News update
  • Public awareness campaign before fuel loading at Rooppur NPP     |     
  • Chief Adviser Dr Yunus pays homage to martyred intellectuals     |     
  • Martyred Intellectuals Day: A Nation’s Loss and Resolve     |     
  • EC seeks enhanced security for CEC, ECs, election officials     |     
  • Humanoid robots take center stage at Silicon Valley summit, but skepticism remains     |     

মাথার চুল ঝরে পড়া কি থামানো সম্ভব?

বিবিসি বাংলা স্বাস্থ্য 2025-04-21, 9:00am

retrt43534-0120763aaddace35b41b2426045aa9911745204419.jpg




চুল পড়া যে কারও জন্যই সমস্যায় পরিণত হতে পারে – তা সে যে নারী বা পুরুষ, কম বয়সী বা প্রবীণ অথবা যে কোনো জাতিগোষ্ঠীরই হোক না কেন।

জেনেটিক (বংশগত) কারণ, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বার্ধক্য এমনকি জীবনযাত্রার ধরনসহ নানা কারণে চুল পড়তে পারে।

চুল পড়ার কারণ এবং সমাধান খুঁজে বের করতে আমরা কথা বলেছি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ট্রাইকোলজিস্ট এনিটান আগিডির সঙ্গে।

তার বিভিন্ন ধরনের ক্লায়েন্ট থাকলেও তিনি বিশেষভাবে আফ্রো-টেক্সচার (সাধারণত আফ্রিকান মানুষদের মাথায় কালো ও কোঁকড়ানো যে ধরনের চুল থাকে) চুলবিশিষ্ট নারীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করেন।

আগিডি বলেন, "চুল পড়া থেকে কেউই রেহাই পায় না। এমনকি আমি, যে কিনা চুল নিয়ে অনেক কিছু জানি, এই আমাকেও অতীতে চুল পড়া সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।"

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্নাল ডার্মাটোলজিক সার্জারির তথ্যমতে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ১৬ শতাংশ পুরুষ চুল পড়ার শিকার হন।

ত্রিশ থেকে ৩৯ বছর বয়সে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। আর ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর অর্ধেকের বেশি পুরুষ চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন।

চিকিৎসা পরিভাষায় চুল পড়াকে বলা হয় অ্যালোপেশিয়া। পুরুষদের মধ্যে চুল পড়ার সমস্যাটি বেশি প্রাধান্য পেলেও নারীদের মধ্যেও চুল পড়া সাধারণ একটি বিষয়।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের তথ্যমতে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন।

অল্প বয়সের চুল পড়া বন্ধ করা যায়?

এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আঁচল পান্থ বলছেন, প্রথম ধাপে যা করতে হবে তা হলো একজন পেশাদার বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে সঠিক রোগ নির্ণয় করা। এতে করে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন।

"চুল ভালোভাবে বৃদ্ধির জন্যে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার অত্যন্ত জরুরি", বলেন তিনি।

"যদি কোনো ধরনের পুষ্টির ঘাটতি থাকে, তাহলে আগে সেটা ঠিক করতে হবে।"

অনেকেই চুল পড়ার বিষয়টি বুঝতে পারার সাথে সাথেই মিনোক্সিডিল বা ক্যাফেইনযুক্ত বিভিন্ন ক্রিম মাথায় ব্যবহার করতে শুরু করেন।

মিনোক্সিডিল সাধারণত লিকুইড বা ফোম আকারে ব্যবহৃত হয়। এটি চুলের গোড়ায় রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে চুল বেশি দিন ধরে বৃদ্ধি পেতে পারে।

তবে ডা. পান্থ সতর্ক করে বলেন, মিনোক্সিডিল "চুল পাতলা হওয়া কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু এতে নতুন চুল গজাবে না।"

বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে হয় চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে কেটোকোনাজল ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্যানড্রাফ বা খুশকি প্রতিরোধেও এটি কার্যকর – কারণ খুশকি থেকে তৈরি হওয়া ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।

মিনোক্সিডিলের চেয়ে আলাদা কেটোকোনাজল একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ, যা মূলত স্কাল্প বা মাথার ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশনের (ছত্রাকের সংক্রমণ) চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

কিছু গবেষণা বলছে, কেটোকোনাজল ডিএইচটি হরমোনের মাত্রা কমাতে পারে, যা চুল পড়ার সঙ্গে জড়িত।

