
প্রস্টেট ক্যানসার হচ্ছে অনেকটা নিঃশব্দ ঘাতক রোগ। এর প্রথম দিকে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, তাই আক্রান্ত হলেও তা অনেকের অজানাই থেকে যায়। ব্রিটেনে প্রতি বছর প্রায় ১২,০০০ মানুষ এই রোগে প্রাণ হারান। রোগ যদি দেরিতে ধরা পড়ে, তখন চিকিৎসা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু সময়মতো পরীক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে জীবন বাঁচানো সম্ভব।
প্রস্টেট ক্যানসারের বড় সমস্যা হলো, প্রাথমিক অবস্থায় রোগ বোঝা যায় না। তাই শুধুমাত্র অপেক্ষা করলে ক্যানসার ছড়িয়ে যায়। PSA টেস্টের সঙ্গে MRI পরীক্ষা করলে আগ্রাসী ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা যায়। এতে অযথা বায়োপ্সি কম হয় এবং চিকিৎসা অনেক সহজ হয়।
সম্প্রতি ন্যাশনাল স্ক্রিনিং কমিটি বিস্তৃত স্ক্রিনিং প্রস্তাব বাতিল করায় অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। এই সিদ্ধান্তকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন ঋষি সুনাক, পাইরস মরগ্যান, সার ক্রিস হোয় এবং বিভিন্ন ক্যানসার চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, “স্ক্রিনিং ছাড়া এই রোগ ধরা প্রায় অসম্ভব। ধরা না পড়লে জীবনও বাঁচানো যায় না।” পাইরস মরগ্যান মনে করছেন, ব্রিটেন এক বড় সুযোগ হাতছাড়া করছে। স্যার ক্রিস হোয় যোগ করেছেন, যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত অনেকটাই অবিচার।
২০২৫ সালে শুরু হওয়া ৪২ মিলিয়ন পাউন্ডের TRANSFORM ট্রায়াল দেখাবে কিভাবে আধুনিক স্ক্রিনিং জীবন বাঁচাতে পারে।
প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
প্রস্টেট ক্যানসার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনেক সাহায্য করে। চলুন এর কিছু উপায় জেনে নিই-
১. ঝুঁকি আগে থেকেই জানুন
যাদের পরিবারের কেউ প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত, তাদের PSA পরীক্ষা শুরু করা উচিত। বাবার বা ভাইয়ের ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। উচ্চ ঝুঁকির পুরুষরা আগ্রাসী ক্যানসারের জন্য চারগুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
২. ওজন, খাদ্য ও ব্যায়াম নিয়ন্ত্রণ করুন
অতিরিক্ত চর্বি, প্রক্রিয়াজাত বা ভাজা খাবার এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শাক-সবজি, টমেটো, বাদাম এবং মাছ খাওয়া বেশ উপকারী হতে পারে। এসময় নিয়মিত ব্যায়াম হরমোন ভারসাম্য রাখে এবং প্রদাহ কমায়।
৩. পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি রাখুন
ভিটামিন ডি কম থাকলে এ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি প্রদাহজনিত প্রক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
৪. PSA পরীক্ষা এবং MRI করান
৪৫–৫০ বছর বয়সী উচ্চ ঝুঁকির পুরুষদের PSA টেস্ট এবং MRI করানো উচিত। এটি আগ্রাসী ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে, অযথা বায়োপ্সি কমায় এবং চিকিৎসা সহজ হয়।
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল সীমিত করুন
ধূমপান প্রস্টেট ক্যানসারের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। বেশি মদ্যপানও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
৬. জেনেটিক টেস্টিং বিবেচনা করুন
BRCA1 বা BRCA2 মিউটেশন থাকলে ঝুঁকি অনেক বেশি। জেনেটিক টেস্টিং এর মাধ্যমে মিউটেশন জানা গেলে সময়মতো স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা করা যায়।
প্রস্টেট ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ধরা যায় না। তাই নিজস্ব ঝুঁকি জানা, উচ্চ ঝুঁকির পুরুষদের PSA ও MRI পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান কমানো এবং প্রয়োজনে জেনেটিক টেস্ট—এই সব মিলিয়ে হাজারো জীবন বাঁচানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সচেতনতা ছড়ানো এবং স্ক্রিনিং বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। প্রস্টেট ক্যান্সারে নীরবে রোগ ছড়ায়, কিন্তু সচেতন হলে এই রোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।