News update
  • Unified Action Must to Revive Bangladesh’s Ailing Rivers: Rizwana     |     
  • France welcomes Foundation for Strategic & Development Study     |     
  • Countrywide combined night police patrols begin: Adviser     |     
  • Miscreants Launch Attack on Air Force Base in Cox's Bazar: ISPR     |     
  • Munshiganj General Hospital catches fire; no injury reported     |     

আফ্রিকার আসক্তিকর ওপিওয়েড সংকটে ইন্ধন দিচ্ছে যে ভারতীয় ফার্মা

বিবিসি মিডিয়া 2025-02-24, 1:43pm

rtwerwe-d73ddc47455a1532e21f93709d289e9e1740383005.jpg




ভারতের একটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি লাইসেন্সবিহীন ও উচ্চ আসক্তির ওপিওয়েড তৈরি করে সেগুলো পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে অবৈধভবে রপ্তানি করছে। এর ফলে ঘানা, নাইজেরিয়া ও আইভোরি কোস্টসহ কয়েকটি দেশে একটা বড় জনস্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিবিসি আইয়ের তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য, ওপিওয়েড হলো প্রাকৃতিক, অর্ধেক কৃত্রিম ও সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি এক জাতীয় ওষুধ, ব্যাথার চিকিৎসায় যেমন চিকিৎসরা এটি ব্যবহার করেন, আবার হেরোইনের মতো মাদক হিসেবেও এর ব্যবহার হয়।

মুম্বাইভিত্তিক অ্যাভিও ফার্মাসিউটিক্যালস বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করে এবং এসব ওষুধ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে ও প্যাকেটে এমনভাবে বাজারে ছাড়া হয় যেগুলোকে দেখলে বৈধ ওষুধ বলেই মনে হয়। কিন্তু এসব ওষুধ––টাপেন্ডাটলের মতো শক্তিশালী ওপিওয়েড এবং পেশী শিথিলকারী ওষুধ ক্যারিসোপ্রোডলের সংমিশ্রণে তৈরি। উচ্চ মাত্রার আসক্তি সৃষ্টির কারণে যেগুলো কিনা ইউরোপে নিষিদ্ধ।

এসব উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি করা ওষুধ শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং খিঁচুনি তৈরির জন্য দায়ী হতে পারে। এগুলো অতিমাত্রায় সেবনের কারণে মৃত্যুও ঘটতে পারে। যে কারণে এগুলো ব্যবহারের অনুমোদন বা লাইসেন্স বিশ্বের কোনো জায়গাতেই নেই।

তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকার পরও পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশে এসব ওপিওয়েড 'স্ট্রিট ড্রাগ' (ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে নেশার জন্য এর অপব্যবহার করা হয়) হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এর কারণ হচ্ছে এগুলো দামে সস্তা ও খুব সহজলভ্য।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ঘানা, নাইজেরিয়া ও আইভরি কোস্টের শহর এবং শহরতলির রাস্তায় বিক্রি হওয়া ওষুধের প্যাকেট খুঁজে পেয়েছে যেখানে অ্যাভিও কোম্পানির লোগো রয়েছে।

এই ওষুধের সঙ্গে অ্যাভিওর যোগ সম্পর্কে জানার পর বিবিসি ওই কোম্পানির কারখানায় একজন 'আন্ডারকভার অপারেটিভ' বা পরিচয় গোপন করে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল।

তিনি নিজেকে আফ্রিকান একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন এবং বলেন যে নাইজেরিয়ায় ওপিওয়েড সরবরাহের জন্য খোঁজ চালাচ্ছেন।

গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে বিবিসি যে ভিডিও রেকর্ড করেছে, সেখানে অ্যাভিওর অন্যতম পরিচালক বিনোদ শর্মাকে সেই বিপজ্জনক ওষুধই প্রকাশ্যে তুলে ধরতে দেখা গেছে যেগুলো পশ্চিম আফ্রিকাজুড়ে রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি হয় বলে বিবিসি দেখতে পেয়েছে।

গোপনে রেকর্ড করা ওই ফুটেজে ছদ্মবেশে থাকা অপারেটিভ মি. শর্মাকে বলেন, তিনি নাইজেরিয়ার কিশোর-কিশোরীদের এই বড়ি বিক্রির পরিকল্পনা করছেন যারা "এই পণ্যটি খুবই পছন্দ করে।"

এটা শুনে, মি. শর্মা কিন্তু একটুও চমকে যাননি। জবাবে তিনি বলেন "ঠিক আছে"।

পরে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে ব্যবহারকারীরা যদি একবারে দুটি বা তিনটি বড়ি সেবন করেন তবে তারা "রিল্যাক্সড" বোধ করবেন। পাশাপাশি এটাও বলেন যে তারা নেশাগ্রস্ত অনুভব করতে পারে।

