
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাত নিরসনে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তিনদিনের শান্তি আলোচনার পরও এখনও কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে। ফলে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার শান্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান ও আফগান তালেবান। যা ২০২১ সালে তালেবানদের কাবুল দখলের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন।
সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তির পর গত ১৯ অক্টোবর কাতারে প্রথম দফায় আলোচনা হয়। এরপর শনিবার (২৫ অক্টোবর) ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় বসে পাকিস্তান-আফগানিস্তান।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, তুর্কি মধ্যস্থতাকারীরা অচলাবস্থা ভাঙতে এবং আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাকিস্তান টেলিভিশন জানিয়েছে, সমস্যা সমাধানের জন্য ‘শেষ চেষ্টা’ করা হচ্ছে।
অচলাবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে টিটিপি
আলোচনার প্রধান বাধা হলো কাবুলের দিক থেকে পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি) নিয়ন্ত্রণে অঙ্গীকার না করা। টিটিপি আফগানিস্তানের শাসকদের থেকে পৃথক এবং পাকিস্তানের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ একটি গোষ্ঠীটি।
ইসলামাবাদ বলেছে, টিটিপি আফগানিস্তানের ভেতরে দায়মুক্ত নিয়ে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব সেখান থেকেই দেয়া হচ্ছে। তবে তালেবান এই দাবি নাকচে করে দিয়েছে।
পাকিস্তান টেলিভিশন জানিয়েছে, আফগান প্রতিনিধিদল ‘টিটিপি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দৃঢ় ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের দাবিতে বারবার সম্মত হয়েছে’। কিন্তু কাবুলের নির্দেশের পর তাদের ‘অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে’।
আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি আফগান সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ‘উত্তেজনাপূর্ণ মতবিনিময়’ হওয়ার পরে আলোচনা শেষ হয়েছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, কাবুল জোর দিয়ে বলেছে যে, টিটিপির ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
তালেবান-নিয়ন্ত্রিত সম্প্রচারক আরটিএ এই অচলাবস্থার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বলেছে যে কাবুল ‘গঠনমূলক আলোচনা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে’। তবে "পাকিস্তানি পক্ষের সেই উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হচ্ছে না’।
উভয় পক্ষই বলেছে, সীমান্তে পাকিস্তানি সেনা এবং টিটিপি যোদ্ধাদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ সত্ত্বেও এবং অচলাবস্থা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি বহাল রয়েছে। যদিও গত রোববার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, সীমান্তে সংঘর্ষে পাঁচ পাকিস্তানি সেনা এবং ২৫ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
নিহত যোদ্ধাদের ‘ফিতনা আল-খোয়ারিজ’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। শব্দটি বিদেশি পৃষ্ঠপোষক সমর্থিত বলে সন্দেহ করা আদর্শিকভাবে অনুপ্রাণিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
‘ওপেন ওয়ার’র আশঙ্কা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনার ব্যর্থতা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, ইস্তাম্বুলে আলোচনা চলাকালীন কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার অর্থ হবে ‘ওপেন ওয়ার।’