News update
  • Sewage, trash, disease overwhelm displaced communities in Gaza     |     
  • World leaders rally for ‘full-speed’ climate action ahead of COP30     |     
  • Chel Snakehead: A Fish That Time Forgot, Rediscovered     |     
  • Investment Summit Touts Bangladesh’s FDI Promise     |     
  • World Bank Cuts South Asia Growth Forecast     |     

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা বাড়ছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2025-04-24, 3:22pm

retertwetw3-b90f79ab0cc851e1ee773373cd3933281745486553.jpg




ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে মঙ্গলবারের রক্তপাতের ঘটনাকে ২০১৯ সালের পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক জঙ্গি হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বন্দুকধারীদের ওই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা সৈন্য বা সেনা কর্মকর্তা নন। ভারতের অন্যতম মনোরম উপত্যকায় ছুটি কাটাতে আসা বেসামরিক নাগরিক ছিলেন তারা। আর শুধু এই বিষয়টাই গোটা ঘটনাকে আরও নৃশংস এবং প্রতীকী করে তুলেছে।

মঙ্গলবারের হামলা শুধু মানুষের জীবনের ওপরেই নয়, বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলে কঠোর পরিশ্রম করে ফেরানো স্বাভাবিক অবস্থার ওপরেও একটা পরিকল্পিত আক্রমণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করলেও তা তারা আংশিকভাবেই শাসন করে। কাশ্মীরের ভঙ্গুর ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা যেতে পারে যে সাম্প্রতিক আবহে ভারতের আসন্ন প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে 'বল প্রয়োগের' একটা সম্পর্ক থাকবে। অন্তত, বিশেষজ্ঞরা তাই মনে করেন।

পহেলগামের ঘটনার জবাব দিতে দিল্লি দ্রুত বেশ কয়েকটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এই তালিকায় প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া, একটা গুরুত্বপূর্ণ জল বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্তও রয়েছে।

এদিকে, আরও তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং 'কঠোর জবাব' দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধেই নয়, ভারতের মাটিতে 'ঘৃণ্য কাজের' নেপথ্যে থাকা 'মাস্টারমাইন্ডদের' বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে প্রশ্ন এটা নয় যে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে কি না। প্রশ্ন হলো সেটা কখন হবে, তার মাত্রা কী হবে এবং তার ফলে কী মূল্য দিতে হতে পারে।

সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসিকে বলেছেন, "আমরা সম্ভবত একটা দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব যা ঘরোয়া দর্শক এবং পাকিস্তানে থাকা অভিনেতা- দুই পক্ষকেই একটা বার্তা দেবে। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষত ২০১৯ সালের পর থেকে এই জাতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা হলো আন্তঃসীমান্ত হামলা বা বিমান হামলা।"

"কাজেই সরকারের পক্ষে এখন সেই মাত্রার নিচে কোনো কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অনুমান করা যায়, পাকিস্তানও আগের মতোই জবাব দেবে। এক্ষেত্রে বরাবরের মতোই যে ঝুঁকিটা থেকে যায় সেটা হলো, হিসাবে ভুল–– যা উভয় পক্ষেরই হতে পারে।"

এই প্রঙ্গে মি. রাঘবন ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটো বড় প্রতিক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করছেন।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উরি (জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় অবস্থিত) হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর কার্যত লাইন-অফ-কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' করেছিল ভারত।

সেই সময় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের লক্ষ্যবস্তু হলো পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি।

২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে অবস্থিত কথিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর সেবারই প্রথম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এই জাতীয় হামলা চালায় ভারত। এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে পাকিস্তানও বিমান হামলা চালিয়েছিল।

বিবাদ বাড়তে থাকে। এই সময় ভারতীয় একজন পাইলটকে কিছুদিনের জন্য আটক করা হয় পাকিস্তানে। তবে দুই পক্ষই নিজেদের শক্তি দেখালেও তারা পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়িয়ে গেছে।

দুই বছর পর ২০২১ সালে তারা নিয়ন্ত্রণ রেখায় 'সিজ ফায়ার' বা পরস্পরের সীমান্তে গুলি বন্ধ করতে সম্মত হয়। ভারত শাসিত কাশ্মীরে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা সত্ত্বেও কিন্তু এই শর্ত মূলত বহাল রয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সর্বশেষ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করার মতো ঘটনা এবং এতগুলো মানুষের মৃত্যু "পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়ার জোরালো সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। দিল্লি যদিও পাকিস্তানের জড়িত থাকার মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে বা নিছকই ধরে নেয় যে তারা (পাকিস্তান) জড়িত- দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু এই সম্ভাবনা থাকে।"

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, "ভারতের জন্য এই জাতীয় প্রতিক্রিয়ার প্রধান সুবিধা হবে রাজনৈতিক দিক থেকে। কারণ জোরালো জবাব দেওয়ার জন্য তাদের ওপর ভারতীয় জনসাধারণের প্রবল চাপ থাকবে।"

"আরেকটা সুবিধা হলো, যদি প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সফলভাবে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুকে নির্মূল করা সম্ভব হয়, তাহলে তা প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ভারতবিরোধী হুমকিকে হ্রাস- দুই-ই করতে পারে।"

"আর অসুবিধা হলো, এটা একটা গুরুতর সংকট সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি সংঘাতের ঝুঁকিও।"

ভারতের কাছে বিকল্প কী?

