে মিত্র খুঁজছে। তেহরান আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণেরও চেষ্টা করছে, যা এখন তাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার’, ইব্রাহিম বাহিস আল–জাজিরাকে বলেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে কেরমানে দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলাকে ইরানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ হামলায় অন্তত ৯৪ জন নিহত হন। আফগানিস্তানভিত্তিক আইএসআইএলের শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি) এ হামলার দায় স্বীকার করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএসকেপি তালেবানের শাসনের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কারণ তারা আফগানিস্তানজুড়ে একাধিক আলোচিত হামলা চালিয়েছে। বাহিস আরও বলেন, তেহরানের প্রয়োজন একটি ‘আগ্রহী অংশীদার’, যারা ইরানে অবস্থানরত প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার আফগান শরণার্থী ও হেলমান্দ নদী থেকে প্রবাহিত আন্তসীমান্ত পানির সমস্যা মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে পারে।

২০২৩ সালের মে মাসে এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। এর ফলে সীমান্ত সংঘর্ষে দুই ইরানি সীমান্তরক্ষী ও একজন তালেবান যোদ্ধা নিহত হন। এ সহিংসতা ঘটেছিল প্রয়াত ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সতর্কবার্তার পর। ওই সময় তিনি তালেবানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তারা যেন ১৯৭৩ সালের চুক্তি লঙ্ঘন করে হেলমান্দ নদী থেকে ইরানের পূর্বাঞ্চলে পানির প্রবাহে বাধা না দেয়। আফগানিস্তানের তালেবান শাসকেরা ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তথ্যসূত্র: আল জাজিরার এক্সপ্লোইনার