News update
  • Hong Kong’s deadliest fire in a century: How it spread     |     
  • Khaleda ‘moved to Evercare CCU     |     
  • Sea ports asked to keep hoisted distant cautionary signal No 1     |     
  • Hasina gets 21 years in jail over Rajuk plot allocation scam     |     

নিজের মতো অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছেন? বিপদ কিন্তু সামনেই

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক রোগবালাই 2025-11-28, 10:24am

b894091da06cacc10ed789078443a5a78e2f70ff3ca2b415-7a3b44ff099c606fbe24cc39d22b53811764303894.jpg




অ্যান্টিবায়োটিক শুনলেই আমাদের মনে হয়—এটা খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। জ্বর-কাশি-সর্দি, সামান্য ব্যথা—যাই হোক, দ্রুত ভালো হওয়ার আশায় অনেকে নিজের মতো করে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন। কিন্তু জানেন কি, এই অভ্যাসই হতে পারে বড় বিপদের কারণ?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে— এই সমস্যা ভয়ংকর গতিতে বাড়ছে, আর দক্ষিণ এশিয়া এখন অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। আগে যে সংক্রমণ কিছু ওষুধেই সেরে যেত, এখন সেই অসুখেই জটিল হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার অবস্থা তৈরি হচ্ছে।

অ্যান্টিবায়োটিক হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার কারণ 

অ্যান্টিবায়োটিক আসলে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কিন্তু আমরা যখন এগুলো বারবার বা ভুলভাবে খাই, তখন ব্যাকটেরিয়া নতুন কৌশল শিখে নেয় এবং ওষুধ আর তাদের মারতে পারে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে—২০২৩ সালে প্রতি ছয়টি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের মধ্যে একটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে মূত্রনালীর সংক্রমণ, শ্বাসনালীর সংক্রমণ বা ক্ষতের সংক্রমণ—সবকিছুর চিকিৎসাই কঠিন হয়ে উঠছে। চিকিৎসাও জটিল হয়ে উঠছে, সময় ও খরচও তত বাড়ছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত এবং অন্যান্য অঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ আকার ধারণের কারণ 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) রিপোর্টে দেখা গেছে—দক্ষিণ এশিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সবচেয়ে বেশি, আর ভারত এখানে তালিকার শীর্ষে। ভারতে প্রায় ৭০% রক্তের সংক্রমণ, আর ৭৮% ই.কোলাই সংক্রমণ সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া দিচ্ছে না।

এই পরিস্থিতির বড় কারণ হলো যে-কেউ সহজে অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারে। অনেকেই সর্দি–কাশি–জ্বরের মতো ভাইরাসজনিত অসুখেও অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন। এতে শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়াও নষ্ট হয়ে যায়, প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে, আর প্রতিরোধী জীবাণু বাড়তে থাকে।

আরেকটি বড় ভুল হলো—অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া। দুই দিনেই শরীর ভালো লাগলে অনেকেই বাকি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এতে জীবাণুর কিছু অংশ বেঁচে যায় এবং আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এসব জীবাণু পরবর্তীতে অন্য মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। 

দীর্ঘমেয়াদে যেসব ভয়ঙ্কর ঝুঁকি তৈরি হয়- 

যখন অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করা কমিয়ে দেয়, তখন সাধারণ অসুখও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমনঃ সাধারণ মূত্রনালীর সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে পারে, সামান্য ক্ষত পচন ধরে জটিল রূপ নিতে পারে, শ্বাসনালীর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকা মানুষদের জন্য সংক্রমণ প্রাণঘাতীও হতে পারে।

চিকিৎসকেরা বলছেন—এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ছোট অপারেশন, দাঁতের চিকিৎসা, এমনকি প্রসবও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ প্রয়োজনে সংক্রমণ ঠেকাতে যে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার, তা হয়তো তখন আর কাজই করবে না।

এই বিপদ থেকে বাঁচার উপায়

অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহার বন্ধ করলেই সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন দেখা যাবে। এজন্য যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি -

সব জ্বর-কাশিতে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া একদম উচিত নয়।

অসুখ না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডাক্তার যতদিন যে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে বলেন, পুরো কোর্স ঠিকভাবে শেষ করুন।

অন্যের প্রেসক্রিপশনের ওষুধ কখনো খাবেন না।

আগের বাকি থাকা অ্যান্টিবায়োটিক আবার খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

কিছু সহজ অভ্যাস যেমন - নিয়মিত হাত ধোয়া, খাবার–বাসন পরিষ্কার রাখা, নিরাপদ খাবার প্রস্তুত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, এসবের মাধ্যমে এই বিপদ মোকাবেলা সম্ভব। অনেক সংক্রমণই টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা যায়, তাই সময়মতো টিকা নেওয়াটা জরুরি।

অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের জীবন বাঁচায়—কিন্তু ভুল হাতে পড়লে সেটাই বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অযথা অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া, পুরো কোর্স শেষ করা এবং সচেতন থাকা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের, পরিবার ও সমাজ—সবাইকে নিরাপদ রাখতে এটাই সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।