এই বৈঠকের একেবারে শেষের দিকে বিনোদ শর্মা বলেন, "এটা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু আজকালকার দিনে এটাই ব্যবসা।"

এটা এমন একটা ব্যবসা যা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে এবং পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে লক্ষ লক্ষ সম্ভাবনাময় তরুণের ভবিষ্যতকেও ধ্বংস করছে।

উত্তর ঘানার তামালে শহরে এত বেশি সংখ্যক তরুণ ওপিওয়েড জাতীয় অবৈধ এসব ওষুধ সেবন করছে যে শহরের প্রধান কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম আলহাসান মাহাম প্রায় ১০০ জন স্থানীয় নাগরিককে নিয়ে তৈরি একটা স্বেচ্ছাসেবী টাস্কফোর্স গঠন করেছেন।

তাদের লক্ষ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো এবং রাস্তার আনাচ কানাচ থেকে এই জাতীয় বড়িগুলো নির্মূল করে ফেলা।

আলহাসান মাহাম বলেছেন, "সেবনকারীদের চিন্তাশক্তিকে গ্রাস করে এই মাদক, ঠিক যেমন কেরোসিন ঢালার পর আগুন আরও বেশি করে জ্বলে ওঠে।"

বিষয়টাকে আরও সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তামালের এক ব্যক্তি যিনি নিজে আসক্ত। তার কথায়, "এই মাদক আমাদের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে।"

মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত একটা খবর পেয়ে ওই টাস্কফোর্সের সদস্যরা মোটরবাইকে চেপে তামালের দরিদ্রতম অঞ্চলে অভিযান চালালে বিবিসির টিম তাদের অনুসরণ করে।

সেই সময় রাস্তায় এক যুবকের দেখা মেলে যিনি নিস্তেজ হয়ে বসেছিলেন। স্থানীয়দের মতে, তিনি ওই একই ধরনের মাদক সেবন করেছিলেন।

ওই অভিযানে ড্রাগ ডিলার ধরা পড়লে, তার কাছে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ পাওয়া যায় যা টাফ্রোডল লেখা সবুজ বড়িতে ভর্তি। ওই প্যাকেটগুলোতে অ্যাভিও ফার্মাসিউটিক্যালসের নিজস্ব লোগো ছিল।

অ্যাভিওর ওই বড়ি যে শুধুমাত্র তামালেই দুর্ভোগ ডেকে এনেছে এমনটা নয়। অ্যাভিওর তৈরি একই জাতীয় প্রোডাক্ট ঘানার অন্যত্র পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে বলেও বিবিসি জানতে পেরেছে।

বিবিসি আরও প্রমাণ পেয়েছে যে অ্যাভিওর বড়ি নাইজেরিয়া ও আইভরি কোস্টের রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে এবং সেখানকার কিশোর-কিশোরীরা নেশা করতে অ্যালকোহলযুক্ত এনার্জি ড্রিংকে ওই বড়ি মিশিয়ে ব্যবহার করে।

জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রফতানি সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায়, অ্যাভিও ফার্মাসিউটিক্যালস এবং তাদের সহযোগী সংস্থা ওয়েস্টফিন ইন্টারন্যাশনাল মিলে এই জাতীয় লাখ লাখ ট্যাবলেট ঘানা এবং অন্যান্য পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে পাঠাচ্ছে।

২২ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার দেশ নাইজেরিয়া এই জাতীয় বড়ির বৃহত্তম বাজার হয়ে উঠেছে। নাইজেরিয়ার জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, আনুমানিক ৪০ লাখ নাইজেরিয়ান কোনো না কোনো ধরনের ওপিওয়েডের অপব্যবহার করে।

নাইজেরিয়ার ড্রাগ অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির (এনডিএলইএ) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ বুবা মারওয়া বিবিসিকে বলেন, "ওপিওয়েড আমাদের যুবসমাজ, আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করছে। নাইজেরিয়ার প্রত্যেকটা কমিউনিটিতে এমনটা দেখা যাচ্ছে।"

স্ট্রিট ড্রাগ হিসেবে ওপিওয়েড জাতীয় ওষুধের বিক্রি সম্পর্কে ২০১৮ সালে বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের তদন্তের পরে নাইজেরিয়ান কর্তৃপক্ষ ট্রামাডল নামে এক ধরনের ব্যাথা উপশমকারী ওপিওয়েড নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ট্রামাডল বিক্রি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, এর সর্বাধিক ডোজের উপর কঠোর সীমা আরোপ করা হয় এবং অবৈধভাবে এই জাতীয় ওষুধের বড়ি আমদানির ওপর কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