যুক্তরাষ্ট্রের 'ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানি'র ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি মনে করেন, কোনো গোপন অভিযান চালানো হলে, দায় অস্বীকার করার সুযোগ থেকে যায়। কিন্তু সেই পদক্ষেপ মানুষকে দেখানোর যে একটা রাজনৈতিক প্রয়োজন রয়েছে, সেটাকে মেটাতে পারে না।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে দুটো সম্ভাব্য পথ খোলা থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

প্রথমত, ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যে 'সিজ ফায়ার'-এর জন্য দু'পক্ষ সম্মত হয়েছিল, তা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সীমান্তে আবার গুলি চালানোর জন্য সবুজ সংকেত দিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালের মতো বিমান হামলা বা এমনকি প্রচলিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও সম্ভাব্য পথ হিসেবে ভারতের সামনে খোলা আছে।

তবে তিনি জানিয়েছেন, এই জাতীয় প্রতিটা প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ কিন্তু পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বহন করে, যেমনটা এর আগেও দেখা গেছে।

"কোনো পথই ঝুঁকিমুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে এবং সংকট ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে তারা ইচ্ছুক বা সক্ষম নাও হতে পারে," বিবিসিকে বলেছেন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির গবেষক মি. ক্ল্যারি।

ভারত-পাকিস্তান সংকটের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, দুই পক্ষই পরমাণু শক্তিধর। এই সত্যিটা দুই দেশের পক্ষ থেকে নেওয়া প্রতিটা সিদ্ধান্তের ওপর দীর্ঘ প্রভাব ফেলে। সেটা শুধু সামরিক কৌশল তৈরির সময় নয়, বরং রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

মি. রাঘবন বলেছেন, "পারমাণবিক হাতিয়ার একইসঙ্গে বিপজ্জনক এবং নিয়ন্ত্রক (কাউকে বাধা দেওয়া বা নিয়ন্ত্রণে রাখার দিক থেকে)। এটা দুই পক্ষের নীতিনির্ধারকদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করে। যে কোনো প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে হতে হবে।"

"পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিতে পারে এবং তারপর সেখান থেকে সরে এসে আবার অন্য পথ অনুসরণ করতে পারে।"

এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি ইসরায়েল এবং ইরানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তার কথায়, "ইসরায়েল-ইরানসহ একাধিক ক্ষেত্রে আমরা এই একই ধারা লক্ষ্য করেছি। প্রথমে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং পরে তা প্রশমনের চেষ্টা।"

"কিন্তু একটা ঝুঁকি সবসময়ই থাকে যে, সব কিছু চিত্রনাট্য অনুযায়ী নাও এগোতে পারে।"

মি. কুগেলম্যান বলছেন যে পুলওয়ামার ঘটনা থেকে নেওয়া একটা 'শিক্ষা' হলো "প্রতিটা দেশ সীমিত মাত্রায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে"।

তার কথায়, "ভারতের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়ার রাজনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধাগুলোকে চিন্তা করতে হবে গুরুতর সংকট বা সংঘাতের ঝুঁকির মাথায় রেখে।"

যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হক্কানি মনে করেন, ২০১৬ সালের মতো সীমিত পরিসরে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' চালানোর বিষয়ে যদি ভারত বিবেচনা করে তাহলে এবার উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আনোয়ার গারগাশ ডিপ্লোম্যাটিক একাডেমি ও হাডসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো হুসেন হক্কানি বিবিসিকে বলেন, "ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সুবিধা হলো এগুলোর পরিধি সীমিত। তাই পাকিস্তানকে এর জবাব দিতে হয় না। কিন্তু ভারতের জনসাধারণ দেখানো যায় যে তারা (ভারত) জবাব দিতে একটা পদক্ষেপ নিয়েছে।"

"তবে এই ধরনের হামলার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। এক্ষেত্রে তারা যুক্তি দিতে পারে যে কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই তাদের (পাকিস্তানকে) দোষারোপ করা হচ্ছে।"

এখন বিষয়টা হলো ভারত যে পথই বাছুক এবং পাকিস্তান তার যে জবাবই দিক না কেন, প্রত্যেকটা পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

সাম্প্রতিক আবহে উত্তেজনা বৃদ্ধির হুমকি ঘনিয়ে আসছে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের 'ভঙ্গুর শান্তি' নাগালের আরও বাইরে চলে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে ভারতকে অবশ্যই নিরাপত্তার ব্যর্থতার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে, যার কারণে এই হামলা হয়েছে।

মি. রাঘবন বলেছেন, "পর্যটন মৌসুমের যখন শীর্ষে তখন এই জাতীয় হামলা চালানো হয়েছে। এটা একটা গুরুতর ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষত এমন একটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে।"