News update
  • From DUCSU to JUCSU, Shibir Extends Its Winning Streak     |     
  • Dhaka's air quality in 'moderate' range on Saturday morning     |     
  • Deadly Floods Displace Over 100,000 in South Sudan     |     
  • Nepal has first woman Prime Minister as March elections set     |     
  • 50 Killed as Israel Intensifies Strikes on Gaza City     |     

দুই শালীর গল্প

সাহিত্য 2025-09-13, 10:55pm

womensmental-health-should-get-priority-23e9b8bc136c3a055f1fd903120766de1757782502.jpg

Womens mental health should get priority.



জয়নুল আবেদীন

শালী। শব্দটা শুনলেই মনটা একটু কোমল কোমল হয়ে আসে। শালী-দুলাভাই সম্পর্কটাই একটু ভাবাবেগ, কৌতুক আর হাস্যরসাত্মক সম্পর্ক। বউ রাগ করলে শালা-শালীরাই উদ্যোগী হয়ে একটা দফা রফা বা সমঝোতা করে দেয়। এজন্য নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে—জাম খাওতো কালি, বিয়ে করতো শালী। অর্থাৎ জাম খেলে কালোগুলো দেখেই খেতে হয় আর বিয়ে করলে শালী দেখেই বিয়ে করতে হয়। তবে এই মুহূর্তে যে শালীদের কথা বলা হচ্ছে তারা মোটেই পূর্বে উল্লিখিত কোমল সম্পর্কের শালী নন। আরো দুই জাতের শালী আছে যাদেরকে সুশিক্ষিত-সভ্য-সচেতন-সংস্কৃতিবান মানুষ মাত্রই এড়িয়ে চলেন। এই দুই জাতের শালী হলো অর্থশালী ও ক্ষমতাশালী।

এই দুই শালীকে আমি সারা জীবন ঘৃণা করেছি।

এদের মধ্যে কেউবা শুধু অর্থশালী, কেউবা শুধু ক্ষমতাশালী। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতা এবং অর্থ পরস্পরের পরিপূরক। অর্থশালী হওয়ার পরে একটু চেয়ারম্যান কিংবা সাংসদ হওয়ার বাসনা জাগে। আবার চেয়ারম্যান, মেয়র কিংবা সাংসদ হওয়ার পরেও অর্থশালী হয়েছেন অনেকে—তেমন উদাহরণও নেহায়েত কম নয়। অর্থশালী এবং ক্ষমতাশালী এই উভয় জাতিই প্রচন্ডভাবে সফল। এদের কাছে ন্যায়-অন্যায়, বৈধ-অবৈধ বলে কিছু নেই। যেকোনোভাবে সম্পদ অর্জন করতে পারলেই হলো।

আর যেকোনোভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন করতে পারলেই সফল। অন্তত বঙ্গদেশে একথা শতভাগ প্রযোজ্য।

আমরা সাধারণ মানুষ। আমজনতা—mango people. আমরা ‘সফল’ আর ‘সার্থক’—এই দু’কথার পার্থক্য বুঝি না। আমরা মনে করি যা বায়ান্ন তা-ই তিপ্পান্ন। সফল ব্যক্তিরা সারা জীবন জগৎ-সংসার থেকে সম্পদ কুক্ষিগত করেছে। এরা দু’হাতে নিয়েছে আর সার্থকেরা দু’হাতে জগৎকে দিয়েছেন। জীবনকালেও দিয়েছেন, মরণের পরেও দিচ্ছেন—দেবেন। সফলেরা জীবনকালে জীবিত থাকে—অন্য সকল প্রাণীর মতো। সার্থকেরা মরণের পরেও জীবিত থাকেন। সক্রেটিস জন্মগ্রহণ করেছিলেন হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মের প্রায় ৪৬৯ বছর আগে। অথচ বিশ্ববাসী আজও তাঁকে মন-মন্দিরে স্থাপন করে শ্রদ্ধাবনত মস্তকে স্মরণ করে। সক্রেটিস, অ্যারিস্টোটল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নিউটন, আইনস্টাইন, শেক্সপিয়ার, পিথাগোরাস, কনফুসিয়াস, মেনসিয়াস, মহাত্মা গান্ধী, গরীব নেওয়াজ, লালন ফকির, হাসান রাজা এঁরা সবাই এ গোত্রের—এঁরা সবাই সার্থক।

এঁরা মরণের পরেও জীবিত আছেন। এঁরাই গুহাবাসী, অরণ্যচারী, আরণ্যক বর্বর মানুষগুলোকে নেতৃত্ব দিয়ে সভ্যতার সুমেরু শিখর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। এঁরা সার্থক। এঁরা মরণের পরেও মানুষকে পথের দিশা দিয়ে যাচ্ছেন। এরা হলেন কীর্তিমান আর কীর্তিমানের মৃত্যু নাই। মৃত্যুর বাবার সাধ্য নাই এঁদের কীর্তির ত্রিসীমানার মধ্যে প্রবেশ করে।

আর ক্ষমতাশালী, অর্থশালী মানুষগুলো থাকে পরশ্রীকাতর, পরশ্বাপহরণকারী এবং হিংস্র। তাই সৎ জ্ঞানের অধিকারী স্বশিক্ষিত-সুশিক্ষিত-সত্যসন্ধানী-সজ্জন সযত্নে এড়িয়ে চলেন এই দুই শালীকে।

লেখক: সিনিয়র প্রভাষক, ইংরেজি, মাইলস্টোন কলেজ উত্তরা, ঢাকা।