একইসঙ্গে ভারতীয় কর্তৃপক্ষও ট্রামাডল রপ্তানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে।

ঘানার রাস্তায় বিক্রি হওয়া টাফ্রোডল 

এর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, অ্যাভিও ফার্মাসিউটিক্যালস টাপেন্টাডল নামক আরও শক্তিশালী ওপিওয়েডের সঙ্গে মাসল-রিল্যাক্সান্ট (পেশী শিথিলকারী ওষুধ) ক্যারিসোপ্রোডল মিশিয়ে এক ধরনের নতুন বড়ি রপ্তানি করা শুরু করে দেয়।

পশ্চিম আফ্রিকার কর্মকর্তারা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ধরপাকড় এড়াতে ওপিওয়েড রফতানিকারকরা ট্রামাডলের বিকল্প হিসেবে এই নতুন সংমিশ্রণের বড়ি ব্যবহার করছে।

অ্যাভিও কারখানা এই সংমিশ্রণের ওষুধের কার্টনে ঠাঁসা, স্তূপ করে রাখা এসব কার্টনের উচ্চতা প্রায় সিলিং ছুঁয়েছে।

বিনোদ শর্মা তার ডেস্কে ট্যাপেন্টাডল-ক্যারিসোপ্রোডলের সংমিশ্রণে তৈরি বড়ি প্যাকেটের পর প্যাকেট বিছিয়ে রেখেছিলেন, যা ওই কোম্পানি টাফ্রোডল, টিমাকিং এবং সুপার রয়্যাল-২২৫ সহ বিভিন্ন নামে বাজারজাত করে থাকে।

বিবিসির ছদ্মবেশী অপারেটিভকে বিনোদ শর্মা বলেছেন, তার কারখানায় কর্মরত 'বিজ্ঞানীরা' বিভিন্ন ওষুধ একত্রিত করে 'নতুন প্রোডাক্ট তৈরি' করতে পারেন।

অ্যাভিওর তৈরি ট্রামাডল প্রতিস্থাপনকারী নতুন পণ্যটি আগেরটির চেয়েও বেশি বিপজ্জনক।

ভারতের বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেসের সহকারী অধ্যাপক ডা. লেখাংশ শুক্লার মতে, ট্যাপেন্টাডল সেবনে গভীর ঘুমসহ "ওপিওয়েডের মতোই প্রভাব দেখা যায়"।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, "এটা এত গভীর হতে পারে যে মানুষ শ্বাস নিতে পারে না এবং ব্যাপারটা ড্রাগ ওভারডোজের দিকে চলে যায়।"

"এর পাশাপাশি ক্যারিসোপ্রোডল নামের আরও এক জাতীয় এজেন্ট দেওয়া হচ্ছে যার ফলে খুব গভীর ঘুম হয়, শিথিলের মতো লাগে। এটা খুব বিপজ্জনক সংমিশ্রণ বলেই মনে হচ্ছে।"

ক্যারিসোপ্রোডল ইউরোপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর কারণ হলো আসক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের অনুমোদন থাকলেও তা সল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করা যায় এবং এর সর্বাধিক সময়সীমা তিন সপ্তাহ।

ব্যবহার করা ছেড়ে দিলে উইথড্রল সিমটম বা প্রত্যাহারের যে লক্ষণ দেখা যায় সেই তালিকায় রয়েছে-উদ্বেগ, অনিদ্রা ও হ্যালুসিনেশন।

ডা. শুক্লা জানিয়েছেন এটা ট্যাপেন্টাডলের সঙ্গে মেশালে, বড়ির ব্যবহার ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরে যে প্রভাব তৈরি হয় তা সাধারণ ওপিওয়েডের তুলনায় "আরও মারাত্মক" হয়। তার কথায়, "এটা একটা বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা।"

তিনি জানিয়েছেন, যে এই সংমিশ্রণের কার্যকারিতা সম্পর্কে কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিষয়ে তার জানা নেই।

সীমিত মাত্রায় ব্যবহারের জন্য বৈধতা প্রাপ্ত ট্রামাডলের মতো টাপেন্টাডল-ক্যারিসোপ্রোডল ককটেল একেবারেই "যুক্তিসঙ্গত সংমিশ্রণ নয়" বলে তিনি জানিয়েছেন।

ডা. শুক্লার, "এটা এমন জিনিস নয় যা ব্যবহারের জন্য আমাদের দেশে লাইসেন্স রয়েছে।"

ভারতে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলো ততক্ষণ বৈধ ও লাইসেন্সবিহীন ওষুধ তৈরি এবং রফতানি করতে পারে না যতক্ষণ না সেগুলো আমদানিকারক দেশের মান পূরণ করে।

