বিমান বন্দরে নামান পর খালি হাতে বের হয়ে আসেন প্রতারনার শিকার শরীয়তপুরের আলতাফ ও আহসান।
ভাগ্য বদলের আশায় বাড়ির জমি বিক্রি করে ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে পাড়ি জমিয়েছিলেন শরীয়তপুরের চার তরুণ—আলতাফ হোসেন, আহসান উল্লাহ, মিজান ও স্বপন। কিন্তু দালাল ও আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে তারা হারিয়েছেন সবকিছু।
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রতারণার শিকার হয়ে দুই দফা ব্যর্থভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন আলতাফ ও আহসান। অবশেষে জীবন নিয়ে দেশে ফিরলেও তাদের হাতে এখন শুধুই শূন্যতা ও তিক্ত অভিজ্ঞতা।
বুধবার সন্ধ্যায় ইজিপ্টএয়ারের একটি ফ্লাইটে (এমএস-৯৭০) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান এই দুই যুবক। একই ফ্লাইটে আরও প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশি ভুক্তভোগী দেশে ফেরেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারে এখনো অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।
চার যুবকের মধ্যে আলতাফ ও মিজানের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মনুয়ায়, আহসানের বাড়ি আরজীপমে এবং স্বপনের বাড়ি একই উপজেলার অন্য গ্রামে।
ফেরার পর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আলতাফ ও আহসান। চোখের জলে তারা জানান, দালাল হারুন লস্কর ও তার লিবিয়া প্রবাসী ছেলে ইমনের প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছেন তারা। প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৬৪ লাখ টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় প্রতিজনের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা থেকে চেন্নাই হয়ে শ্রীলঙ্কা, সেখান থেকে দুবাই ও মিশর হয়ে তাদের লিবিয়ার বেনগাজিতে পৌঁছানো হয়।
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর চক্রটি তাদের মাফিয়াদের হাতে বিক্রি করে দেয়। আটকে রেখে নির্যাতন চালায় এবং সাগর পথে পাঠানোর জন্য আবারও ২৩ লাখ টাকা আদায় করে। পরে বোটে তুলে পুলিশ ডেকে গ্রেপ্তার করায় এবং মুক্তির জন্য জনপ্রতি আরও তিন লাখ টাকা নেয়।
আলতাফ জানান, এরপর আবার ইমনের মাধ্যমে নতুনভাবে সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, সে জন্য সাত লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। কিন্তু আবারও পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে মুক্তির নামে আরও ১৩ লাখ টাকা আদায় করে।
সবশেষে দেশে ফেরার টিকিটের জন্য দালালের ছেলে ইমন জনপ্রতি ২ লাখ ৫ হাজার টাকা নেয়, যেখানে মূল টিকিট মূল্য ছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।
আহসান উল্লাহ বলেন, “সব টাকা দালাল হারুন লস্করের কাছেই দেওয়া হয়েছে।” তারা জানিয়েছেন, প্রতারণার বিচার ও টাকা ফেরতের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।