ডা. পান্থ আরও বলেন, "অনেকেই ভাবেন যে চুল পড়তে শুরু করলে চিকিৎসা নিলেই চুল গজাবে, তারপর আর কিছু করার দরকার নেই – কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়। চুল পড়া রোধ করা হলো কেবল একটি দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার।"

জীবনধারার পরিবর্তন

নিজের চুলের ধরন সম্পর্কে জানা জরুরি।

ট্রাইকোলজিস্ট (চুল ও মাথার ত্বক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ) এনিটান আগিডি বিশেষত আফ্রো স্টাইলের চুল নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, শুরুর দিকে চুল পড়ার জন্য কিছু হেয়ারস্টাইল, যেমন টাইট বা ভারী বেণী এবং হিট স্টাইলিং (চুলে আয়রন বা তাপ প্রয়োগ করে যেসব স্টাইল করা হয়) দায়ী হতে পারে।

"স্টাইলিং বোঝা জরুরি। চুলকে উপভোগ করুন। কিন্তু ভারী বা খুব টাইট করে চুল বাঁধলে তা চুলের গোড়ায় প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে", বলেন তিনি।

চুলের গোড়াই মূলত চুল গজানোর সঙ্গে সম্পর্কিত। এর পাশাপাশি মাথার ত্বকে ক্ষত নিরাময় ও নতুন করে চামড়া গজানোর কাজও এখানেই হয়।

"অতিরিক্ত স্টাইলিং করার কারণে ট্র্যাকশন অ্যালোপেশিয়া এবং ফ্রন্টাল ফাইব্রোসিং অ্যালোপেশিয়া – একসঙ্গে এই দুই ধরনের চুল পড়া ক্লায়েন্টও আমি দেখেছি।"

ধূমপান, মদ্যপান, চাপ এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব চুল পড়া আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

ডা. আঁচল পান্থ বলছেন, ধূমপান ভাসোকন্সট্রিকশন নামের একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যা রক্তনালিকে সংকুচিত করে দেয়। ফলে মাথার ত্বকসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, যা চুল পড়ার অন্যতম কারণ।

চুল বা মাথার ত্বক ভালোভাবে না ধুলেও চুল পড়া বাড়তে পারে। আপনি এটা খেয়াল করতে পারেন যদি চুলে শ্যাম্পু না করেও গোসলের সময় দেখেন যে চুল পড়ে যাচ্ছে– এটাই এর লক্ষণ।

এনিয়ে ডা. পান্থের পরামর্শ হলো, মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে প্রতিদিন বা একদিন পরপর চুল ধুয়ে ফেলুন।

আপনার মাথার ত্বক যদি স্বাভাবিক বা শুষ্ক হয় তবে সপ্তাহে অন্তত তিনবার চুল ধোয়া উচিত।

চুল পড়ার সহজ সমাধান কি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট?

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট একটি কসমেটিক প্রক্রিয়া যেখানে সার্জারি যুক্ত থাকে। অনেকেই নিজের চেহারা বা বাহ্যিক দিক নিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে এটি করেন।

যদিও খরচ অনেক, তবুও দৃশ্যমানভাবে সবচেয়ে ভালো ফলাফল দিতে পারার কারণেই ট্রান্সপ্লান্ট জনপ্রিয়।

তবে ডা. পান্থ বলছেন, অনেকেই বুঝতে চান না যে ট্রান্সপ্লান্টের পর যদি চুলের যত্ন নেয়া না হয়, তবে পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে দেখবেন যে প্রাকৃতিক চুল পড়ে যাচ্ছে, আর শুধু ট্রান্সপ্লান্ট করা চুলই টিকে আছে।"

ট্রাইকোলজিস্ট এনিটান আগিডি মনে করেন, "হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট একেবারে শেষ উপায় হওয়া উচিত। আর এটা সবার চুল পড়ার সমস্যার সমাধান নয়।"

তিনি বলেন, "ট্রান্সপ্লান্ট মানে হলো আপনি বাইরে যাচ্ছেন, ঠান্ডা পড়ছে, আর আপনি শুধু একটা জ্যাকেট পরছেন। কিন্তু ভেতরে কিছু না পরায়, কিছুক্ষণ পরেই ঠান্ডা লাগতে শুরু করবে।"