ঘানার জাতীয় ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির মতে, অ্যাভিও টাফ্রোডল এবং ওই জাতীয় প্রোডাক্ট ঘানায় রফতানি করে অথচ সেখানে টেপেন্টাডল এবং ক্যারিসোপ্রোডলের এই সংমিশ্রণ লাইসেন্সবিহীন এবং অবৈধ বলে বিবেচনা করা হয়। আবার ঘানায় টাফ্রোডল পাঠিয়ে অ্যাভিও ভারতীয় আইন ভঙ্গ করছে।

এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিনোদ শর্মা এবং অ্যাভিও ফার্মাসিউটিক্যালসকে জানায় বিবিসি। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি।

ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন বা সিডিএসসিও বিবিসিকে জানিয়েছে, ভারত সরকার বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের প্রতি নিজের দায়িত্ব স্বীকার করে এবং দায়িত্বশীল ও শক্তিশালী ফার্মাসিউটিক্যাল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত।

একইসঙ্গে জানানো হয়েছে যে ভারত থেকে অন্যান্য দেশে রফতানি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং সাম্প্রতিক সময়ে আরও কঠোর হওয়া নিয়মকানুন প্রবলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

পাশাপাশি, আমদানিকারক দেশগুলোকেও একই রকম শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ভারতের এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সিডিএসসিও জানিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশসহ অন্যান্য দেশের কাছে এই বিষয়টা উত্থাপন করার পাশাপাশি অন্যায়মূলক কাজকর্ম রোধ করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে, কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে, অ্যাভিও কিন্তু একমাত্র ভারতীয় সংস্থা নয় যারা লাইসেন্সবিহীন ওপিওয়েড তৈরি এবং রফতানি করে।

জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রফতানি সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায়, অন্যান্য একাধিক ফার্মা একই ধরণের পণ্য তৈরি করে এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এই ওষুধগুলো পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়।

এসব উৎপাদনকারী ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের খ্যাতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ভারতে তৈরি উচ্চমানের জেনেরিক ওষুধের ওপর বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ নির্ভর করেন এবং এ দেশে তৈরি ভ্যাকসিন লাখো জীবনও বাঁচিয়েছে। এই শিল্পের রফতানির পরিমাণ বছরে কমপক্ষে দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলার।

মি. শর্মার সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বিবিসির আন্ডারকভার অপারেটিভ জানিয়েছেন, "নাইজেরিয়ার সাংবাদিকরা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ওপিওয়েড সংকট নিয়ে প্রতিবেদন করছেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমি আফ্রিকার ওপিওয়েড সংকটের মূলে থাকা একজনের মুখোমুখি হয়েছি…।"

"তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি প্রকৃতপক্ষে এই প্রোডাক্ট তৈরি করেন এবং কন্টেনার লোড করে আমাদের দেশে পাঠান। তিনি জানতেন যে এটা ক্ষতি করছে, তবে তার কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না…এটাকে তিনি নিছক ব্যবসা হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।"

অন্যদিকে, ঘানার তামালে, বিবিসির টিম স্থানীয় টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত অভিযানকে অনুসরণ করেছিল যেখানে আরও বেশি পরিমাণে অ্যাভিওর উৎপাদিত টাফ্রোডল পাওয়া গেছে। সেদিন সন্ধ্যায় তারা স্থানীয় একটা পার্কে জড়ো হয়ে বাজেয়াপ্ত করা মাদকদ্রব্য পুড়িয়ে ফেলে।

টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম প্রধান জিকে ওই ওষুধের প্যাকেট একত্র করে, পেট্রল ঢেলে আগুন ধরানোর সময় বলেন, "আমরা সবার সামনে এগুলো জ্বালিয়ে ফেলছি যাতে সবাই দেখতে পায়। এটা বিক্রেতা ও সরবরাহকারীদের কাছে একটা সংকেত দেবে যে যদি ওরা তোমাকে ধরতে পারে তাহলে তোমার কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত ওষুধ পুড়িয়ে ফেলবে।"

আগুনের লেলিহান শিখায় যখন কয়েক শত টাফ্রোডল ভর্তি প্যাকেট নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো, সেই মুহূর্তে হাজার হাজার মাইল দূরে ভারতে এই চক্রের একেবারে শীর্ষে থাকা "বিক্রেতা ও সরবরাহকারীরা" কিন্তু লাখ লাখ টাকা আয় করে চলেছে। 'সংকটের' ওপর ভিত্তি করে কামানো মুনাফায় তারা ধনী হয়ে উঠছে তারা।