News update
  • Eid Tourism outside Dhaka turning increasingly monotonous      |     
  • China visit a ‘major success’ for interim government: Fakhrul     |     
  • NYT paints troubling, one-sided view of Bangladesh     |     
  • Two brothers killed in Narsingdi over extortion refusal     |     
  • Death toll from Myanmar earthquake surpasses 1,700     |     

কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন

বিবিসি বাংলা সংঘাত 2025-03-26, 8:40pm

erewrew-322868718536e24bf58e8e76d9e5ef021743000018.jpg




যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৌদি আরবে তিনদিন ধরে শান্তি আলোচনার পর কৃষ্ণসাগরে দুই দেশের নৌযানে হামলা বন্ধে রাজি হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। সোমবার থেকে চলা এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় মস্কো ও কিয়েভ।

ওয়াশিংটন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই চুক্তির ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ পুনরায় চালু হবে এবং সব পক্ষ 'স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি' প্রতিষ্ঠায় কাজ চালিয়ে যাবে।

এছাড়াও একে–অপরের জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা না চালানোর বিষয়েও একমত হয়েছে দুই দেশ।

তবে রাশিয়া বলেছে, তাদের খাদ্য ও সার ব্যবসার ওপর থেকে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরেই নৌ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা রিয়াদে মস্কো ও কিয়েভের আলোচকদের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন, যার লক্ষ্য ছিল দুই পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা। তবে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল সরাসরি কোনো বৈঠক করেনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কৃষ্ণসাগরে হামলা বন্ধের এই চুক্তিকে সঠিক একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, "এরপর আর কেউ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে স্থায়ী শান্তি আলোচনার পথে বাধা বলে অভিযোগ করতে পারবে না।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, "এটা যদি রাশিয়া লঙ্ঘন করে, তাহলে আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সরাসরি প্রশ্ন করব। তারা লঙ্ঘন করলে আমরা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাইব, অস্ত্র চাইব।"

তবে ওয়াশিংটনের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়ার ব্যাংক, উৎপাদক এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য ও সার বাণিজ্যে জড়িত রফতানিকারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কৃষ্ণসাগরের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না।

রাশিয়ার দাবি, ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুইফট পেমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে পুনরায় সংযুক্ত করা, খাদ্য বাণিজ্যে যুক্ত রুশ পতাকাবাহী জাহাজগুলোর পরিষেবা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহে আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা।

তবে হোয়াইট হাউস যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট নয় যে, এই চুক্তি কবে ও কখন থেকে কার্যকর হবে।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সম্পর্কে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা এখন সবকিছুই বিবেচনা করছি। আমরা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছি।"

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনার বিষয়ে ওয়াশিংটনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র "কৃষি ও সার রপ্তানির জন্য বিশ্ব বাজারে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে"।

কিয়েভে বক্তব্য দেওয়ার সময় জেলেনস্কি এটিকে 'অবস্থানগত দুর্বলতা' হিসেবে' আখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, যদি মস্কো তার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে, তাহলে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তাও চাইবে।

পরে, ইউক্রেনের জনগণের উদ্দেশে রাতে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে বলেন, কৃষ্ণসাগরের যুদ্ধবিরতি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তের ওপর নির্ভরশীল নয়।

আর কৃষ্ণসাগর নিয়ে সমঝোতার বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেছেন, "কৃষ্ণসাগরের পূর্বাংশের বাইরে দিয়ে রুশ সামরিক নৌযানের যেকোনো ধরনের চলাচলকে সমঝোতার লঙ্ঘন হিসেবে ধরে নেবে কিয়েভ। একই সঙ্গে একে হুমকি বলে মনে করা হবে। তখন ইউক্রেনের নিজেদের রক্ষা করার পুরোপুরি অধিকার সৃষ্টি হবে"।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরুর পর কৃষ্ণসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপদ চলাচলের জন্য একটি চুক্তি হয়েছিল।

ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ই প্রধান শস্য রফতানিকারক দেশ। যুদ্ধ যখন শুরু হয়, তারপর থেকেই বিশ্ব বাজারে খাদ্য শস্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

পরে "কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি" চালু করা হয়েছিল যাতে ইউক্রেনের বন্দর থেকে আসা-যাওয়া কার্গো জাহাজগুলো রুশ হামলার শিকার না হয়ে নিরাপদে চলাচল করতে পারে।

এই চুক্তির মাধ্যমে কৃষ্ণসাগর হয়ে শস্য, সূর্যমুখী তেল এবং সারসহ খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য পরিবহন কিছুটা সহজতর হয়ে উঠেছিল।

প্রাথমিকভাবে, এই চুক্তির মেয়াদ ১২০ দিনের জন্য নির্ধারিত হয়েছিল, তবে এর মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানোর পর রাশিয়া ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চুক্তি থেকে সরে যায়। তারা দাবি করে যে, চুক্তির মূল অংশগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।

এই সপ্তাহের আলোচনার পর, উভয় দেশ একে অপরের ভূখণ্ডে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলার নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। যার ফলে পুরো যুদ্ধকালজুড়ে দেশজুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। শীতের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হাজারো মানুষ গরমের ব্যবস্থা ছাড়াই দিন কাটাতে বাধ্য হয়।

ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে হামলার পর জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা সতর্কতা জারি করে এবং উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে এক ফোনালাপে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল।

তবে ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মস্কো ও কিয়েভ পরস্পরের বিরুদ্ধে এই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে।

মঙ্গলবারের আগের দিকে, মস্কো দাবি করে যে রিয়াদে শান্তি আলোচনা চলার সময়ও ইউক্রেন রাশিয়ার বেসামরিক জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এই কথিত হামলা প্রমাণ করে যে জেলেনস্কি চুক্তি মেনে চলতে অক্ষম।

এর আগে সোমবার, রাশিয়া উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সুমি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়।

মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেন জানায়, রাশিয়া রাতভর প্রায় ১৩৯টি ড্রোন ও একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

এছাড়া, কিয়েভ দাবি করেছে যে, কুরস্কে রাশিয়ার সামরিক স্থাপনায় একটি বিমান হামলায় প্রায় ৩০ জন রুশ সেনা নিহত হয়েছে।